ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সকলেই আলোচনা-সমালোচনায় মুখর থাকেন। কেউ আবার ব্যস্ত আকাশছোঁয়া সেনসেক্স নিয়ে গরমাগরম আলোচনায়। সারা পৃথিবীর নজর এখন ভারতের রাজনীতি আর অর্থনীতির দিকে।
আমাদের অফিসের পরিবেশেও মাঝে মধ্যেই রাজনীতি উঁকি দেয়। আর তারই জাঁতাকলে থেকে কাজ চালিয়ে যেতে হয় আমাদের। জীবিকার নিয়মই এই রকম। আজকাল কাজের জায়গায় যে ভাবে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে, আগে এমনটা ছিল না। ইঁদুরদৌড়ের নিয়মটাই এমন, উন্নতি করতে হলে, একজনকে ছাপিয়ে আর এক জনকে উপরে উঠতে হলে কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে নিজের ঢাক এমন ভাবে পেটাতে হয় যাতে সহকর্মীর কাজের গুরুত্ব কম মনে হয়। এই নেতিবাচক প্রচারের মধ্যে দিয়ে গেলেই যেন কর্তৃপক্ষ বুঝবে একজন কর্মী কতটা উন্নতির যোগ্য। কতটাই বা তার অতিরিক্ত মূল্যায়ন হওয়া উচিত।
অফিসে পারফর্ম্যান্স প্রমাণ করার ক্ষেত্রে যদি দেখেন সহকর্মীরা আপনাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন কিছুতেই পেছনের সারিতে মানিয়ে নেবেন না। তার বদলে সঠিক পদক্ষেপ করুন নিজেকে প্রমাণ করার। আপনি হয়তো বলবেন এটা বলা যতটা সোজা, করা ততটাই কঠিন। আমি যেটা বলছি, সহকর্মীদের সঙ্গে টিট ফর ট্যাট আচরণ একেবারেই করবেন না। সোজা কথা বসের কাছে যে সহকর্মী আপনাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন, তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক নালিশ করবেন না। এ সব করার বদলে মন দিয়ে নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা করার চেষ্টা করুন। আপনার সমস্যাকে সরাতে কাজের প্রতি মনোযোগ-তত্পরতাই হবে সমস্যা দূর করার সবচেয়ে বড় উদ্ভাবনী শক্তি। পড়ে থাকা কোনও প্রজেক্টের কাজ নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারেন। তৈরি করতে পারেন বিপণনের নতুন স্ট্র্যাটেজি। দেখবেন পরিস্থিতি নাটকীয় ভাবে বদলে গিয়েছে। দেখবেন আপনার বস আপনাকে নতুন ভাবে বিচার করা শুরু করেছেন। পরনিন্দা-পরচর্চা করবেন না।
আপনি যদি গসিপ শুরু করেন সহকর্মীরা সেটা কোনও না কোনও ভাবে জানতেই পারবেন। তাতে সম্পর্ক আরও খারাপ হবে। প্রত্যেক ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া আছে। ব্যাপারটা নিয়ে তাই গভীরে গিয়ে ভাবুন। আলোচনায় যাবেন না। বসের কাছে সহকর্মীর প্রশংসা করলে কখনও নিজে ছোট হবেন না। তাতে বস আপনাকে সসম্মানের চোখেই দেখবেন। আর যে সব সহকর্মীর প্রশংসা করলেন দেখবেন তাঁদেরও আস্তে আস্তে আপনার প্রতি দৃৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন তাঁরা।
পরামর্শ নিতে পারেন মাঝারি মাপের এক্সিকিউটিভদের থেকেও। আমি একজন এই রকমই মহিলা এক্সিকিউটিভকে চিনতাম। একটি পুরুষপ্রধান অফিসে কাজ করায় তাঁকে অনেক রকম প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর কাজ করেই তিনি বিরাট এক প্রমোশন পেলেন। লোকে বলতে লাগল কোম্পানির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অ্যাফেয়ার থাকার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। মহিলা সাঙ্ঘাতিক প্রতিভাশালী এবং সৃজনশীল স্বভাবের ছিলেন। যে উন্নতি তাঁর হয়েছিল, সেটা প্রাপ্যই ছিল। নিজের অধিকারে প্রতিষ্ঠা এসেছিল। কিন্তু হিংসুটে পুরুষেরা ওঁর উত্থানকে হিংসে করেছেন। এই পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ মহিলা চাকরিই ছেড়ে দিলেন। এখন তিনি আরও বড় চাকরি করেন। কিন্তু নিজের উন্নতির ওই কলঙ্কিত অধ্যায় তিনি আজও ভুলতে পারেননি। তা হলেও এই পরিস্থিতির সঙ্গে আপস না করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চাকরি ছেড়েছিলেন বলেই ঝুঁকি নিয়ে নতুন কাজে যোগ দিতে পেরেছিলেন।
অফিস পলিটিক্সের শিকার হয়ে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন? সেটাও ভুল। যদি চাকরি ছাড়েনও, তা হলে নতুন জায়গায় পুরনো সংস্থার কর্মীদের নিন্দে করবেন না। তাতে নতুন সহকর্মীরা আপনাকে নিন্দুক বা ব্যাক-বাইটিং করা কর্মী ভাবতে পারেন। নতুন চাকরিতে যোগ দিয়ে যদি রাজনীতির শিকার না হতে চান তা হলে শুধু এইটুকুই বলবেন যে আগের কোম্পানি ছেড়ে এসেছেন কাজের ক্ষেত্রে নতুন সাফল্যের নজির গড়ার জন্য। ভুলেও এ কথা বলবেন না যে আগের অফিসের কর্মীদের আপনি ঘৃণা করেন।
এক ধরনের মানুষ আছে যারা সিনিয়র কর্মীদের তোষণ করতে ভালবাসেন। সব সময় সিনিয়র কর্মীদের প্রশংসা কিংবা উপহার দেওয়া কারও কারও অভ্যেস থাকে। যখনই তাঁরা কোথাও বেড়াতে যান সিনিয়রদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন। তবে এই ধরনের তোষণ বেশির ভাগ সিনিয়র বুঝতে পারেন। তাই তাঁরা বিগলিত হন না। এ সব করে দীঘর্র্সূত্রী কোনও লাভও হয় না। উপহার দেওয়ার অভ্যেসকে অন্য সহকর্মীরা সহজ চোখে দেখেন না। তাই উপহার দিয়ে সিনিয়রদের মন জয় করার চেষ্টা একদম করবেন না। তাই তৈলমর্দন চলবে না। সব ধরনের সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। সহযোগিতা করুন। নিজের মতামতে বিশ্বাস রাখুন। দেখবেন সহকর্মীরা আপনাকে দূরের ভাবছেন না।
আনাচে কানাচে
সাম্বার দেশে ফুটবল হাসে: বিশ্বকাপের আগেই ফুটবল-জ্বরে আক্রান্ত কোয়েল মল্লিক। ছবি: কৌশিক সরকার।