‘‘অতনুদা, প্রথমে ঠিক করে নিন কে আজকে চড়টা মারবে!’’ সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কফি শপে বসে অপরাজিতা। হাসিমুখে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন পরিচালক অতনু ঘোষের দিকে। পাশ থেকে ঋত্বিক মিটিমিটি হাসছেন। যেই শুনেছেন চড়টা ঋত্বিককেই মারতে হবে, অপরাজিতার মুখ কাচুমাচু। “আচ্ছা, ‘এক ফালি রোদ’য়ের শ্যুটিংয়ের মক-ক্রাইসিসের সময়ও ও আমাকে চড় মেরেছিল। জলে আমাকেই ঠেলে ফেলে দেওয়া হল। ব্যাপারটা কিন্তু আমি নোট রাখছি,” বলেই এক গাল হাসি।
ঠিক হল ‘মক-ক্রাইসিস’ তৈরি করার সময় ঋত্বিক মারলেও পরে অপরাজিতাকে শোধ তোলার সুযোগ দেওয়া হবে।
কাট টু সায়েন্স সিটি।
পরের দিন দুপুর বারোটা। বাস স্ট্যান্ডে বেশ কিছু লোক। তাদের সামনে ঋত্বিক-অপরাজিতা ঝগড়া শুরু করে দিলেন। কিন্তু ঋত্বিকের চড় কই? সজোরে নিজের ব্যাগ দিয়ে মারতে শুরু করলেন তাঁর স্বামীকে!
গোটা দশেক লোক দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন। দশ মিনিটের মধ্যেও কেউ এগিয়ে এলেন না। এক জন বললেন, “দু’জনেই সিরিয়াল করে। হয়তো কিছু ঝাড়পিট হয়েছে বাড়িতে।” তারপর মোবাইল বের করলেন সেই ‘ঝাড়পিট’য়ের ছবি তোলার জন্য। কিন্তু ঝগড়া থামাতে এগিয়ে এলেন না।
এর পরের গন্তব্যস্থল সায়েন্স সিটির ঠিক মুখে। ঋত্বিক ব্যাগের ধাক্কা খেয়ে এ বার প্রস্তুত। হাত দিয়ে অপরাজিতার থুতনিটা চেপে ধরলেন। দেখেই অল্পবয়েসি কিছু ছেলে ছুটে এল। “কী মশাই? মেয়েছেলের গায়ে হাত দিচ্ছেন?” ঋত্বিক ততক্ষণে একদম ক্যারেকটারে ঢুকে গিয়েছেন। “মেয়েছেলে বলবেন না। ও আমার বৌ। আপনার বাড়িতে ঝামেলা হলে আমি ঢুকতে যাই? তা হলে আপনি এখানে কথা বলছেন কেন?” ছেলেটি তৎক্ষণাৎ ব্যাকফুটে। এ দিকে অপরাজিতাও দমবেন না। বললেন, “কেন বলবে না? বৌ বলে এই ভাবে গায়ে হাত দেবে? আমি পুলিশ ডাকব। ৪৯৮এ করব!” অপরাজিতার চিৎকারে রীতিমতো ভিড় জমে গিয়েছে। সত্যি সত্যি ঋত্বিককে ধরে দু’ঘা দেবেন বলে ট্যাক্সি ড্রাইভারেরা প্রস্তুত।
তখনই আবার কাট।
“দাদা, কোনও সিরিয়ালের শ্যুটিং করছিলেন নাকি?” প্রশ্ন করেন এক পথচারী। দুই অভিনেতা হেসে বলেন, “না, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে আমাদের একটা ছবি। ছবিতে অপরাজিতা আর আমি এই ধরনের ‘মক-ক্রাইসিস’ তৈরি করি। এটাই দেখতে যে ঝামেলায় পড়লে লোকেরা উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে কি না। এখানে যা দেখলাম তা দেখে মনে হল কলকাতার এখনও হৃদয় আছে।”
পরের গন্তব্য অ্যাস্টর হোটেল। শুরু হল আড্ডা।
ব্যক্তিগত জীবনে শেষ কবে ঝগড়া করেছেন?
অপরাজিতা: আমাদের কোনও ঝগড়া মনে থাকে না।
ঋত্বিক: আজকাল ঝগড়া হয় কে ছেলের জন্য বেশি কাজ করছে তা নিয়ে।
কে করে?
ঋত্বিক: বুঝতেই পারছেন। আমি যে একদম কিছু করি না তা নয়, কিন্তু একজনকে তো লিডারশিপের রোলটা নিতে হবে।
আপনি লিডারশিপের রোলটা অপরাজিতাকে দিয়েছেন নাকি?
ঋত্বিক: হা হা হা। আসলে ও বেশি ভাল পারে ওই কাজগুলো।
অপরাজিতা: কিছু কাজ সম্পর্কে আমি বলি যেগুলো আমি পারি না। যেমন গ্যাস বুক করা।
মারকাটারি ঝগড়া হয়েছে কখনও?
অপরাজিতা: হ্যা।ঁ তবে ছেলেকে নিয়ে নয়।
কে মিটমাট করে?
অপরাজিতা: ঋত্বিক। ও যা ইচ্ছে বলে গেলে আমি গুম মেরে থাকি।
ঋত্বিক: ওটা ঝগড়ার শেষের দিকে। ও নিজেও বেশ ভাল ঝগড়া করতে পারে।
অপরাজিতা: আমার মা বলেন আমি নাকি উকিল হলে পারতাম।
ঋত্বিক: প্রথমে ভাবতাম গলার স্বরটা চড়ালেই কাজে দেবে। পরে দেখেছি সিরিয়াস ঝগড়ায় গলা তুলে লাভ নেই।
অপরাজিতা: কার জন্য ঝগড়াটা শুরু হচ্ছে সেটা জানা দরকার। আমাদের ক্ষেত্রে দেখেছি আশি ভাগ কেসেই ঋত্বিক দায়ী।
ঋত্বিক: তুই যা ইচ্ছে বল!
ছেলের দেড় বছর হতে চলল। এখনও তুই তুকারিটা পাল্টাবেন না?
ঋত্বিক: বিয়ের পরে কেউ কেউ বলত তুই তুকারিটা করলে গাঁইয়া শোনায়। কিন্তু আমরা পাল্টাইনি।
একই পেশায় থেকে ইগোর লড়াইটা অ্যাভয়েড করেন কী ভাবে?
অপরাজিতা: আমি ভাবতেই পারি না এই ইগোর সমস্যাটা কেন হয়! আমাদের তো হয় না। আমরা তো দু’জনে দু’জনকে ভালবাসি। সেখানে ইগো কোথায়? ওর আরও ভাল হলে আমার তো ভাল লাগবে।
ঋত্বিক: আমার ক্ষেত্রে এই ইগো নিয়ে ঝামেলাটা কোনও মানুষকে নিয়ে নেই।
অপরাজিতা আপনাকে বলেন না নির্লিপ্ত ভাবে না থাকতে?
ঋত্বিক: অনেকেই কিন্তু এ ভাবে থাকেন। আর আমি এরকম ভাবে সব থেকে ভাল থাকি।
অপরাজিতা: আমি ওঁকে বলব কী করে? আমি নিজেও তো এই রকম। কোনও দিন অভিনেত্রী হব ভাবিনি। ‘একদিন প্রতিদিন’ সিরিয়ালটা শুরু হল আর আমি ভাবলাম যে এটা তো বেশ ভাল লাগছে করতে। তার সঙ্গে টাকাও পাচ্ছি। আমি প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম, তোমার যদি পা মাটিতে না থাকে তা হলে তুমি শেষ। তুমি ওড়ো তাতে অসুবিধে নেই। কিন্তু একদিন তো সেই মাটিতে এসেই পড়তে হবে। জীবনের অনেক দিক থাকে। তার মধ্যে একটা হল কেরিয়ার।
ঋত্বিক: পেশার কারণে কিছু হিসেব করতে হতে পারে। আমি অভিনেতা হতেই চেয়েছিলাম। মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভের চাকরি ছেড়ে অভিনয় করতে আসি। সেই সময় স্ট্রাগল করতে গিয়ে আমি ইন্ডাস্ট্রির রিয়েলিটিটা খুব ভাল করে বুঝে গিয়েছিলাম।
স্ত্রী বলে কি যা তা করে যাবে নাকি! আমি সহ্য করব না। ৪৯৮এ করব — অপরাজিতা
এই রিয়েলিটিটা বুঝেও কেউ মাটিতে পা রেখে চলেন। আবার কেউ অতীতটা ভুলে গিয়ে উড়তে থাকেন...
ঋত্বিক: হ্যা।ঁ তবে আমি বোধ হয় একটু বেশি বুদ্ধিমান। (হা হা হা হা)। ইতিহাসে কাউকে এমন পাবে না যে সারাজীবন মগডালে চড়ে থাকবে।
অপরাজিতা: সচিনকে দেখুন। কী বিনয়ী!
‘কহানি’র পরে ইন্ডাস্ট্রিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে প্রচুর ছবিতে দেখা যেত। এখন নাকি ঋত্বিক দশা চলেছে। এর পরেও আপনারা গ্রাউন্ডেড?
অপরাজিতা: ব্রেক পেলেই আমরা বেড়াতে যাই। রিজার্ভেশন না পেয়েও আমরা বেনারস বেড়াতে চলে গিয়েছি। লোকাল ট্রেনে ফিরেছি।
কেউ বলেনি যে এই রকম করলে কেরিয়ারে উন্নতি হবে না?
ঋত্বিক: এটা তারকাদের সমস্যা। আমি নিজেকে তারকা মনে করি না।
আজকাল তো বলিউডে ভাল অভিনেতারাও তারকা। আপনি সেই রকম ভাবেন না কেন?
ঋত্বিক: আমার ভাবার ওপর কিছু নির্ভর করে না। আমি সিম্পল, নরমাল অভিনেতা। চেষ্টা করি যে কাজটা করছি সেটা যেন মজা নিয়ে করতে পারি। যদিও আমার কিছু কাজ নিজেরও ভাল লাগে না। নাম বলব না। অপরাজিতাকে বলেছি সেগুলো না দেখতে!
অপরাজিতা, এই রকম কখনও হয়েছে যে ঋত্বিকের কোনও কাজ আপনার একদম ভাল লাগেনি?
অপরাজিতা: তিন চার বছরে এই রকম হয়নি।
ঋত্বিক: আমি একবার একটা সিরিয়ালে সেরা সহশিল্পী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলাম। অপরাজিতার সেটা একদম পছন্দ হয়নি। কারণ ওর ভোটটা ছিল অন্য একজনের জন্য। ও এই একই সিরিয়ালে অভিনয় করত।
বিয়ের পর একসঙ্গে কাজ করার ডায়নামিক্সটা কতটা পাল্টেছে?
অপরাজিতা: কিচ্ছু পাল্টায়নি। বিয়ের পরে আমাদের প্রথম কাজ হল ‘এক ফালি রোদ’।
ঋত্বিক: ওর একটা স্পষ্ট ধারণা আছে অভিনয় নিয়ে। ওটা আমার অভিনয় সম্পর্কে ধারণাকে নারচার করতে সাহায্য করেছে।
এই ছবিতে যিশু আর অপরাজিতার প্রেমকে বেশ বাস্তবসম্মত ভাবেই দেখানো হয়েছে। আচ্ছা, বাস্তবে আপনারা প্রেমে পড়লেন কী ভাবে?
অপরাজিতা: অনেক বছর একে অপরকে চিনতাম। আস্তে আস্তে আরও বেশি করে জানলাম। তারপর ওয়ান ফাইন ডে...
আপনার বাড়ির সমস্যায় আমি ঢুকতে গিয়েছি? তা হলে আপনি কেন এখানে কথা বলছেন? — ঋত্বিক
বিয়েটা তো ভীষণ ‘লো-কি’ ছিল...
অপরাজিতা: এটা আমাদের জীবনের প্রতি অ্যাপ্রোচ। যখন প্রেগনেন্ট ছিলাম তখনও আমি সব কিছুর থেকে সরে গিয়েছিলাম। লোকে বলত, আরে, এটা তো একটা নরমাল ঘটনা। কিন্তু আমার কথা হল, আমি কিছু লুকোচ্ছি না। আমি একটা ছুটি নিয়েছিলাম। তখন নিজের মতো করে থাকতে চেয়েছিলাম। মনে করি না আমি বিশাল একটা কিছু। সেটা হতেও চাই না। জানি আমি সাধারণ একজন মানুষ...
এটা কি অ্যাম্বিশনের অভাব না চূড়ান্ত বাস্তববাদের প্রতিফলন?
ঋত্বিক: চূড়ান্ত বাস্তববাদ। এমনটা নয় যে আমি বলিউডে কাজ করতে চাই না। কিন্তু আমি জানি ওখানে আমার মতো বা আমার থেকে ভাল অনেকে আছে।
কখনও মনে হয়েছে ঋত্বিকের যতটা পাওয়া দরকার, ততটা পাননি?
ঋত্বিক: এটা অনেক অভিনেতার মূল ক্ষোভ। আমার যা হয়েছে তা নিয়ে খুশি।
অপরাজিতা: ঋত্বিকের জার্নিটা তো আমি জানি। আমি ওকে চিনতাম যখন ও জুনিয়র অর্টিস্ট। আর আমি তখন একটা সিরিয়ালের লিড অভিনেত্রী।
কোথায় লিড অভিনেত্রী আর কোথায় জুনিয়র আর্টিস্ট! তেরো বছর পর তাঁদের বিয়ে হল?
ঋত্বিক: (হাসি) জুনিয়র আর্টিস্ট ঠিক নয়, তবে অলমোস্ট সেটাই। হয়তো সিরিয়ালে শুধু একটা ‘উফ্’ বলতে হবে। সেটার শ্যুটিং হত রাত ১১টায়। কিন্তু কল টাইম সকাল ৭টায়। এটা সব সেক্টরে হয়ে থাকে। ঠিক যেগুলো হওয়ার কথা সেগুলো পাওয়া যায় না। সেটা না পাওয়ার জন্য একটা পথ হল বিপ্লব করা। আমি অন্য পথটা নিই।
কে প্রথম বিয়ের কথা পেড়েছিলেন?
ঋত্বিক: একটা সময় এসেছিল, যখন আমরা বুঝেছিলাম যে বিয়ে করবই।
ইন্ডাস্ট্রির কেউ জানতেন না?
ঋত্বিক: দু’জন বন্ধু জানত খানিকটা।
অপরাজিতা: গম্ভীর থাকতাম। আমরা একসঙ্গে সিরিয়ালে সেভাবে কাজ করিনি। সেভাবে ডেট-ও করিনি।
প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রাইভেসি রক্ষা করার জন্য কী টিপস দেবেন?
অপরাজিতা: প্রথম থেকেই কম কথা বলতে বলব।
ঋত্বিক: আমি অনেক কথা বলি। কিন্তু এমন কথা যার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্ক নেই। ফুটবল-টুটবল, সিনেমা-টিনেমা নিয়ে কথায় ‘বিজি’ করে রাখতাম। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনাতে আপত্তি আছে।
রাস্তার মধ্যে মেয়েছেলের গায়ে এভাবে হাত তুলছেন? পুলিশ ডাকব — এক ট্যাক্সি ড্রাইভার
এত অ্যালার্জি কেন? লোকে তো কুকুর হারালে তার গল্প করে, জন্মদিনে পার্টি নিয়ে পেজ থ্রি ইভেন্ট করে...
ঋত্বিক: আমরা হয়তো ও সব খবর পড়তে নিজেরাই পছন্দ করি না। তাই আমিও চাই না যে, আমাদের সম্পর্কে এ রকম খবর কেউ পড়ুক।
অপরাজিতা যখন দ্বিতীয়বার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন চারপাশের মানুষ কী বলতে পারে সেটা মাথায় ছিল?
ঋত্বিক: আমি কোনও দিন সামাজিক নিয়ম মানতে হবে বলে মানিনি। লোকে কী ভাবছে সেটা ম্যাটার করে না।
অপরাজিতা: আমি মনে করি ইট’স ওয়ান লাইফ। সব্বার ভাল থাকার অধিকার রয়েছে।
কিন্তু এমনও তো অনেক মানুষ আছেন যাঁরা সেভাবে ভাবতে শেখেননি। তাঁদের সঙ্গে ডিল করাটা কতটা শক্ত ছিল?
অপরাজিতা: খুব শক্ত। অভিনেত্রী বলেই একটু দূরের পরিবারের কাছে আমি মার্কড হয়েছি। আমার জীবনে কী হচ্ছিল সেটা কেউ জানত না। আমি সেটা চাইওনি। থিংস ওয়ার নট ওয়ার্কিং কিন্তু সেটার কারণটা আমি কাউকে জানাতে চাইনি। বিয়ে ভাঙার সময়ও মাকে বলেছিলাম কারণগুলো কাউকে না বলতে।
ঋত্বিক কি আগেই সব জানতেন?
অপরাজিতা: অনেক বছর বন্ধু ছিলাম। আমি নিজের বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম। আই ওয়ান্টেড ইট টু ওয়ার্ক। ঋত্বিক বন্ধু হলেও ওকে সব বলিনি। একটা দরজা বন্ধ করা ছিল। যখন ব্যাপারটা সিরিয়াস জায়গায় যাচ্ছিল তখন মনে হয়, ওর সব জানা দরকার। ঋত্বিক এবং এই পরিবারের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন হ্যাজ বিন টু গুড। আজ অবধি আমার অতীত নিয়ে কোনও কথা এই পরিবারে আমি শুনিনি।
অনেক মেয়ে ডিভোর্সের পর আবার বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে পারেন না...
অপরাজিতা: আমারও অনেক সময় লেগেছিল। একদিন সকালে আমার মনে হল একদিন তো আমি পট করে মরে যাব। তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম কেন আমি এরকম করছি। কেন বাঁচব না? কেন ভাবব না? তবে এটা নয় যে একটা সম্পর্ক থেকে বেরোনোর জন্য আমি ঋত্বিকের হাত ধরেছিলাম। আমার ব্যক্তিগত জীবনে একটা ঘটনা হয়েছিল। ঋত্বিক ওয়াজ দেয়ার সামহোয়্যার। ওর কারণে বিয়েটা ভাঙেনি।
বিয়ের পর আপনি কি পদবি লেখেন- অপরাজিতা ঘোষ দাস নাকি অপরাজিতা ঘোষ দাস চক্রবর্তী?
অপরাজিতা: শুধু অপরাজিতা।
বিয়ের পরে কোনও কিছু দু’জনে-দু’জনের জন্য পাল্টেছেন?
অপরাজিতা: ঋত্বিক ভীষণ রেগে যেত আগে। মোবাইল ছুড়েছে। আলমারি ভেঙেছে। বোনের হাত কেটে দিয়েছে।
ঋত্বিক: ওটা খুব ছোটবেলায়।
অপরাজিতা: প্রচণ্ড চিৎকার করত। এখন একদম পাল্টে গিয়েছে।
ঋত্বিক: ও চেঞ্জ না হলেই ভাল। তবে অপরাজিতা একটু ভিক্টোরিয়ান। অদ্ভুত পবিত্রতা দিয়ে পৃথিবীকে বিচার করে। ওটা করা উচিত নয়। একটা গল্প আছে না যে, ভিক্টোরিয়ান আমলে পিয়ানোর পায়ায় কাপড় পরিয়ে রাখতে বলত...
অপরাজিতা: আচ্ছা, বলুন তো একটা লোক বেনারসের ঘাটে জাঙিয়া পরে এক্সারসাইজ করছে...
ঋত্বিক: ওটাই তো এক্সারসাইজ করার পোশাক। (হেসে) ও বলবে, এ কি! লোকে দেখছে!
অপরাজিতা: এক ঘণ্টা পরে যদি দেখি লোকটা একই জিনিস করে যাচ্ছে...
ঋত্বিক: (হাসি) ওটা বেনারস। ওখানে সকালে ল্যাঙ্গোট পরে ওভাবে লোকে এক্সারসাইজ করে।
অপরাজিতা: কে কোথায় কী পরবে সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। এক ঘণ্টা পরে বললাম ‘চল, অন্য ঘাটে যাই।’ শুনে ও বলবে আমি ভিক্টোরিয়ান। এখন আমি খুব একটা শক্ড হই না। আগে হতাম। এখন বুঝি যে, অনেক কিছু হয় যেটা বুঝতে হবে না।
ঋত্বিক: ওকে বোঝাতে পারি না যে মানুষের পবিত্র হওয়ার দায় নেই।
অপরাজিতা: আমার একটু মরাল কচকচানি আছে।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি কী করে মানিয়ে চলেন?
ঋত্বিক: সেটাই তো কথা। ও রকম রিঅ্যাক্ট করলে তো রোজ শকড্ হতে হবে। এখন ও আর মুখে বলে না। তবে আমার ধারণা, ও মনে মনে ভাবে, ‘ইস্, ও রকম করল?’
অপরাজিতা, আপনি আবার কাজ করা শুরু করেছেন। বাচ্চা ছোট বলে কি কাজের সময় নিয়ে বাছবিচার আছে?
অপরাজিতা: যখন কাজ করছি, তখন আমি পুরোপুরি পেশাদার।
ঋত্বিক, কোন কাজটা করবেন সেটা কি নিজেরা আলোচনা করেন?
ঋত্বিক: কী করছি সেটা বলি। কিন্তু করব কি না সেটা নিজেই সিদ্ধান্ত নিই। এই ছবিটা কেন করলি সেটা অপরাজিতা বলেনি তবে এটা করে আরও টাকা নিতে পারতিস সেটা বলেছে। আর আমি সেটায় একমত হয়েছি।
কোনও পরিচালক আছেন যাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রয়ে গিয়েছে?
ঋত্বিক: সব্বার সঙ্গেই কাজ করতে চাই। একটাই শর্ত, কাজটা যেন আমাকে উত্তেজিত করে। শুধু পরিচিত নাম নয়, যাঁদের নাম জানি না তাঁদেরও ভাল স্ক্রিপ্ট থাকলে কাজ করতে চাইব। যেমন আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের ‘আসা যাওয়ার মাঝে’। ভেনিসে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ছবিটা। আজ আদিত্য তো ইরফানকেও ছবি অফার করতে পারে। কিন্তু আমি যখন ওর ছবিটা করেছিলাম তখন ওকে কেউ চিনত না। একদম ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাজ। কোনও সংলাপ নেই সেখানে। সিনেমার ভাষাটা অন্যরকম। সামনে মুক্তি পাবে ‘অনুব্রত, ভাল আছো?’ আর ‘ডাকের সাজ’। দু’টোতে কাজ করে ভাল লেগেছে। শ্যুটিং শুরু করব মৈনাক ভৌমিকের ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’য়ের। ওখানে আমি এক পরিচালকের ভূমিকায়।
কোনও পরিচালককে নকল করবেন?
ঋত্বিক: (হাসি) কাউকে আলাদা করে নয়।
এত দিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। বাড়িতে আগুন লাগলে ইন্ডাস্ট্রির কাকে প্রথম ফোনটা করবেন?
ঋত্বিক: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। যদিও এখন ও ইন্ডাস্ট্রির মানুষ, আমি ওকে বন্ধু হিসেবেই ফোন করব।
অপরাজিতা: আমি তিনটে নাম বলি, প্লিজ? প্রদীপ্ত তো আছেই, তার সঙ্গে অতনু ঘোষ আর অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
দর্শক হিসেবে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু বলবেন?
ঋত্বিক: বাংলা ইন্ডাস্ট্রি একটা বাঁক নিয়েছে। এখন সেকেন্ড বাঁকটা নেওয়ার সময় এসেছে। চুড়োয় উঠতে গেলে আমার মনে হয় আবার একটা বাঁক নেওয়া দরকার। সেটার কাজটা শুরু হয়েছে। এই যেমন ‘এক ফালি রোদ’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ বা ‘আসা যাওয়ার মাঝে’। এ রকম আরও কাজ এখানে হওয়া দরকার।
শেষ করব একটা মিল-অমিলের কুইজ দিয়ে। কার কোনটা পছন্দ বলুন।
অমিতাভ বচ্চন না নাসিরুদ্দিন শাহ?
ঋত্বিক: নাসিরুদ্দিন শাহ।
অপরাজিতা: নাসিরুদ্দিন শাহ।
রেখা না শাবানা আজমি?
ঋত্বিক: শাবানা আজমি।
অপরাজিতা: শাবানা আজমি।
সুরকার বিশাল-শেখর না সুরকার বিশাল ভরদ্বাজ?
ঋত্বিক: বিশাল ভরদ্বাজ।
অপরাজিতা: বিশাল ভরদ্বাজ।
অনুরাগ কশ্যপ না সঞ্জয় লীলা বনশালি?
ঋত্বিক আর অপরাজিতা: অনুরাগ। দেখছেন তো ঝগড়াটা পুরোটাই ফালতু। আসলে আমাদের কত মিল! (হাসি)
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল