মুম্বইয়ের ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান। স্টেজে উপস্থিত অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট।
আমন্ত্রিতদের আসনের এক কোনায় বসে ব্রেট লি। আর এক কোনায় বসা তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। প্রোগ্রামের এমসি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। অতিথিদের আসনে অন্যান্যদের মধ্যে সচিন তেন্ডুলকর। হঠাত্ অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন: “ব্রেট আর তন্নিষ্ঠা আপনারা দু’জনে অত দূরে দূরে বসে আছেন কেন? দু’জনে অভিনয় করবেন একটা রোমান্টিক কমেডিতে। তা হলে এত দূরে দূরে বসে থাকলে চলে?”
এ ভাবেই বেশ হাসিঠাট্টার মধ্যে দিয়েই মুম্বইতে ঘোষণা করা হয়েছিল ব্রেট লি অভিনীত প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি। নাম ‘আনইন্ডিয়ান’। পরিচালক অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করা এক ভারতীয়। নাম অনুপম শর্মা। অক্টোবর মাস থেকে সে ছবির শ্যুটিং শুরু।
আশা ভোঁশলের সঙ্গে মিউজিক ভিডিয়োতে শ্যুটিং করা এক ব্যাপার। ‘ভিক্ট্রি’ ছবিতে অতিথি শিল্পী হওয়াটাও মানা যায়। তাই বলে একটা পূর্ণ দৈর্ঘ্যে র ছবির নায়ক ব্রেট লি? যদি অভিনয়ের প্রথম ইনিংসে উইকেট না পান?
তা হলে?
অনুপম এখন মুম্বইতে। এক সপ্তাহ পরে ফিরে যাবেন অস্ট্রেলিয়াতে। মুম্বই থেকে ফোনে বললেন, “অস্ট্রেলিয়াতে ব্রেটের সঙ্গে বেশ কিছু কাজ করছি। বিজ্ঞাপন করেছি। তাই জানি যে ব্রেটের স্ক্রিন প্রেজেন্সটা খুব ভাল। ক্যামেরার সামনে এলেই স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে। এ ছাড়া ব্রেটের একটা কথা আমার দারুণ লাগছিল। একবার আমায় বলেছিল ‘আই হ্যাভ নেভার স্টেপড অন আ ক্রিকেটগ্রাউন্ড আন্ডার প্রিপেয়ার্ড।’ অর্থাত্ ফাস্ট বোলার হয়ে কোনও দিন প্রিপারেশন না নিয়ে ক্রিকেট মাঠে যাইনি। তাই ছবির ক্ষেত্রেও সেই একই রকম ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে শ্যুটিং করতে নামব।”
সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল তিন চার মাস আগে। নিকোল কিডম্যান, কেট ব্ল্যানচেট, রাসেল ক্রো-র মতো অস্ট্রেলীয় স্টারদের ভয়েস কনসালটেন্ট বিল পিপারের কাছে অ্যাকসেন্ট নিয়ে ট্রেনিং নিচ্ছেন ব্রেট। তার সঙ্গে চলছে অ্যাক্টিং কোচের কাছে প্রশিক্ষণ। “ব্রেট নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে চিত্রনাট্য পড়ে ফেলেছিল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চেয়েছিল কী ধরনের রোলে ওকে অভিনয় করতে হবে। এপ্রিল নাগাদ চিত্রনাট্যটা আমরা লক করে ফেলি। ওই সময় ব্রেটকে আমরা ছবির জন্য সাইন করিয়ে নিই,” পরিচালক জানান।
‘আনইন্ডিয়ান’ ছবির মূল গল্প এক ভারতীয় মহিলা আর অস্ট্রেলিয়ান পুরুষের প্রেমকে কেন্দ্র করে। মহিলার নাম মীরা। বিয়ের পর তিনি অস্ট্রেলিয়াতে চলে যান। ব্রেটের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় তিনি সিঙ্গল মাদার। আট বছর বয়সি সন্তানের মা হয়েও ব্রেটের প্রেমে পড়েন তিনি। ভারতীয় মহিলা, তায় সিঙ্গল মাদার। তাঁর সঙ্গে সাদা চামড়ার পুরুষের প্রেমে পড়ার ঘটনা সমাজ অত সহজে মেনে নেবে না হয়তো। কোনটা ইন্ডিয়ান, কোনটা আনইন্ডিয়ান, এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। ছবিতে এই ইস্যুগুলোকে মজার ছলে দেখানো হবে।
তা ব্রেটের বিপরীতে হঠাত্ তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়কে নিতে গেলেন কেন? “ব্রেটের পাশে আমাদের এমন একটা ভারতীয় অভিনেত্রী দরকার ছিল যিনি ব্রেটের চার্মটা ব্যালেন্স করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ভাবে তন্নিষ্ঠা অভিনয়ের জন্য জনপ্রিয়। আমার কাছে তন্নিষ্ঠাই প্রথম চয়েজ ছিল। কিন্তু ছবির প্রযোজক আর বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য বিকল্প নিয়েও ভাবছিল,” বললেন অনুপম। পরিচালকের মতে ছবির প্রযোজকদের ভয় ছিল যে অন্যান্য বলিউড অভিনেত্রীদের মতো তন্নিষ্ঠা হয়তো শুধু ব্রেট আছে বলেই ছবিতে হ্যাঁ করে দেবে না। “একবার যখন তন্নিষ্ঠার চিত্রনাট্য ভাল লেগে যায় তখন আমি সহজেই ওদেরকে কনভিন্স করে ফেলি। ব্রেট নিজে তন্নিষ্ঠা অভিনীত ‘ব্রিক লেন’ দেখেছে। তন্নিষ্ঠা যে ছবিটা করতে রাজি হয়েছে তা শুনে ব্রেট খুব খুশি,” পরিচালক জানান।
ব্রেট, অনুপম ও তন্নিষ্ঠা।
এক সময় অস্ট্রেলিয়াতে লাইন প্রোডাকশনের কাজ করতে গিয়ে একঘেয়েমি এসেছিল অনুপমের। “চেয়েছিলাম নিজেই এমন একটা ছবি মাউন্ট করতে যার মধ্যে দিয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক মজবুত হয়ে উঠতে পারে। এমন একটা ছবি যার শরীরটা ওয়েস্টার্ন কিন্তু আত্মাটা ভারতীয়। ঠিক হল এই রকম তিনটে মিডিয়াম বাজেটের প্রজেক্ট করা হবে। তার মধ্যে একটা হল ‘আনইন্ডিয়ান’,” অনুপম বলেন।
ছবিতে ব্রেটকে কি দেখা যাবে হিন্দি গানের তালে তালে নাচতে? “আমাদের ছবিটা মূলত ওয়েস্টার্ন দর্শকদের জন্য তৈরি। ন্যারেটিভটাও ওয়েস্টার্ন। কথা চলছে যাতে ছবির শেষে একটা র্যাপ নাম্বার রাখা যায়। ছবিতে একটা দোলের দৃশ্যও থাকবে। এদেশে দেখলাম ব্রেটের সাঙ্ঘাতিক জনপ্রিয়তা আছে। হয়তো ছবির একটা ভারতীয় ভার্সন তৈরি করব,” জানাচ্ছেন পরিচালক।
এ দিকে তন্নিষ্ঠা এই ছবি নিয়ে দারুণ উত্সাহী। পরপর দু’বছর অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েছেন এশিয়া-প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডের জন্য। একবার সেখানে তাঁর ছবি মনোনীতও হয়েছিল। অন্য একবার তিনি ছিলেন জুরিতে। ‘আনইন্ডিয়ান’য়ে ব্রেট লি-র সঙ্গে কাজ করা নিয়ে বলছেন, “ছোটবেলায় দু’ বছর পার্থে কাটিয়েছি। অস্ট্রেলিয়াতে শ্যুটিং করাটা আমার কাছে বাড়ি ফেরার মতো ঘটনা। ব্রেটের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আমার ধারণা ছবিতে ওর সঙ্গে কাজ করতে ভাল লাগবে।”
নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রিমিয়ার
অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়ার আগে, তন্নিষ্ঠা উড়ে যাচ্ছেন আমেরিকাতে। ইউনিয়ন কার্বাইডের ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির ওপর ভিত্তি করে তৈরি ‘ভোপাল: এ প্রেয়ার ফর রেইন’ বলে একটা ছবির প্রিমিয়ারে যাচ্ছেন তিনি। ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করছেন কিংবদন্তি শিল্পী মার্টিন শিন। এ ছাড়া আছেন কাল পেন ও মিশা বার্টন। ভোপালে শ্যুট করা এ ছবির জন্য দু’টো গান গেয়েছেন স্টিং। সবথেকে বড় ব্যাপার হল এ ছবির প্রিমিয়ার হচ্ছে ইউনাইটেড নেশনসের হেডকোয়ার্টারে। তন্নিষ্ঠা বলছেন, “১৮ সেপ্টেম্বর ছবির প্রিমিয়ার হবে ইউএন-এর নিউ ইয়র্ক হেডকোয়ার্টারে। ওটা অ্যাটেন্ড করতে আমেরিকা যাব। তারপর দেশে ফিরে আরও একটা হিন্দি ছবির শ্যুটিং শেষ করব। তারপর আবার একবার আমেরিকা যাওয়া। এ সব শেষ করে পাড়ি দেব অস্ট্রেলিয়া। ছ’সপ্তাহ শ্যুটিং শেষ করে দেশে ফিরব। পুজোটা এ বার অস্ট্রেলিয়াতে কাটবে আমার।”