(বাঁ দিক থেকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দামিনী বেণী বসু, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ঊষসী রায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ড নতুন করে নারী নির্যাতন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে সকলকে। একজোট হয়ে নারীনিগ্রহের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠানোর প্রয়োজনীয়তাও বুঝিয়েছে। ২৭ অগস্ট সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ‘উইমেন্স ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কার্স’। ২১ সেপ্টেম্বর সেই কমিটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠাল। কমিটির পক্ষ থেকে অভিনেত্রী ঊষসী রায় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রির মহিলা, শিশুদের নিরাপত্তা চেয়েই এই কমিটি গঠন। যাতে কাজ করতে এসে তরুণী চিকিৎসকের মতো আর কোনও মেয়েকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে না হয়।
ঊষসীর কথায়, “আরজি কর-কাণ্ড আমাদের রাতের ঘুম কেড়েছে। ১৪ অগস্ট রাত দখলের পরেই দামিনী বেণী বসু, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ঊষসী চক্রবর্তী-সহ রুপোলি পর্দার আরও অভিনেত্রী ও টেকনিশিয়ানরা সিদ্ধান্ত নিই, টলিউডে কাজ করতে আসা নারী আর শিশুদের নিরাপত্তার দিকে আবারও নজর দেওয়ার সময় এসেছে।”
সেই কথা তাঁদের লেখা চিঠিতেও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কমিটির বার্তা, কর্মক্ষেত্রে যৌন লাঞ্ছনা-সহ সব রকম নির্যাতন রোধে ২০১২-য় যৌন হেনস্থা থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন (পকসো) এবং নারীদের সুরক্ষার জন্য ২০১৩-য় প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট (পশ) আইন কার্যকরী হয়। কিন্তু তার প্রয়োগ বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় হয়নি। ফলে, সেখানে নারী বা শিশু আজও নিরাপদ নন। নিগ্রহের শিকার হলে কোথায় তাঁরা অভিযোগ জানাবেন? তার দিশা দেখানোরও কেউ নেই। এই ফাঁক ভরাট করতেই এই বিশেষ কমিটির জন্ম। ঊষসীর মতে, এই কমিটি অভিযোগ শোনার পাশাপাশি নিরপেক্ষ ভাবে তার বিচার করবে। নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াবে। প্রয়োজনে সব রকম আইনি সাহায্যও করবে। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতির প্রয়োজন। এ দিন সেই অনুমতি চেয়েই চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা।
অনুমতি মিললে কী কী করবে কমিটি? তিনি জানিয়েছেন। রুপোলি পর্দার সঙ্গে সব স্তরের মহিলারা যাতে ভাল থাকেন, সুস্থ পরিবেশে কাজ করতে পারেন— সেই দিকগুলি কমিটি নজরে রাখবে। ইতিমধ্যেই ‘সুরক্ষা কমিটি’ গঠন করেছে ফেডারেশন। অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। একটি কমিটি গঠনেরও অনুরোধ জানিয়েছেন। একাধিক কমিটির বদলে একটি কমিটিতে সকলে যোগ দিয়ে আবেদন জানালে সেই আবেদন কি আরও জোরালো হত? অভিনেত্রীর জবাব, “উইমেন্স ফোরাম সবার প্রথমে তৈরি হয়েছে। তার পরে গঠিত হয়েছে ‘সুরক্ষা বন্ধু’। আমরা তাই আমাদের মতো করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত করতে পারি।” এও দাবি তাঁর, কমিটি আলাদা হলেও সকলের ভাবনা এক। সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করাই সকলের লক্ষ্য। লক্ষ্যপূরণ হলে পরিশ্রম সার্থক হবে, এটাই মনে করেন তিনি।