নায়িকারা কি নুড়ি পাথর যে ঘষলেই আগুন ধরবে

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। পাওলি। ‘পারাপার’য়ে কে বেশি ভাল? এ প্রশ্ন হবে জেনেও কী করে দুই নায়িকা একসঙ্গে কাজ করলেন? তাঁদের সঙ্গে আড্ডায় প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।গত বছর এই শীতকালেই দক্ষিণ কলকাতার এক ক্লাবে দেখা হয়েছিল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আর পাওলির। তখন সবেমাত্র ‘পারাপার’য়ের কাজ শুরু হয়েছে।ছবি শেষের পর ঠিক হল আবার আড্ডা হবে। ভেনু এক। সময় দুপুর দুটো। কিন্তু প্ল্যান অনুযায়ী সব হল কই? দুপুর দুটো গড়িয়ে আড়াইটের সময় পাওলি এলেন। ঋতুপর্ণার পৌঁছোতে পৌঁছোতে তিনটে। সঙ্গে কন্যা ঋষণা নিয়া। আজকাল নাকি খুদে ঋষণা মায়ের সঙ্গ ছাড়ে না। ফোটোশ্যুটের শুরুর আগে নিজেই রাজি হয়ে গেল ‘এক্সপ্রেশন’ সমেত নেচে দেখিয়ে দিতে। ঋতুপর্ণা আর পাওলি হেসে গড়িয়ে পরলেন পুঁচকির কাণ্ড দেখে। ঠিক মতো ব্যালান্স করার জন্য পা থেকে জুতো খুলে সে রেডি। কোমর দুলিয়ে শুরু করে দিয়েছে ঋতুপর্ণার জনপ্রিয় গান ‘ড্যাং ড্যা ড্যা ড্যাং ড্যাং’য়ের সঙ্গে নাচ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share:

গত বছর এই শীতকালেই দক্ষিণ কলকাতার এক ক্লাবে দেখা হয়েছিল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আর পাওলির। তখন সবেমাত্র ‘পারাপার’য়ের কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

ছবি শেষের পর ঠিক হল আবার আড্ডা হবে। ভেনু এক। সময় দুপুর দুটো। কিন্তু প্ল্যান অনুযায়ী সব হল কই? দুপুর দুটো গড়িয়ে আড়াইটের সময় পাওলি এলেন। ঋতুপর্ণার পৌঁছোতে পৌঁছোতে তিনটে। সঙ্গে কন্যা ঋষণা নিয়া। আজকাল নাকি খুদে ঋষণা মায়ের সঙ্গ ছাড়ে না। ফোটোশ্যুটের শুরুর আগে নিজেই রাজি হয়ে গেল ‘এক্সপ্রেশন’ সমেত নেচে দেখিয়ে দিতে। ঋতুপর্ণা আর পাওলি হেসে গড়িয়ে পরলেন পুঁচকির কাণ্ড দেখে। ঠিক মতো ব্যালান্স করার জন্য পা থেকে জুতো খুলে সে রেডি। কোমর দুলিয়ে শুরু করে দিয়েছে ঋতুপর্ণার জনপ্রিয় গান ‘ড্যাং ড্যা ড্যা ড্যাং ড্যাং’য়ের সঙ্গে নাচ।

এ দিকে নভেম্বরের দুপুরে আলো কমে আসছে। দু’একটা ছবির পরেই হঠাত্‌ ঠিক হল লেক গার্ডেন্সের ফ্লাই ওভারে গিয়ে ফোটোশ্যুট করা হবে। দুই নায়িকাকে নিয়ে রাস্তায় শ্যুট করার বিড়ম্বনা অনেক। ঝটপট ছবি তুলে তাই সোজা যাওয়া হল দক্ষিণ কলকাতার এক রেস্তোরাঁয়। শুরু হল আড্ডা।

Advertisement

ঋতুপর্ণা, আজ আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একটা গল্প শুনলাম। একবার নাকি এ দেশে বসে বাংলাদেশের একটা অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে বলেছিলেন, ‘এই তো কিছুক্ষণেই পৌঁছে যাচ্ছি।’ এটা কি গুজব না সত্যি?

ঋতুপর্ণা: (হাসি) বলেছিলাম। আধ ঘণ্টার ফ্লাইট আর যেতে আসতে এক ঘণ্টা। তাই বলেছিলাম।

আপনি শুধু শহর না, বর্ডার পেরিয়ে অন্য দেশে যাওয়া নিয়েও এমন কথা বলতে পেরেছিলেন?

ঋতুপর্ণা: (হাসি) এটাও একটা পারাপার। তবে ‘পারাপার’ শ্যুট করতে গিয়ে আমি অনেক দিন সেটে আগেও পৌঁছে গিয়েছি। এখন আর আমার টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বিতর্ক হয় না।

আপনারা নিশ্চয়ই বোঝেন যে দুই পারদর্শী অভিনেত্রী একসঙ্গে কাজ করলে প্রথমেই সব্বাই প্রশ্ন করবে পাওলি ভাল, না ঋতু ভাল? এটা জেনেও কী ভাবে কাজ করলেন?

পাওলি: প্রচুর দর্শক সে নিয়ে না ভেবে গোটা ছবিটা নিয়ে চর্চা করবে।

পাওলি, এখানে ডিপ্লোম্যাসি কিন্তু অ্যালাউড নয়...

পাওলি: না, ডিপ্লোম্যাসি করছি না। চিত্রনাট্যটা ভাল ছিল। পরিচালক সঞ্জয় নাগের ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ আমার পছন্দের ছবি। তাই জানতাম ও এই ছবিটা খুব ভাল করে করবে। ঋতুদি আমার থেকে অনেক বেশি সিনিয়র। কোনও কম্পিটিশন নেই। তাই প্রতিযোগিতা কোথায়?

এ প্রশ্ন ছবির নায়কদের নিয়ে উঠবে না। কারণ বাংলাদেশী অভিনেতা আহমেদ রেজা রুবেল এখানকার দর্শকের কাছে অত পরিচিত মুখ নন...

ঋতুপর্ণা: ব্রাত্য বসুর চরিত্রটার মধ্যে হিস্টিরিয়া রয়েছে। খুব বড় মাপের অভিনেতা হলে ওই বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, বাচনভঙ্গি আনা যায়। রুবেলের চরিত্রটা খুব শান্ত। কিন্তু ভেতরে গ্রিভ্যান্স ছিল।

পাওলি: ব্রাত্যদা আর রুবেলদা দু’জনেই আউটস্ট্যান্ডিং। ছবিতে ব্রাত্যদা আর আমি যে চরিত্র করেছি সেই রকম চরিত্র বাংলা সিনেমায় এর আগে দেখা যায়নি। ব্রাত্যদা না হলে এই চরিত্র সম্ভব ছিল না। যে ক’টা কাজ ব্রাত্যদার সঙ্গে করেছি তার মধ্যে এই চরিত্রটা সেরা। রুবেলদার চরিত্রের মধ্যে দারুণ কনসিসস্টেন্সি রয়েছে। মিনিমাল অভিনয়।

অনেকেই তো বলেন ঋতুপর্ণা আর পাওলির মধ্যে হাল্কা ফ্রিকশন আছে...

পাওলি: তাই নাকি? আমরা কি নুড়ি পাথর যে আমাদের মধ্যে ফ্রিকশন থাকবে? আমি ইনসিকিওর নই।

ঋতুপর্ণা: আমি টিমওয়ার্কে বিশ্বাস করি। আমার সঙ্গে ওর তো সমস্যা নেই।

সত্যি? দু’জনেই লেক গার্ডেন্সে থাকেন। এক বছর আগে বলেছিলেন কেউ কারও বাড়িতে যাননি। ছবি করা হয়ে গেল। এত দিনে কেউ কারও বাড়িতে গিয়েছেন?

পাওলি: না। ঋতুদি এত ব্যস্ত। আমি তো ব্রাত্যদা বা সঞ্জয়দার বাড়িতেও কোনও দিন যাইনি।

ঋতুপর্ণা: পাওলির কিছু ব্যাপার ভাল না লাগলে সেটা আমি বলে দিতে পারি। যদি ভাল লাগে সেটাও বলতে পারি।

পাওলি: আমরা তো আরও একটা ছবি একসঙ্গে করছি। রাজাদার (সেনের) ছবি। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘মায়ামৃদঙ্গ’র ওপর ভিত্তি করে করা।

ঋতুপর্ণা: আমি সঞ্জয়দাকে বলেছিলাম যে ছবিতে আমাদের দু’জনকে নিয়ে দৃশ্য রাখা হোক। ইনসিকিওরিটি থাকলে বলতাম?

পাওলি: থ্যাঙ্কস ঋতুদি।

ছবি দেখে দু’জনের দু’জনকে কেমন লাগল?

ঋতুপর্ণা: জানতাম পাওলি খুব ভাল অভিনেত্রী। এখানে দেখে মনে হল ও অনেক বেশি পরিণত হয়েছে। খুব জটিল একটা চরিত্র। ছবির প্রথমে ও গ্রামের অল্পবয়েসি একটা মেয়ে। তার পর ওর বিয়ে হয়। পাওলির প্রকাশভঙ্গিতে তখন ভঙ্গুর ভাব। আর শেষে ওর বোস্টমী লুক। ওর চরিত্রের মধ্যে নানা রকমের টুইস্ট আছে।

আজকালকার বাংলা ছবিতে টুইস্ট ব্যাপারটা নতুন ট্রেন্ড। ‘চতুষ্কোণ’, ‘খাদ’ এখন ‘পারাপার’...

পাওলি: ছবিটা শেষ পর্যন্ত না দেখলে কেউ বুঝবে না যে এখানেও থ্রিলার এলিমেন্ট আছে। সব কিছুই খুব সাটল। আমাদের ছবিতে চমক আছে, কিন্তু সেটা আরোপিত নয়।

ঋতুপর্ণা: সেটাই। সঞ্জয়দা রূপক হিসেবে অনেক কিছু খুব সাটল ভাবে ব্যবহার করেছে। পাওলির চোখের ব্যবহার খুব ভাল।

পাওলি: ঋতুদি খুব ভাল অভিনেত্রী। কত ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছে। ‘পারাপার’য়ের চিত্রনাট্যটা খুব ভাল। ঋতুদির চরিত্রে (দামিনী) ঊর্মিলার (আমার) চরিত্রের মতো চড়াই-উতরাই নেই। তবে একটা শান্তভাব রয়েছে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দামিনী সংসারের হাল ধরে। তখন ও খুব স্ট্রং। মাঝেমধ্যে স্টার্ন-ও। খুব ভাল অভিনেত্রী বলেই সেটা ও ফুটিয়ে তুলেছে। দামিনীর জন্য ঋতুদি হল পারফেক্ট চয়েস।

ঋতুপর্ণা: দামিনীর চরিত্রের মধ্যে একটা স্থিরতা আছে। সেটা প্রকাশ করাটা খুব ডিফিকাল্ট। সব সময় সোজা তাকিয়ে রয়েছি। আমার লাইফে যা চলতে থাকে, সেটা ফুটিয়ে তোলাটা খুব কঠিন।

অনেক সময় এত শান্ত ভাবে অভিনয় করাটা খুব ডিসপেটিভ হতে পারে। কেউ হয়তো অভিনয় করতেই পারল না। কিন্তু সবাই বলল কী দারুণ ন্যাচারাল অ্যাক্টিং! কোনও ছবি দেখে এটা আপনাদের মনে হয়েছে?

ঋতুপর্ণা: অভিনয় করা আর চরিত্রে মিশে যাওয়ার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ফারাক থাকে। কেউ যদি একদম অভিনয় না করে, সেটাকে ন্যাচারাল অ্যাক্টিং বলে চালাতে চায়, তা হলে তা বোঝা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ছবির অন্য সাপোর্ট সিস্টেমটা এমন থাকে যে সেই অভিনয় দেখে মনে হয় যেন ফ্যান্টাস্টিক কাজ হয়েছে। একটা-দু’টো ছবিতে এ সব হতে পারে। সব ছবিতেই এটা করা যায় না।

পাওলি: এটা পরিচালকের ওপর নির্ভর করে। তবে একদম অভিনয় না করে দর্শকের চোখে ধুলো দেওয়া যায় না।

যদি বাস্তব জীবনে আপনাদের কোনও বন্ধুকে দামিনীর জায়গায় দাঁড়াতে হয়, যেখানে তার স্বামী এ ভাবে জেলে চলে যায়, তা হলে আপনারা ওকে কী উপদেশ দেবেন? বলবেন স্বামীকে ক্ষমা করে দাও?

ঋতুপর্ণা: দামিনী যা করেছে, আমিও তাই করতে বলতাম। যদিও জানি না এ রকম একটা পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেলে কোনও মহিলা কী ভাবে মানসিক ভারসাম্য রেখে চালিয়ে যেতে পারে...

দামিনীর স্বামী তো জেলে চলে যায় আর ছেলেমেয়েরা সারা জীবন পাড়া-পড়শিদের কাছে শুনে যায় তাদের বাবা একজন ধর্ষক...

ঋতুপর্ণা: ভাবুন তো কী সাঙ্ঘাতিক ট্রমা সেটা! এ রকম আমার হলে তো আমি আধমরা হয়ে যেতাম... প্যারালাইজড্।

আচ্ছা, কখনও যদি আপনাদের প্রেমিককে দ্যাখেন অন্য কোনও মহিলার জন্য বড় স্যাক্রিফাইস করছেন, মেনে নিতে পারবেন?

পাওলি: সত্যি প্রেমে পড়লে আমি সেই পুরুষকে ক্ষমা করে দেব। কারণ প্রেম মানে স্যাক্রিফাইস। প্রেম মানে ক্ষমা। পরিস্থিতির চাপে মানুষ বিভিন্ন ভাবে রিঅ্যাক্ট করে। ঘটনাটা ভুলব না। কিন্তু ক্ষমা করে দেব।

ঋতুপর্ণা: আমি সব সময় ক্ষমা করে দিই (হাসি)। আই ফরগিভ বিগটাইম।

ঋতুপর্ণার অনুভূতিকে কেউ মিসইউজ করলে কী ভাবে সামাল দেন?

ঋতুপর্ণা: (হাসি) আই অ্যাম স্টিল ডিলিং উইথ ইট। তবু আমি যদি মনে করি আমি ক্ষমা করব, তা হলে প্রথম স্টেপটা নিজেই নেওয়ার কথা ভাবি।

প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে না?

ঋতুপর্ণা: আমি প্রতিশোধপরায়ণ নই। চেষ্টা করি এমন কিছু করতে যাতে আমি নিজে স্যাটিসফায়েড হয়ে বাঁচতে পারি। স্বীকার করছি হতাশ লাগে। মনে হয় ইউজড হয়ে গেলাম। তবু নিজেকে বোঝাই যে এখানেই জীবন শেষ হয়নি। তখন আই জাস্ট এম্পটি মাই হার্ট। অপেক্ষা করি যাতে কেউ এসে আমাকে পরিপূর্ণতা দেবে (হাসি)। আমার এক দিদি স্কটল্যান্ডে থাকে। ও বলেছিল এ রকম কিছু হলে এম্পটি ইয়োর হার্ট। তার পর ওয়েট করো। কেউ এসে ঠিক আবার ভরিয়ে দেবে।

দামিনী তো এক মধ্যবিত্ত বাড়ির গৃহবধূ। ওকে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। কিন্তু সেলিব্রিটি হয়ে এই ধাক্কা খেয়ে নিজেকে ‘এম্পটি’ করাটা কতটা কঠিন?

পাওলি: সেলিব্রিটির মধ্যে যে মেকি গর্বটা থাকে, সেটা আমার নেই। তবে এটা ঠিক যে সমাজ ধরেই নেয় মেয়েরা ক্ষমা করবে। সহ্য করবে। তবু বলব ‘এম্পটি’ করাটা সহজ নয়।

মনে হয়নি আমি কেন বুঝতে পারলাম না যে এ ভাবে ব্যবহৃত হয়ে গেলাম?

পাওলি: নিশ্চয়ই মনে হয়। আমার তো ভীষণ ভাবেই সেটা হয়েছে। বাট ইটস ওকে... ইটস পার্ট অব লাইফ।

ঋতুপর্ণা: আমি এখনও দুঃখ পাই। কষ্ট পাই। সেগুলোর থেকে উর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করি।

পাওলি: দামিনীর যে ম্যাচিওরিটি, আমি এখনও সেখানে পৌঁছতে পারিনি। আরও দশ বছর পর ওই লেভেলে পৌঁছতে পারব। এমনকী ঊর্মিলার মতো আমি নই।

কানাঘুষো শোনা যায় যে এই ছবির চিত্রনাট্যটা ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা। এটা কি সত্যি?

ঋতুপর্ণা: জানি না। সঞ্জয়দার কাছে শোনা যে চিত্রনাট্যটা প্রথম ও ঋতুদাকেই শুনিয়েছিল। আর শুনতে শুনতে ঋতুদা আমাকে ফোন করে বলেছিল, “শোন, আমার খুব ক্লোজ এক বন্ধুর একটা ছবি তোকে করতে হবে। ভাল গল্প। তুই বেশি টাকা নিবি না আর ওকে জ্বালাবি না!” সঞ্জয়দা তখনও জানত না যে ঋতুদা ফোনটা আমাকেই করেছিল।

পাওলি: ঋতুদা চলে যাওয়ার পর শ্যুটিং হয়েছে। সঞ্জয়দাকে কাজ করতে দেখেছি। জানি, ও কতটা দক্ষ।

এ বছর ইফিতে ঋতুপর্ণ ঘোষের দুই সহকারীর ছবি প্রতিযোগিতায় ছিল। দুটো কাজেই ঋতুপর্ণর ছায়া রয়েছে। শৌভিক মিত্রর ‘পুনশ্চ’ নির্বাচিত হল। কিন্তু ‘পারাপার’ হল না। খারাপ লেগেছে?

ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ। মতি নন্দীর ‘পুবের জানালা’র ভিত্তিতে ছবিটা তৈরি। কবেকার লেখা! চিত্রনাট্যতে দিল্লি রেপ কেসটাও সঞ্জয়দা এনেছে। এই ছবিটা এতটাই সময়োপযোগী যে বলব ওটা সিলেক্টেড হওয়া উচিত ছিল। অবশ্য আমার ‘তিন কাহন’ সিলেক্টেড হয়েছে।

পাওলি: আমিও ভেবেছিলাম ‘পারাপার’ যাবে।

নিজের অভিনীত চরিত্রদের মধ্যে ‘পারাপার’য়ের পারফর্ম্যান্সকে ৫-এ কত দেবেন?

পাওলি: কেরিয়ারের সেরা কাজের মধ্যে এটাকে রাখব।

নিজের পারফর্ম্যান্সকে কত দেবেন?

পাওলি: আমি নিজেকে -এ দেব। তবে আমি ঋতুদিকে এই ছবিতে -এ দেব। ব্রাত্যদাকে -এ । রুবেলদাকে -এ । সঞ্জয়দাকে -এ (হাসি)।

ঋতুপর্ণা: পাওলিকে আমি -এ দেব! ব্রাত্যদাকে -এ । রুবেলকে -এ

কখনও মনে হয়েছে আগের কাজগুলোকে ছাপিয়ে গিয়েছেন?

ঋতুপর্ণা: এই ছবিতে আমি নিজেকে -এ দেব। আমি নিজে কাজ করে খুব খুশি। তবে বলব আমার মনে হয় ডিরেক্টর আমাকে আরও একটু এক্সপ্লয়েট করতে পারত।

পাওলি: আমার মনে হয় ডিরেক্টর আমাকে খুব ভাল এক্সপ্লোর করেছে।

ঋতুপর্ণা: এগ্‌জ্যাক্টলি। আমাকে যদি আরও এক্সপ্লোর করত তা হলে আরও ভাল করতাম। লোকে আমার প্রশংসা করছে। তবে আমার চরিত্রের আবেগের টানাপড়েনটা আরও বেশি দেখালে ভাল করত। বেশি এক্সপোজার থাকলেও ভাল হত।

পাওলি: ছবিতে ঊর্মিলার যতটা থাকা দরকার ততটাই আছে। আরও থাকলে কী হত, সেটার তো কোনও শেষ নেই। ঊর্মিলা তো মাধবীলতা নয়। ঊর্মিলা নিজের মতো করেই সুন্দর। এর থেকে বেশি কী হতে পারত, আমার জানা নেই।

ঋতুপর্ণা, চিত্রনাট্যের জায়গা থেকে আপনার কি কোনও বক্তব্য আছে?

ঋতুপর্ণা: চিত্রনাট্য পড়ে আমার দারুণ লেগেছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে ছবি দেখে মনে হয়েছে চিত্রনাট্য অনুযায়ী আমাকে এক্সপ্লোর করা হয়নি।

দুই নায়িকার মধ্যে কেউ ছবির সুপুরুষ পরিচালকের প্রেমে পড়েননি? কার কথা সঞ্জয় বেশি শুনেছেন?

ঋতুপর্ণা: সঞ্জয়দাকে আমার খুব ভাল লাগে। তবে প্রেমে পড়িনি। প্রেমে পড়লে তো ও আমাকে আরও বেশি এক্সপ্লোর করত (হাসি)। তবে ছবি রিলিজের আগে কী ভাবে প্রচার হবে সে সব নিয়ে সঞ্জয়দা আমার সঙ্গেই মিটিং করেছে। আমার সব সাজেশন শুনেছে। কিন্তু পরিচালকদের আমি কন্ট্রোল করতে চাই না।

পাওলি: আমিও না। আমার সব পরিচালকই ভাল মানুষ। আর সব্বাই সুপুরুষ। তাই বলে কি সবার প্রেমে পড়তে হবে নাকি? সঞ্জয়দা সিনিয়র। ওর কাছে অনেক কিছু শিখেছি। ছবির প্রচার সম্পর্কে ও আমার থেকেও কিছু ইনপুটস্‌ নিয়েছিল।

পাওলি, এত সবের পরেও নিজেকে কোনও নম্বর দেবেন না?

পাওলি: আমি মার্কিংয়ে বিশ্বাসী নই।

একটু এসকেপিস্ট হয়ে যাচ্ছে না?

পাওলি: আমি এসকেপিস্ট নই। আমি চাই দর্শক ছবিটা হলে দেখে নম্বর দিক।

ঋতুপর্ণার জন্মদিনের পার্টিতে তো পাওলিকে দেখা গেল না?

ঋতুপর্ণা: ওকে আমন্ত্রণ করেছিলাম।

পাওলি: আমি ওকে উইশ করেছিলাম। সে দিন ‘পারাপার’য়ের একটা ইভেন্ট ছিল। সেখানে ঋতুদির জন্য একগোছা গোলাপি রংয়ের গোলাপ নিয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমার কাছে ঋতুদি এভারগ্রিন। পিঙ্ক লেডি। তাড়াহুড়োর মধ্যে ঋতুদি গোলাপগুলো নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিল। আর তখনই ওকে বলেছিলাম যে, রাতের পার্টিতে আমি যেতে পারব না। কারণ মা অসুস্থ। আপনারা একটা পার্টি অর্গানাইজ করুন। দু’জনে গিয়ে খুব হুল্লোড় করব!

ঋতুপর্ণা, আপনি বললেন পাওলিকে ওর ভাল-খারাপ দুটো দিকই বলতে পারেন। দু’জনে দু’জনের গঠনমূলক সমালোচনা করে আড্ডাটা শেষ করা যায় কি?

ঋতুপর্ণা: পাওলিকে কোঁকড়ানো চুলের থেকে স্ট্রেট চুলে বেশি সুন্দর লাগে।

পাওলি: ওটা ঋতুদির পারস্পেক্টিভ। অভিনেত্রী আর পেশাদার হিসেবে ঋতুদির সব কিছু ভাল লাগে। ‘পারাপার’ করার পর আমি তো ওর ছোট বোন।

বোন পাতালেন কবে?

পাওলি: এটা তো ঋতুদি একটা জায়গায় গিয়ে বলেছে আমাকে নিয়ে। তাই আমি বললাম। কাউকে বিচার করতে আমি রাজি নই। আমি হয়তো ওকে অতটা চিনি না যাতে ওর খারাপ কিছু বলতে পারব।

আজ যে এই এক ঘণ্টা দেরিতে এলেন। সেটা?

পাওলি: সে সময় যে আপনারা আমার ২০টা ছবি তুললেন! সেটাই তো আমার কাছে পজিটিভ ব্যাপার।

অন্যরা হয়তো অপেক্ষা করতে হলে বিরক্ত হত। ‘পারাপার’ কি পাওলিকে পাল্টে দিল? বিনয়ী নায়িকা। সব্বার সব ভাল। বিতর্কে অ্যালার্জি। নাকি আড্ডাতে অনেকটা সময় পাওলি অভিনয় করে গেলেন?

ঋতুপর্ণা: (হাসি)

পাওলি: আমি চিরকালই পজিটিভ ছিলাম। সব কিছুর মধ্যেই সেটা খুঁজি।


ব্রাত্য বসু

দুই নায়িকার সঙ্গে সুপুরুষ পরিচালক। ছবি করতে গিয়ে কাউকে প্রেমে পড়তে দেখেছেন?

আমি ফোকাসড অভিনেতা। কে প্রেম করছে না করছে, সে সব দেখার আমার সময় নেই। আর করলেও কিছু যায় আসে না।

ছবিতে ঋতুপর্ণা আর পাওলিকে কত নম্বর দেবেন?

দু’জনেই অসাধারণ। তবে ছবি দেখে বলছি ঋতুপর্ণা ৫-এ ৫।

পাওলি ৫-এ ৪.৫।

এ ছবিতে আপনার কাজ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। চরিত্রটা করতে কোনও অভিনেতাকে অনুসরণ করেছেন?

‘শাইনিং’ ছবিতে জ্যাক নিকলসনের অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। মনে হয়েছিল ওঁর কিছু ধরন আমার চরিত্রের ক্ষেত্রে লাগলেও লাগতে পারে। কিন্তু যেহেতু আমার পদবি বসু, নিকলসন নয়, তাই স্বাভাবিক ভাবেই সেটা করে উঠতে পারিনি!

কেউ যদি আপনার কাজ দেখে বলে ‘ওভার দ্য টপ’?

এই সব বিচার আমি দর্শকের হাতে ছেড়ে দিতে চাই

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement