আমি নির্লজ্জের মতো কাজ চাই

আন্তরিকতা থাকলেও হিসেব করেই তাস ফেলেন গার্গী রায়চৌধুরী। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।আন্তরিকতা থাকলেও হিসেব করেই তাস ফেলেন গার্গী রায়চৌধুরী। মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share:

ছবি: কৌশিক সরকার; মেক আপ ও হেয়ার: নুর আলম।

হঠাত্‌ করে পাঁচটা ছবি আপনার হাতে। এই কামব্যাকের রহস্য কী?

Advertisement

কাজের উদগ্র খিদে বেড়েছে। বড় পর্দার জন্য যা যা করে নিজেকে তৈরি করতে হয় সেটা আমি করে চলেছি। মানসিক আর শারীরিক মেদ কমিয়েছি। ছ’কেজি ওজন কমিয়েছি। আমি নিজেকে ভাঙছি। নিজের লুক নিয়ে পরীক্ষা করছি।

Advertisement

অনেকেই বলেন গার্গী খুব আন্তরিক। কিন্তু অত্যন্ত হিসেবি এক মহিলা...

আন্তরিক বরাবরই ছিল। তবে আমি তাদের কাছেই আন্তরিক যারা আমার আন্তরিকতাকে সম্মান করে। আমি কোনও দিনই বেহিসেবি বোহেমিয়ান নই। বরাবরই মাটিতে শক্ত করে পা রেখে চলা একটি মানুষ। এমন কিছুই করি না যাতে আমার জীবনের হিসেবটা ওলটপালট হয়ে যায়।

‘রামধনু’তে আপনার অভিনয়ের প্রশংসা হয়েছিল। কিন্তু ‘বুনো হাঁস’য়ের প্রোমোশনে আপনি একদম বেপাত্তা। এটাও কি কোনও হিসেব?

ছবি মুক্তির পর সে ভাবে প্রোমোশন হয়নি।

কেন? সুদীপ্তা চক্রবর্তী তো মুম্বইও গিয়েছিলেন ছবির প্রিমিয়ারে।

বেপাত্তা হইনি। সে সময় ‘বিটনুন’য়ের শ্যুটিং শুরু হল। ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করলাম। এ ছবিতেও আমি এক গৃহবধূ। এখানে আমার জীবনে একমাত্র ক্রাইসিস হল ছেলেকে সময় দিতে গিয়ে স্বামীকে সময় দিতে না-পারা। আমি জানি ছোট রোল হলেও ছবি রিলিজের আগে ছবিকে প্রোমোট করার একটা দায়বদ্ধতা থাকে। ‘রামধনু’তে আমি পুরোটা জুড়ে ছিলাম। প্রচারটা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আমি ভাগাভাগি করে করেছি। ‘বুনো হাঁস’য়ে আমার ছোট্ট চরিত্র ছিল। তবে চরিত্রের মধ্যে আলাদা একটা শেড ছিল। ‘রামধনু’র আগে এই ছবিটা সই করেছিলাম।

রামধনু’ মুক্তি পাওয়ার পর এমন চরিত্র এলে কী করতেন?

ভাবতাম। অনেকেই ছবি দেখে বলেছেন যে আমাকে একদম অন্য রকম লাগছে। নিজেকে ভাঙার একটা লড়াই ছিল। ‘রামধনু’র পরে এমন অফার এলে খানিকটা দ্বিধা থাকত।

উত্তরটা ঠিক দিলেন না। করতেন, না করতেন না?

ভাববার বিষয়।

কিছু নিন্দুক বলেছেন যে ‘বুনো হাঁস’য়ে আপনাকে এ রকম ছোট্ট চরিত্র দিয়ে মিসইউজ করা হয়েছে...

টোনিদা (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) কোনও দিন বলেনি রোলটা বড়। সেটা বললে তঞ্চকতা করা হবে। আমি চরিত্রটা দেখেই নিয়েছি। আশা করেছিলাম আমাকে ‘বিশেষ চরিত্রে গার্গী’ হিসেবে ইন্ট্রোডিউস করা হবে। ওটা মান-অভিমানের ব্যাপার। টোনিদাকে এখনও বলব তবু মনে রেখো!

‘চতুষ্কোণ’য়ে দু’দৃশ্যে অভিনয় করে তো কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সাঙ্ঘাতিক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ওই কাজ দেখে মনে হয়নি যে অভিনয়টাই আসল। কী ভাবে ইন্ট্রোডিউস করা হচ্ছে তা নয়...

ছবিটা পারস্পরিক সখ্যের জোরে করেছি। হ্যাঁ, ‘চতুষ্কোণ’য়ে কৌশিকদা অসভ্যের মতো ভাল অভিনয় করেছে। ওর ছবিতে খুব ছোট্ট চরিত্র হলেও আমি করতে রাজি হয়ে যাব।

আপনি কি বরাবরই খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী?

পৃথিবীতে কে নয়? কেউ স্বীকার করে, কেউ উহ্য রাখে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে গিয়ে যাতে চারপাশের পজিটিভিটি নষ্ট না হয়, সেটা দেখে আমার হিসেবি মন। যখন কাজ করি, তখন আমি ২০০ শতাংশ এফর্ট দিই। তার পর আমি পরের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যাই।

মানে খুব পেশাদার? কাজের বেলায় কাজী আর কাজ ফুরোলেই ‘আড়ি’?

না। আমি অনেক দিন নিজের কেরিয়ার নিয়ে সে ভাবে সিরিয়াসলি ভাবিনি। তবে আজ আমি দারুণ সিরিয়াস। নির্ভেজাল আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করার মতো সুযোগ আমার নেই।

বিয়ের আগের গার্গী আর এখনকার গার্গীর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?

আমি কোনও দিনই অস্তিত্বের সংকটে ভুগিনি। বিবাহ নামক একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যেটা অর্জন করেছি, সেটাকেও আমি রেসপেক্ট করি।

আপনার গডফাদার আছে?

না। আমার জীবনে আদর্শ পুরুষ বলেও কেউ নেই। আদর্শ পুরুষ ব্যাপারটা অনেক পুরুষের সম্মিলিত গুণে তৈরি। সেটা খুঁজতে গেলে তো কুমোরটুলিতে পাব কি না সন্দেহ আছে।

তা হলে ভালবেসে বিয়ে করলেন কী করে? ভালবাসার সংজ্ঞাটা কী?

আমি বিয়ে করেছি একজন রক্তমাংসের মানুষকে। সে অনেকের কাছে আদর্শ হতে পারে। তবে আমার কাছে সে দোষ-গুণ সমেত রক্তমাংসের একজন মানুষ। বুকের গভীরতম মানুষকে জীবন থেকে হারানোর ভয়টা হল ভালবাসা।

পার্টিতে গিয়ে আপনি কি আজকাল আড্ডার পাশে নেটওয়ার্কিং করেন?

কাজের মধ্যে অবসর ভাল। কিন্তু অবসরের মধ্যে অবসর তো ভাল নয়। একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র থিয়েটার করেছি। তখন নিজেকে বলতাম সহে না, সহে না আর মানুষের জঘন্য মিতালি। কিন্তু আজ আমার প্রায়োরিটি পাল্টেছে। মনটা শান্ত হয়েছে। পাঁচটা ছবি হাতে। তার মধ্যে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘নকশাল’ আর বুম্বাদার সঙ্গে ‘লড়াই’। আজ আমি নির্লজ্জ ভাবে কাজ চাইতে পারি।

ইন্ডাস্ট্রিতে তো অনেকে বলেন কারও কাছে কাজ চাইতে পারেন না...

বোধহয় ১৩৩ বার বুম্বাদাকে বলেছি ভাল রোল দাও। সৃজিতকেও খোলা চিঠি দিলাম কবে কাজে নেবে বলে। গৌতম ঘোষকেও হাজার বার বলেছি।

বিয়ের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া কি এটাও একটা সুবিধা নয় যে আজকাল আপনার সোশ্যাল সার্কেলে আপনার পছন্দের পরিচালকরা আছেন?

হ্যাঁ। সব কিছুর সুবিধে-অসুবিধে রয়েছে।

টেলিভিশন বা থিয়েটারের আপনার প্রতিভাবান সহ-অভিনেত্রীরা আজও সুযোগের অপেক্ষায়। আপনার মতো নিজের পেন্টহাউসে বসে তাঁরা কিন্তু ফিশফ্রাই খেতে খেতে কাউকে রোলের আবদার করতে পারেন না...

হুঁ...আমি আমার থেকে একজন একশোগুণ বেশি ম্যাচিওরড মানুষকে বিয়ে করেছি। এটাও বলব যে আমার আত্মসম্মানবোধটা বরাবরই প্রখর। ক্ষমতার পাশে থাকলে অনেকের মধ্যে অহমিকা চলে আসে। আমার তা হয়নি। বিয়ের পরেও আমি স্ক্রিন নামটা পাল্টাইনি। আমি নিশ্চিত এতে আমার স্বামীরও সমর্থন আছে। একমাত্র আমার পাসপোর্টে গার্গী রায় চৌধুরী দাশগুপ্ত করতে হয়েছে। যাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই তাদের নম্বর আমার ফোনে আছে।

আর কী কী করেন না?

বোকা লোকেদের সঙ্গে আমি মিশি না। বোরিং লোকেদের পছন্দ করি না।

ইন্ডাস্ট্রিতে বোকা, বোরিং বলতে কাদের বলছেন?

অসম্ভব কিপটে। জোকস বুঝিয়ে দিতে হয়। খুব হইচই করা একটা হাল্কা আড্ডাতে হঠাত্‌ যারা ঘানা বা জাপানের কোনও একটা ছবি নিয়ে আলোচনায় বসে... উফ্, অসহ্য। এটা অনেকটা গড়িয়াহাটে শপিং করতে অভ্যস্ত কারও ‘লন্ডন আমার ফেভারিট শপিং ডেস্টিনেশন’ বলার মতো শোনায়।

আপনি তা হলে ভালই জানেন কোন তাস কোথায় ফেলতে হবে?

আমি তাদের সঙ্গে আড্ডা দেব যাদের সঙ্গে থাকলে আমার উত্তরণ হবে।

ক্যালকুলেশনে দশে কত পাবেন?

(হাহাহা) জিরো। তবে যদি জানতে পারি যে কেউ এমন চরিত্র ভাবছেন যেটা আমি করতে চাই, তা হলে সেই রকম ভাবে সেজেও তাঁর কাছে চলে যেতে পারি! শুনেছিলাম এক বিশিষ্ট পরিচালক এমন একটা চরিত্রের কথা ভাবছেন যেখানে নায়িকার রেট্রো লুক দরকার। লক্ষ করে দেখবেন পুজোর মাসে আমাকে সব জায়গায় ফিফটিজ-সিক্সটিজের লুকেই দেখা গিয়েছে!

এত হিসেবি?

আমি কনসিকোয়েন্স ভেবে কাজ করি।

এর পরেও নিজেকে ক্যালকুলেশনে জিরো দেবেন?

আমি ক্যালকুলেশন করি না। ব্যাক ক্যালকুলেশন করি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement