বলিউডে দাঁড় বাইছে মন মাঝি রে

সম্প্রতি শুধুমাত্র জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ন’টা বাংলা গান ব্যবহার করেছে বলিউড। কেন? লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তসম্প্রতি শুধুমাত্র জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ন’টা বাংলা গান ব্যবহার করেছে বলিউড। কেন? লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০০:০০
Share:

‘সিংঘম রিটার্নস’: অজয়-করিনা

ছিল রুমাল। হয়ে গেল বেড়াল!

Advertisement

ছিল জিৎ-শুভশ্রী অভিনীত ‘বস’-এর রোম্যান্টিক গান। এখন তা হয়ে যাচ্ছে অজয় দেবগণ-করিনা কপূর অভিনীত ‘সিংঘম রিটার্নস’য়ের সাউন্ড ট্র্যাকের অন্যতম আকর্ষণ। ‘বস’-এর হিট নাম্বার বললে আর নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধে হবে না কোন গানের কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কম্পোজিশনে অরিজিৎ সিংহর ‘মন মাঝি রে’ গানটায় মজেছে এখন বলিউড। হিন্দি গানটার নাম ‘শুনলে জারা’।

‘সিংঘম রিটার্নস’ ছবির অন্যতম সুরকার জিৎ। এর আগেও জিতের অনেক গানই হিন্দি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে। সেই তালিকায় এ বার যোগ হচ্ছে ‘মন মাঝিরে’। জিৎ বলছেন, “একটা সময় ছিল যখন প্রায় প্রত্যেকটা বাংলা ছবির হিট গানের সুর দিয়েই তৈরি হত বলিউডের হিট। সে ছিল এসডি বর্মন, পঞ্চমদা, সলিল চৌধুরী আর হেমন্তকুমারের যুগ। এই নিয়ে আমার সুর করা ন’টা বাংলা গান বলিউডে ব্যবহার করা হল। ভেবে ভাল লাগছে যে আমি ওই ট্রেন্ডটা আবার ফিরিয়ে আনতে পারছি।”

Advertisement


‘মন মাঝি রে’

‘দীপ জেলে যাই’-এর ‘এই রাত তোমার আমার’ থেকে এক সময় তৈরি হয়েছিল ‘কোহরা’র ‘ইয়ে নয়ন ডরে ডরে’। ‘যা রে যা রে উড়ে যা রে পাখি’ থেকে বলিউড শুনেছিল ‘যা রে উড় যা পঞ্ছি’। এ রকম আরও কত বাংলা গান বলিউডে ব্যবহার হয়েছে এক সময়! ‘মন মাঝিরে’ গানটা টিপস মিউজিকের কর্ণধার ভূষণ কুমারের খুব পছন্দ হয়েছিল। “গানের মেলোডিটা এত সুন্দর যে, আমি শুনেই বলেছিলাম ওটা হিন্দি ছবিতে ব্যবহার করে সারা বিশ্বের শ্রোতাদের শোনাব। এর আগে জিতের কম্পোজ করা ‘কী করে তোকে...’ গানটা আমি আমার ‘ইয়াংগিস্তান’ ছবিতে ব্যবহার করে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলাম,” জানান ভূষণ কুমার।

তার পর ‘সিংঘম রিটার্নস’য়ের মিউজিক সিটিংয়ে গানটা গিটারে বাজিয়ে তিনি নিজের গলায় গেয়ে পরিচালক রোহিত শেট্টিকে শুনিয়েছিলেন। গানটা রোহিতের এত পছন্দ হয়েছিল যে, উনি সঙ্গে সঙ্গে ছবিতে সেটা ব্যবহার করতে চান। অজয় দেবগণকেও গানটা শোনানো হলে উনিও গানটা খুব পছন্দ করেন। “গানের স্বত্ব নিয়েও কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ হিন্দি আর বাংলা দু’টো ছবিরই প্রযোজক রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্ট,” বলেন জিৎ।

বাংলা ছবিতে গানটা অরিজিৎ সিংহের গাওয়া। বলিউডে আজকাল একচেটিয়া ভাবে গান গাইছেন অরিজিৎ। স্বাভাবিক ভাবেই তাই হিন্দি গানটা অরিজিৎকে দিয়েই গাওয়ানো হয়। তবে ‘বস’য়ে গানটা ছিল সম্পূর্ণ রোম্যান্টিক। জিতের লিপে ছিল গানটা। কিন্তু ‘সিংঘম রিটার্নস’য়ে এই গানটা ব্যবহার করা হবে অজয়-করিনার একটা দৃশ্যে। বাংলা গানের অ্যারেঞ্জমেন্ট পাল্টে সুফি রক স্টাইলে নতুন করে গানটাকে সাজিয়েছেন জিৎ। “মুম্বইয়ে মুকদ্দম শাহ্ বাবর দরগাতে একটা দৃশ্যে এই গানটা রয়েছে। ওই দরগাতে মুম্বইয়ের সব পুলিশ অফিসাররা যান। একটা দৃশ্যে অজয়কেও ওখানে দেখা যায়। করিনাও রয়েছেন সেই দৃশ্যে,” মুম্বই থেকে জানান জিৎ।

প্রথমে ইচ্ছে ছিল গানটা অজয়ের লিপে ব্যবহার করার। কিন্তু যেহেতু দৃশ্যটা একটা দরগাতে শু্যট হয়েছে, সেখানে অজয়ের মুখে এমন গান থাকলে একটু বেমানান লাগতেও পারে। তাই শেষ পর্যন্ত গানটা ব্যাকগ্রাউন্ডেই ব্যবহার করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে ন’টা বাংলা গান ব্যবহার হয়েছে বলিউডে। এটা কি শুধুমাত্র নিজের ভাল পিআর আর মুম্বইনিবাসী হওয়ার জন্যই সম্ভব হয়েছে? “না,” বলছেন জিৎ। আরও জানাচ্ছেন, “প্রথম যখন ‘ব্লাড মানি’-র জন্য আমার ‘খুঁজেছি তোকে’ গানটা ব্যবহার করা হয়েছিল, তখন ভট্ট সাব জানতেনও না আমি মুম্বইতে থাকি। বলিউড অত্যন্ত পেশাদার জায়গা। সেখানে ভাল ‘পিআর’ করলেই গান পাওয়া যায় না। এই ন’টা গানের সুর এত মেলোডিয়াস যে, হিন্দি ছবিতেও তা কাজ করেছে।”

তবে অন্যান্য সুরকারদের বাংলা গান যে বলিউডে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়েও আশাবাদী জিৎ। অনুপম রায়ের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে সুজয় ঘোষের। সব ঠিক থাকলে ‘দুর্গারানি সিংহ’ ছবিতে ‘এখন অনেক রাত’ গানটার হিন্দি সংস্করণটা ব্যবহার করা হতে পারে। আর ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’? সে গানটার জন্য বলিউড এখনও যোগাযোগ করেনি? “অনেকের ভাল লেগেছে। তবে সে রকম দৃশ্য থাকা দরকার যেখানে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। জিৎদা কাজ শুরু করেছিল বলিউডে। আমার মাত্র তিন-চার বছর হয়েছে সুরকার হিসেবে। দু’টো ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করলে তবেই আমার বাংলা গানগুলো বলিউডে ব্যবহার করার সুযোগ আসবে। কাউকে তো আমার গানগুলো ওখানে গিয়ে শোনাতে হবে,” বলছেন অনুপম।

সেই একই কথা বলছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। “যে দিন আমি নিজে বলিউডে কাজ করব, তখন ‘জানি দেখা হবে’ আর ‘পত্তো কা হ্যায় জিসম জানম’ গানগুলো বলিউডে ব্যবহার করা হবেই। বলিউডের কোনও সুরকার নিজে থেকে আমার গান চেয়ে তার হিন্দি করবেন, এটা আশা করছি না,” বলছেন ইন্দ্রদীপ। কিন্তু কেন? প্রীতম তো গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ‘পৃথিবী’ গানটা ব্যবহার করেছিলেন ‘গ্যাংস্টার’য়ের ‘ভিগি ভিগি’তে। তা হলে ইন্দ্রদীপের সুর করা পাপনের গাওয়া ‘রোদ্দুর’ গানটা কেন বলিউডকে টানবে না? বা অরিজিৎ সিংহের ‘বোঝে না সে বোঝে না’? “গৌতমদা আজ আর নেই। বলিউড সুরকারদের থ্রেট হবেন না তিনি। আমার গান যদি হিট করে যায়, তা হলে বলিউড কম্পোজারদের কাছে আমি থ্রেট হয়ে যাব। সেটা কেউ নিজে থেকে চাইবে না,” বলছেন ইন্দ্রদীপ। তবে হাল ছাড়তে নারাজ নন কেউই। শেষে ইন্দ্রদীপ বলছেন, “আরডি বর্মন, বাপ্পি লাহিড়ি, সলিল চৌধুরী, হেমন্তকুমার এঁরা সবাই দু’টো ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। যেদিন আমরা এটা করতে শুরু করব, টলিউডের গানও অন্য রিজিয়নে জনপ্রিয় হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement