কলকাতার শিমেল-রা

কেউ বলে মগা। কেউ ডাকে ছক্কা। শহরের প্রধান সড়কগুলোয় মাঝে মাঝেই দেখা মেলে এঁদের। দামি, বিদেশি গাড়িও থাকে এ সব শিমেলদের তুলে নেওয়ার জন্য। কারা এঁরা? খোঁজ নিলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।কেউ বলে মগা। কেউ ডাকে ছক্কা। শহরের প্রধান সড়কগুলোয় মাঝে মাঝেই দেখা মেলে এঁদের। দামি, বিদেশি গাড়িও থাকে এ সব শিমেলদের তুলে নেওয়ার জন্য। কারা এঁরা? খোঁজ নিলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share:

‘দেহান্তর মনান্তর’ নাটকের এক দৃশ্যে ছবি: সন্দীপ কুমার।

১) আমি ঐন্দ্রিলা। আমি রিয়েল শিমেল। সত্যিকারের স্তন আছে আমার। সাইজ **

Advertisement

২) আমি বনি। এটা আমার ডাকনাম। আসল নাম সোনম। আমি এক জন শিক্ষিত শিমেল। সারাক্ষণ সেক্স আমার পছন্দ। আর তার জন্য নিজের একটা সেফ জায়গাও আছে...

৩) আমি রিয়া। আমি শিমেল। নানা ধরনের সেক্সে আমার আপত্তি নেই। এমনকী গ্রুপ বিনোদনের জন্যও আমি রাজি। সঙ্গে আছে দুষ্টু বৌদিরাও...

Advertisement

এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখে যদি ভেবে থাকেন এমন ভাষায় কারা নিজেদের পণ্য করছেন, তা হলে আরও একটা কথাও জেনে রাখা দরকার। এই সব কটা বিজ্ঞাপনই কলকাতার শিমেলদের দেওয়া।

শিমেল।

শব্দটার সঙ্গে পরিচয় আছে কি?

ব্যাংককে এঁরা ‘লেডি বয়’ নামেও পরিচিত। জাপানে এঁদের বলে ‘নিউ হাফ’। বা ‘হাফু’। উইকিপিডিয়ার ভাষায় এই রূপান্তরকামীদের দেহে স্তনের সঙ্গে থাকে পুরুষ যৌনাঙ্গও।

ঐন্দ্রিলা, বনি, রিয়ার মতো ভুরি ভুরি শিমেলরা পুজোর আগে কলকাতায় এখন ‘হট প্রপার্টি’। কেউ লেক টাউন, কেউ সল্ট লেক, কেউ বা আলিপুরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন। কেউ বা সেই রকম খদ্দের পেলে বিমান ধরে চলে যাচ্ছেন মুম্বইতে। ওখানে ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট করে মোটা টাকা রোজগার করে আবার ফিরে আসছেন এই শহরে।

সাদার্ন অ্যাভিনিউ, ফ্রিস্কুল স্ট্রিট বা এলগিন রোডে খুব যে বেশি দাঁড়াতে হয় এঁদের, তা নয়। ‘ফেসবুক’ ‘ট্যুইটার’ ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ জমানায় এঁদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়ে যায় ফোনে। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। সেখানে ডেটিং সাইট তো রয়েইছে। ওখানেই উত্তেজক ছবি সহ নিজেদের প্রোফাইল আপলোড করে দেন তাঁরা। কেউ নিপুণ ভাবে ব্যাখ্যা করেন নিজেদের সিলিকন স্তন-কে। কেউ আবার ‘বিডিএসএম’য়ের হাতছানি দেন। বলেন হিংস্র মিস্ট্রেস হতে তিনি প্রস্তুত। আর সবের সঙ্গে জানাতে ভোলেন না তাঁদের মোবাইল নম্বরও। শুধু একটা কলের অপেক্ষা। তার পর বিনোদনের দায়িত্ব তাঁদের ওপর।

ছবি: কৌশিক সরকার।

কেন এই পেশায় এলাম

পাঁচ বছর ধরে এই পেশায় আছেন ২৬ বছরের এই শিমেল। নাম বলছেন পামেলা বসু। কলেজে পড়াকালীন এক বন্ধুর মাধ্যমেই এই পেশায় আসা। “ওর সঙ্গে গিয়েছিলাম কলকাতার একটা গে পার্টিতে। সেজেগুজে যাই সেখানে। ওখানে গিয়ে এক তিরিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষের সঙ্গে আলাপ। সম্পর্ক হয়। তার পর ভাবি, কেমন হয় যদি আস্তে আস্তে এই ধরনের সম্পর্ককে আমি আমার প্রফেশনে কাজে লাগাই? আমি তো কোনও চুরি-জোচ্চুরি করছি না। সাময়িক সুখ দিচ্ছি একজন পুরুষকে। আর তার বিনিময়ে টাকা রোজগার করছি। নিজেকে বলি যে হয়তো এটা করার জন্যই ভগবান আমাকে এই ভাবে তৈরি করেছেন,” বলছেন পামেলা।

ছিলাম পুরুষ। হয়ে গেলাম নারী

অনূর্ধ্ব কুড়ির মোহিনী (নাম পরিবর্তিত) ‘বাজে সঙ্গে’ পড়ে এসেছিলেন এই পেশায়। প্রথম যে দিন ছেলের সাজ ছেড়ে শিমেল হয়ে ক্লায়েন্টের কাছে যান, সে দিন একদম রূপ বদলে ফেলেন। মাথায় পড়ে নেন সিল্কি একটা উইগ। চোখে নীল লেন্স। পায়ে ফিশনেট স্টকিংস। সঙ্গে হটপ্যান্টস। শর্ট হান্টার। ছেলে হিসেবে যে নামে পরিচিত ছিলেন তা পাল্টে দিয়ে এক নারীর নাম নিয়ে আসেন এই পেশায়। কলকাতার এক কফিশপে বসে কথা বলতে বলতে দেখান নিজের শিমেল রূপের ছবি। দুটো ছবির মধ্যে একদম আকাশ পাতাল তফাত। কফিশপের ছেলেটি দেখতে নিষ্পাপ। ছোট করে চুল কাটা। আর মোবাইল ক্যামেরাতে তোলা তাঁরই শিমেল অবতার লাস্যময়ী এক নারী। চোখের মধ্যে নেশার মাদকতা। “ফিমেল যৌনকর্মীদের থেকে শিমেলদের চাহিদা অনেক বেশি। যখন প্রথম এই পেশায় আসি এক রাতে সাত হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পেতাম। কেউ কেউ কুড়ি হাজার পর্যন্তও পেয়ে থাকেন। সহজে টাকা রোজগার করার লোভটা অনেকেই সামলাতে পারেন না,” বলেন মোহিনী।

নিজে খুব বেশি ফিজিকাল সম্পর্কে না গেলেও এমন অনেক বন্ধুদের কথা জানেন যাঁরা রোজ রাত্রে নতুন শয্যাসঙ্গী বেছে নেন। “সল্ট লেকের একটা রেস্তোরাঁ, গড়িয়াহাট মোর, এলগিন রোড, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, শিয়ালদহ - এই সব জায়গায় শিমেলদের দেখা যায়। সেখানে বিএমডব্লু, স্করপিও নিয়ে ক্লায়েন্টরা আসে। দরদাম চলে। ‘নো মানি, নো হানি’ পন্থাতে বিশ্বাসী এই শিমেলরা। দরদামের পরে গাড়িতে উঠে পড়ে ওরা। কখনও চলে যাওয়া হয় হোটেলে। সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টে। কখনও বা গাড়িতেই কাজ হয়ে যায়,’’ মোহিনী জানান।

কাজের আগে বা শেষে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। মোহিনীর দাবি, এক মাসে একটা স্ট্রেট মেয়ে যা রোজগার করতে পারে না, সেটা শিমেলরা এক রাতে কামিয়ে ফেলে। তবে টাকা নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে ঝামেলাও কম হয় না। “কাজের পরে হয়তো পুলিশের ভয় দেখাল। বা বন্দুক দেখিয়ে মোবাইল নিয়ে নিল,” বলছেন মোহিনী।

সব শিমেলরা কি এই পেশায়

সব শিমেলরাই এই পেশা বেছে নেন না। যেমন ঋতুরাজ। বাংলা অনার্সের ছাত্রী তিনি। নাচ, নাটক নিয়েই থাকেন। ছেলে হয়ে জন্মালেও ঋতুরাজ মনেপ্রাণে নিজেকে মেয়ে মনে করেন। আর তাই শুরু করেছেন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। “আমি এই পেশায় নেই। কিন্তু আমাকেও কম টিটকিরি শুনতে হয় না। এই তো মঙ্গলবার রবীন্দ্রসদনের সামনে ট্যাক্সি থেকে নামার সময় ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি কিছু টাকা কম পড়ছে। অমনি ট্যাক্সিচালক ইশারা করে শুধু বললেন, ‘ভাড়ার কথা ভুলে যান। একটু অন্ধকারে আমার সঙ্গে আসুন!’” বলছেন তিনি।

ঋতুরাজের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই পেশায়। “একজনের বাবা সফ্টওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করেন। মা গায়িকা। বাড়িতে কেউ না থাকলে আমার এই বন্ধু তো ওর বাবার অফিস কলিগদের সঙ্গেও সেক্স করে। ওর কাছে ক্লায়েন্টের বয়সটা কোনও ফ্যাক্টরই নয়। টাকা পেলেই ও রাজি,” বলেন ঋতুরাজ। আর এক জন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী। “ওর ক্রেজটা টাকা নয়। যৌন মিলনেই ওর তৃপ্তি। এখন কলকাতায় উভকামী লোকের সংখ্যা প্রচুর। হয়তো দেখলেন বাড়িতে বৌ আছে কিন্তু শিমেলের সঙ্গে যৌনমিলনে গিয়েই সে খুঁজছে তৃপ্তি। শুধু মাত্র শরীরের রিফ্রেশমেন্ট চাই ওদের! শিমেলরাও অনেক সময় এগিয়ে যায়। মোবাইল স্ক্রিনে নিজেদের নাম্বারটা ফ্ল্যাশ করে। তাই তো এত ওপেনলি নিজেদের বিজ্ঞাপন করে। রোজ ২০০ করে পোস্ট হয় ইন্টারনেটে। দাড়িগোঁফের আড়ালে এ শহরে অনেক শিমেল রয়েছে এখানে,” বলছেন ঋতুরাজ।

গ্রামে গ্রামে শিমেল

শুধু শহরে নয়, গ্রামেও আজকাল শিমেলরা দারুণ জনপ্রিয়। কলকাতার মতো সেখানেও চল হল শিমেলদের সঙ্গে ওয়েবক্যামে ভিডিয়ো চ্যাট করা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রূপান্তরকামী জানাচ্ছেন, “ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে নগ্ন শরীর দেখানোর চল শুরু হয়েছে গ্রামেও। কিছু ডেটিং সাইট আছে। ভিডিয়ো কনফারেন্স হয় সেখানে। অনেকটা স্কাইপের মতো। বর্ধমান, রানিগঞ্জেও এ সব খুবই হয়। শক্তিগড় সাইডেও আছে। বর্ধমান স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তাটা শিমেলদের পিক-আপ জয়েন্ট। এমনকী অনেক শিক্ষিত মানুষকেও ওখানে যেতে দেখেছি। গ্রামের দিকে রেট-টা কম। হয়তো রাতপ্রতি ৫০০ টাকা।” অল্পবয়সি ছেলেরা এদের সঙ্গ খোঁজে। তবে পয়সা বেশি দেয় মাঝবয়সিরা। আর নিষিদ্ধ সম্পর্কের জন্য ক্লায়েন্টদের কাছে এরা আদর্শ। “মহিলা সেক্স-ওয়ার্কারদের ওপর অত্যাচার করলে অনেকেই নৈতিক ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু শিমেলদের ক্ষেত্রে তা হবে না। কারণ স্বীকৃতির অভাব। ভায়োলেন্সটা বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। এমনও শোনা যায় যে ক্লায়েন্টরা নির্দেশ দেন যে সঙ্গমের সময় এরা যেন গালাগালি করে। সেটাই পুরুষদের টার্ন-অন ফ্যাক্টর!” বলছেন রূপান্তরিত নারী অধ্যাপক ডা. মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শিমেল হওয়া সহজ নয়

যাঁরা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করেননি, তাঁরা শরীরের এ রকম রূপান্তর করেন কী করে? “কাপড়-জামার মধ্যে কিছু কায়দা করা যায়। হোলির সময় রঙের যে বেলুন ছোড়া হয়, সেগুলোকে ইনার-গারমেন্টসের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হয়। ওগুলোকে বলা হয় ইলু। ওই ইলু দিয়েও এ রকম একটা ইলিউশন তৈরি করা যায়!” বলছেন রূপান্তরকামী অপলা। যাঁরা শিমেলদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তাঁরা নাকি নিজেদের আকর্ষণীয় রাখার জন্য প্রচুর খরচও করেন। “কলকাতার এক-একজন সেলিব্রিটি শিমেল আছেন যাঁরা প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করেছেন নিজেদের ওপর। সিলিকন সার্জারি, নাক-ঠোঁটের সার্জারি। এখন ত্বকের সার্জারিটারও খুব চাহিদা। ‘বেবি স্কিন’ করায় অনেকে যাতে ত্বক তুলতুলে হয়ে যায়,” বলছেন মোহিনী। তবে এ দেশের রেজিস্টার্ড ডাক্তাররা নাকি শিমেল তৈরি করতে রাজি হন না, এমনটাই দাবি করছেন মানবী। মোহিনীর ভাষায় শিমেলরা নাকি আজকাল কলকাতার সেলিব্রিটি দুনিয়ায় নতুন চমক। “পুজোর সময় ম্যাডক্স স্কোয়্যারে প্রচুর শিমেল আড্ডা দেন। ওঁরা ওঁদের মতো করে সেলিব্রিটি। সব্বার কৌতূহল একটাই। একটা ছেলে হয়েও মেয়ের মতো এত সুন্দর কী ভাবে ওদের দেখতে লাগে?” বলেন মোহিনী।

শোষণ চলছে চলবে

টাকা রোজগার হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এঁদের এমন অনেকের অভিজ্ঞতা শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। অপলার জীবনে ছোট থেকেই শোষণ চলছে। “তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। খেলার মাঠে পাড়ার দাদারা আমার ওপর অত্যাচার করত।” বলেন অপলা। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই শোষণটা বাড়তে থাকে। “আমি একাকিত্বে ভুগতাম। পুরুষের মধ্যে আমি বন্ধুত্ব খুঁজতাম। কিন্তু ওরা আমায় অত্যাচার করে আনন্দ পেত। আমি যেন একটা ধরমশালা হয়ে গিয়েছিলাম,” বলছেন অপলা। কলকাতার এক নাম করা কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলের সঙ্গে অপলার সাত মাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। “ও জানত যে আমি রূপান্তরকামী। কিছু মাস যেতে বুঝতে পারলাম যে ও আমার সঙ্গ চাইত শুধু মাত্র সেক্সের জন্য। শেষে একটা সময় এমন এসেছিল যখন আমি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। তখন যদি মানবীদি আমাকে আশ্রয় না দিতেন, তা হলে হয়তো আজ আমি আপনার সঙ্গে এ ভাবে বসে কথা বলতে পারতাম না,” স্বীকার করছেন অপলা। মোহিনীর গলা ধরে আসে যখন নিজের শোষণের গল্প বলতে শুরু করেন। “কেউ বলে মগা। কেউ ডাকে ছক্কা। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না। পুলিশের তাড়া খেয়েছি। ওরা নিজেরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই থাকে। আমার এক শিমেল বন্ধু অত্যাচারিত হতে হতে এখন একদম পাথর হয়ে গিয়েছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে, যে যেখানে সেখানে জামাকাপড় খুলে ফেলে দেয়,” বলছেন মোহিনী। ঋতুরাজের পরিচিত এক শিমেল রিয়্যালিটি শো-তে অংশ নেওয়ার জন্য আপস করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন! “বলা হয়েছিল শিমেল হয়ে রিয়েলিটি শো-তে তো আর এমনি এমনি অংশ নেওয়া যাবে না। আপস করতে হবে,” বলেন ঋতুরাজ।

সব ক্লায়েন্ট যদিও এক রকম নয়

প্রথম বার যখন পামেলা এই পেশায় এসেছিলেন, তখন বয়স অল্প। “সব সময় যে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে, এমনটাও নয়। একবার কলকাতা শহরের এক নামকরা অভিনেতা আমার কাছে এসেছিল। গে-সাইটে আলাপ হয়েছিল আমাদের। ওর গার্লফ্রেন্ড ছিল। আমাকে চুমু খেয়েছিল। তা ছাড়া আর কিছু করেনি। এখন আমরা ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছি। এ রকম অনেকেই আসেন যাঁরা আমাদের সম্পর্কে জানতে চান। শারীরিক সম্পর্কটাই তাঁদের একমাত্র প্রাপ্তি নয়,” বলছেন পামেলা।

প্রতিযোগিতা আছে মেয়েদের সঙ্গে

চাহিদা আর জোগানের ব্যাপার যেখানে, সেখানে প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। মোহিনী স্বীকার করছেন এই পেশায় এখন প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। সৌন্দর্য নিয়ে প্রতিযোগিতা, ক্লায়েন্টদের সংখ্যা নিয়ে প্রতিযোগিতা। “ধরুন সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট না করেও যদি আমার কাছে বেশি সংখ্যক ক্লায়েন্ট আসে, তা হলে কিছু শিমেল গোঁসা করবে। কেউ চায় না নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিতে। লোক ফিট করে ব্লেড মেরে দেয়! চুল কেটে দেয়!” বলছেন মোহিনী। মারামারি রক্তপাতের ঘটনাও রয়েছে। ঋতুরাজ বলছেন স্ট্রেট মেয়েরাই নাকি অনেক সময় তাঁকে বিদ্রুপ করে চলেন। “অনেক সময় দেখেছি মেয়েরা আমাদের এড়িয়ে যায়। এমনকী চেষ্টা করে যাতে তাদের বয়ফ্রেন্ডরা আমাদের সঙ্গে না মেশে!” বলছেন ঋতুরাজ।

প্রতিযোগিতা রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে বার্ধক্যের ভয়ও। চিরযৌবনা থাকার সাধ থাকলেও বাস্তবে তা হওয়া সম্ভব নয়। আজ যারা হাজার হাজার টাকা রোজগার করছেন এই পেশায় এসে, বছর দশেক পরে কী করবেন তাঁরা? “চিরবসন্ত হয়তো থাকবে না। তবে একটা নিজস্ব কাস্টমার বেস তৈরি করেছি। বয়স হয়ে গেলে নিজেই এসকর্ট এজেন্সি খুলব। সমাজ আমাকে কী বলল, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। সব টাকাই যে নিজের লাইফস্টাইলের ওপর খরচ করি, তা নয়। অনাথ আশ্রমেও দান করি,” বলছেন পামেলা।

কলকাতা কি পাল্টে যাচ্ছে?

এই যে কলকাতায় এত সংখ্যক শিমেল বাড়ছে, তার কারণটা কী? এর উত্তরে যাদবপুর বিশ্ববিদালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান রুবি সেন বলছেন, “বিশ্বায়নের যুগে এখন ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ প্রাধান্য পাচ্ছে। শিমেলরাও চাইছে সবার মতো সুখে থাকতে। আনন্দে থাকতে। সমাজের স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুতির ফলে এদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাটা নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছে। সেখানে আইনের বন্ধনটা আর বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।” মানবী বলছেন, “এটা বিশ্বায়নের হতাশার ফল। আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের রমরমার জন্য আজকাল এ সব হচ্ছে।” নাট্য অ্যাকাডেমিতে এই মঙ্গলবার রূপান্তরকামীদের নিয়ে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালনা করেছেন ‘দেহান্তর মনান্তর’। বলছেন, “সারা পৃথিবী জুড়েই শিমেলরা সামনে আসছে। কলকাতাতেও একই ব্যাপার। এ নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। মুখ লুকোনোরও কিছু নেই। ওরা আমাদের সমাজেরই একটা অঙ্গ। ওদের সঙ্গে নাটক করে বুঝেছি যে এই নিয়ে গেল গেল রব তোলার কিছু হয়নি। যত দিন না সমাজে আমরা ওদের একটা সুস্থ জায়গা দিতে পারছি, তত দিন এটা চলতেই থাকবে।”

ভ্রাম্যমাণ ওয়াকিং স্ট্রিট হতে হয়তো এখনও ঢের দেরি আছে। তবে যৌনসড়কে যে কলকাতা এখন সাবালক হতে ভয় পাচ্ছে না, সেটা নিয়ে আর সন্দেহ নেই।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement