টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন অভিনেতা হতে। পাকেচক্রে হয়ে গেলেন পরিচালক। নিজের পরিচালিত দু’টো ফিল্ম আবার জাতীয় পুরস্কারও জিতে ফেলল। অভিনয় সরে গেল জীবন থেকে।
কেউ জানত, পঁচিশ বছর বাদে অভিনেতা হওয়ার হাইওয়ে হঠাত্ করে সামনে এসে যাবে পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সামনে! গোটা ইন্ডাস্ট্রি যাঁকে টোনি বলে চেনে, তিনি আর ক্যামেরার পিছনে নন, সরাসরি সামনে চলে যাবেন!
আর তা-ও স্ক্রিন স্পেস শেয়ার করবেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে। ছবিতে তাঁর নাম নব্যেন্দু। অবশ্যই বাঙালি এবং পেশায় ব্রোকার। ছবির নাম আন্দাজ করা খুব সহজ ‘পিকু’!
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, টোনির চরিত্র ক্যামিও। বড় কোনও চরিত্র নয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
আশ্চর্যজনক ভাবে এই কাজ সম্পর্কে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী বা পরিচালক সুজিত সরকার মুখ খুলতে চাইছেন না। বচ্চনের সঙ্গে স্ক্রিন স্পেস শেয়ার করে কেমন লাগল? আপনি নিশ্চয়ই নার্ভাস ছিলেন?
উত্তরে অনিরুদ্ধ বললেন, “প্লিজ, এখন কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।” পরিচালকও মুখ খুলতে ভয়ঙ্কর অনিচ্ছুক। যে যুগে শ্যুটিংয়ের প্রথম দিন থেকে প্রোডিউসররা সব কিছু খুলে দেন। নিয়মিত মিডিয়ায় খবর লিক করা হয়ে থাকে। সেই সময়ে গোটা শ্যুট ঘিরে নীরবতা যথেষ্ট ব্যতিক্রমী।
এমনিতে সুজিতের ছবিতে অনিরুদ্ধের নির্বাচন নিয়ে বিস্ময়ের কিছু নেই। বছর চারেক আগে দু’জনের আলাপ করিয়ে দেন সুরকার শান্তনু মৈত্র। এর পর অন্তরঙ্গতা ক্রমশই বাড়ে। বন্ধু টোনির ‘অপরাজিতা তুমি’ ছবিতে প্রযোজনাও করেছিলেন সুজিত। আমেরিকায় মাসখানেক ধরে শ্যুটিং হয়ে এটি টালিগঞ্জের ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল ছবির মধ্যে চলে যায়। কিন্তু বন্ধু পরিচালকের উপর বিশ্বাসে অবিচল সুজিত কোনও কার্পণ্য করেননি। এমনকী বছরখানেক আগে অনিরুদ্ধের ছবি ‘বুনো হাঁস’য়ের শেষ দৃশ্যের অ্যাকশন সিকুয়েন্স মুম্বইতে শ্যুট করেছিলেন বন্ধু সুজিত।
পুরস্কারজয়ী পরিচালকের প্রথমে অভিনেতা হতে চাওয়ার ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাসের কাহিনি অবশ্যই জানেন সুজিত। সে জন্যই কি জুতসই রোল তৈরি হওয়া মাত্র বন্ধুকে ডাকলেন? কেউই মুখ না খোলায় উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়। কেউ ভেবেই পাচ্ছে না চরিত্রটা নিছক ক্যামিও হলেও তা ঢেকে রাখার জন্য কেন এত গোপনীয়তা?
জানা গেল, মুম্বই-কলকাতা দু’দফায় শ্যুটিং করেছেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। খবরটা প্রথম আনন্দplus-এর কাছে পৌঁছয় ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির পাশের রাস্তায় তিনি শ্যুটিং করতে যাওয়ায়। ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি নিজের ‘পিকু’যাত্রা সম্পর্কে ইন্ডাস্ট্রির ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের অনিরুদ্ধ বলেছিলেন, “এসআরকে নিয়ে ব্র্যান্ড বেঙ্গল শ্যুট করার সময়ে দেখেছিলাম নিষ্ঠা কাকে বলে! লোকটা সেই যে সেটে গিয়ে বসত, আর সারাদিনের কাজ শেষ হওয়ার পর বেরোত। এই ভদ্রলোকও কী অবিশ্বাস্য! মিস্টার বচ্চন স্বয়ং চরিত্রটা হয়ে যান। কত কিছু শেখার আছে।”
অমিতাভের সঙ্গে অভিনেতা হিসেবে সেট ও সেটের বাইরে দীর্ঘ সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা কি পরিচালক হিসেবে তাঁকে আরও সমৃদ্ধ করবে? অনিরুদ্ধের মুখে সেই রহস্যজনক নীরবতা। অন্যতম প্রযোজক রনি লাহিড়ি অবশ্য বললেন, “খবরটা ঠিক। টোনি খুব ভাল কাজ করেছে।”
কিন্তু ‘টিম পিকু’ সাহায্য না করায় শ্যুটিংয়ের কোনও স্টিল ছাপানো সম্ভব হল না।