অজয়দার সঙ্গে কাজ করতে চাই

বলছেন বলিউড সুরকার সেলিম-সুলেমান। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তবলছেন বলিউড সুরকার সেলিম-সুলেমান। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share:

কলকাতায় এসেছেন। শুনলাম এ শহরে শ্যুট করা হলিউড ছবির গানের সুর করছেন আপনারা...

Advertisement

সেলিম: হ্যাঁ, ঠিক। উনি আমাদের একটা প্রোমো গোছের দেখান।

সুলেমান: সে দেখে তো ছিটকে যাই। ওঁর থেকেই জানতে পারি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত পণ্য জল নয়, পেপার নয়, পেট্রোলিয়াম নয়। শিশুরা। এই থিমটাকে বেস করেই জিওফ্রে ‘সোল্ড’ বানায়। একটা সত্যি ঘটনার ভিত্তিতে বানানো ছবি।

Advertisement

তা ছবিটা যখন কলকাতায় শ্যুট করা, সুরের মধ্যে কি বাংলার ছোঁয়া পাওয়া যাবে?

সেলিম: সুরটা ভারতীয় বলা ভাল। আমরা একটা গান কম্পোজ করেছি। নাম ‘নমস্তে’। এটা কোনও ধার্মিক গান নয়। একদম ফান-সং। যেহেতু ছবিটা খুব ইনটেন্স, একটা লাইট গানের দরকার ছিল। গানটা গেয়েছে শ্রদ্ধা পণ্ডিত। ও ওটা লিখেওছে। ওর সঙ্গে গলা মিলিয়েছে হিমানি।

বাংলার প্রভাব রাখলেন না কেন?

সুলেমান: ইচ্ছে করেই রাখিনি। একবার কথা উঠেছিল আমরা বাউল রাখব কি না। কিন্তু পরে ভাবলাম বাউল গানের ধাঁচে করলে এটা খুব অঞ্চলভিত্তিক হয়ে যেতে পারে।

এটা কি খানিকটা ‘জয় হো’র মতো একটা গান?

সেলিম: ইয়েস, বাট ইন আ মোর ইজি ওয়ে।

সোনু নিগম আর বিক্রম ঘোষের সুর তো অস্কারদৌড়ে ছিল...

সেলিম: এই কিছুক্ষণ আগে বিক্রমের সঙ্গে এ নিয়েই কথা হল।

সুলেমান: একটা অদ্ভুত মিশেল তৈরি হচ্ছে। এত দিন পর্যন্ত হলিউড ছবির স্কোরে কখনও গানকে খুব বড় ভাবে ব্যবহার করা হত না। আনলেস ইট ইজ সামথিং লাইক ‘ম্যুলা রুঁজ’। কিন্তু এখন সেটা পাল্টাচ্ছে। আর তাতে আমাদের সুবিধেও হচ্ছে। বলিউড আবার হলিউডকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। এখন অনেক ছবি তৈরি হচ্ছে যেখানে আর হিরো-হিরোইনদের নিজেদের মুখে গান থাকছে না। ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকছে। এই সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ব্যাপারটা বেশ ভাল।

সেলিম: রহমানের সুর করা ‘মিলিয়ন ডলার আর্ম’ দেখেছেন? এমন ভাবে রহমান সুর করেছে যাতে ওটা বলিউড-হলিউড দু’জায়গাতেই উপভোগ করা যায়।

২০১৫তে এমন ৩-টি পরিবর্তন বলুন যা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে হলে আপনাদের দারুণ লাগবে...

সেলিম: আমরা চাই বলিউডে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ব্যবহারের ধারাটা আবার ফিরে আসুক।

সুলেমান: মাঝে মাঝে গান শুনতে শুনতে মনে হয় আমরা যেন আমাদের শিকড়টা ভুলে যাচ্ছি। সব কিছুই এত ইলেকট্রনিক্সের ওপর ভরসা করে করতে হচ্ছে। এতে তো শ্রোতার ক্লান্তি আসবে।

সেলিম: লাইভ পারফর্ম্যান্সের ওপর আরও জোর দিতে হবে। আমাদের দেশে যত সংখ্যক শিল্পী রয়েছেন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভেনু তো নেই। থাকলেও সেখানে অ্যাকাউস্টিক সিস্টেমটা ভাল নেই। সেটা হওয়া দরকার।

সুলেমান: আরও কোলাবরেশন হওয়া দরকার। আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক।

হ্যাঁ, যেমন শান-এর ‘তনহা দিল’। কিন্তু তার পর তো বলিউড সব কিছু গ্রাস করল। এমনকী ওই ধরনের গানগুলো তো বলিউডে ব্যবহার করা শুরু হল!

সুলেমান: আবারও ওই কাজটা শুরু করতে হবে। আমরাও চেষ্টা করছি। ‘আল্লা হো আকবর’ বলে একটা গান এ ভাবেই আমরা রিলিজ করেছিলাম ঈদ-এ। নিজেরাই শ্যুট করেছিলাম।

আপনারা নিজেরা রেকর্ড করে রিলিজ করলেন। কিন্তু বাইরের জগৎ কি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাজকে সেই সাপোর্ট দিচ্ছে?

সুলেমান: আপনি বলুন তো আমাদের দেশের স্বাধীনতা কি সহজে এসেছিল? ডিড উই গেট ইন্ডিপেন্ডেন্স দ্যাট কুইকলি? অনেক বছর যুদ্ধ করতে হয়েছিল। সে রকম ভাবেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক বা সিনেমাকেও স্ট্রাগল করতে হবে। এক দিনে কিছুই হাসিল হবে না।

বলিউডে কম্পোজ করার মাঝে তো আপনারা ইউএস-এ একটা ট্যুর করে ফিরলেন...

সেলিম: এ বার থেকে ব্রুকলিন শহরে ১৬ নভেম্বরকে সেলিম-সুলেমান ডে হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

১৬ তারিখটা যা অপয়া। এক বছর দিল্লি রেপ কাণ্ড, তার পর পেশোয়ার অ্যাটাক। যদিও অন্য মাসে, তবু যে ওই তারিখ কোনও ভাল কাজের সঙ্গে চিহ্নিত হবে সেটাই ভাল...

সুলেমান: হ্যাঁ ওটা হচ্ছে। উই গট হোয়াইট হ্যাটেড ইন ক্যালগারি। গভর্নর অব নিউ ইয়র্ক-এর তরফ থেকে একটা কনগ্রেশনাল সার্টিফিকেট অব মেরিটও পেয়েছি। ওদেশে এমন অনেক সেকেন্ড বা থার্ড জেনারেশন ভারতীয় আছে যারা আমাদের ভাষাটা বলতে পারে না। যখন ওখানে কয়ার এনসেম্বলের সঙ্গে পারফর্ম করলাম তখন ওই শ্রোতারা কী দারুণ ভাবে আমাদের মিউজিকের সঙ্গে কনেক্ট করল।

এই কাজটা এত দিন পর্যন্ত আমাদের ক্লাসিকাল মিউজিশিয়ানরা করে এসেছেন...

সেলিম: হ্যাঁ তা ঠিক। ভাল লাগছে যে আমরা বলিউডের সুরকার হয়েও এটা করতে পারলাম।

এর পরের ধাপটা কী?

সুলেমান: ‘গঙ্গাজল ২’-এর সুর করছি। চিত্রগ্রাহক বিনোদ প্রধানের প্রথম ছবি ‘ওয়েডিং পোলাও’-এর মিউজিক আমরা করছি। ডেস্টিনেশন ওয়েডিং নিয়ে মজার ছবি বানিয়েছেন বিনোদ। ব্রেট লি অভিনীত ‘ইউনিনডায়েন’ ছবির মিউজিক করার কথা হয়েছে। ইচ্ছে আছে কানাডা আর আমেরিকার অর্কেস্ট্রার সঙ্গে কাজ করার।

এত বার কলকাতায় আসেন এখানকার কোনও শিল্পীর সঙ্গে আলাদা করে কাজ করতে চান না?

সেলিম: অজয়দাকে (পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী) খুব ভালবাসি। সম্মান করি। ওর সঙ্গে কাজ করতে চাই।

আর কৌশিকী?

সেলিম: হ্যাঁ কৌশিকীও ওয়ান্ডারফুল। তবে প্রথমে অজয়দা। তার পর কৌশিকী।

যেহেতু নিজে কম্পোজ করেন তাতে কি অন্যান্য সুরকারদের কাছে গায়ক সেলিমের জায়গাটা কমে আসছে? তারা তো ভাবতেই পারেন যে আপনারা ওর জন্য এমনিতেই গান কম্পোজ করবেন?

সেলিম: না। ‘ইশকওয়ালা লাভ’ গানটা তো আমাদের সুর করা নয়। বিশাল তো আমাদের জন্য কত গান গেয়েছে। আসলে ভালবাসার সমুদ্রের নাম সঙ্গীত। সেখানে এই ধরনের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

বলছেন এই কারণে কোনও ইনসিকিউরিটি হয় না?

সেলিম: হয় না। প্রত্যেকটা গানের একটা চরিত্র থাকে। একটা হিট হতে গেলে একটা গানকে হিট হতে হবে। জীবনে আমরা প্রত্যেকেই এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই। কোনও দিন আমরা ভাবলাম যে অভিনয় করব। তার জন্য কি অভিনেতারা ইনসিকিওর হয়ে যাবে? আমরা তো ফারহান আখতারকে দিয়ে ‘মার্দ’ ক্যাম্পেনের জন্য গান গাইয়েছি। ও একটা গান ভাল করে গেয়ে চলে যাবে। কিন্তু তাতে অন্যরা ইনসিকিওর হয়ে যাবে কেন?

পেছনে ফিরে দেখলে, নিজেদের কোন গান-এর জনপ্রিয়তা নিয়ে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর স্টোরিটা এনজয় করেন?

আমার পছন্দ ‘ইয়ে হোসলা’। তবে ‘আলি মওলা’ তৈরির গল্পটাও দারুণ। জানেন গানটা আসলে ‘কুরবান’-এ থাকার-ই কথা ছিল না। আমরা ওটাকে একটা ভক্তিগীতি হিসেবে সুর করেছিলাম। কোনও ছবির জন্য নয়। কর্ণ শুনে বলে এই গানটা ছবিতে ব্যবহার করতেই হবে। কারণ এ রকম একটা গান সকলের কাছে পৌঁছনো দরকার, শোনা দরকার। বলেছিল ইট হ্যাজ টু বি শেয়ার টু বিকাম আ বিগ হিট।

সুলেমান: তবে সব থেকে মজার ঘটনা হল ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ নিয়ে। ‘অ্যাভি অ্যাভি’র সুরটা পরিচালকের পছন্দ হয়নি। বলেছিল ‘মেরেকো মজা নেহি আয়া’ আমরা অন্য ভার্সান তৈরি করেছিলাম। একদিন স্টুডিয়োতে আদি (আদিত্য চোপড়া) এসেছিল। ও গানটা শুনে পরিচালককে বলেছিল ‘তুমি বুঝতে পারছ না এটা কত বড় হিট হবে’।

সেটাই তো হল...

সেলিম আর সুলেমান: আলবাত!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement