টলিপাড়ার বহু তারকাই মজেছিলেন টিকটকে।
দেশপ্রেম সবার আগে, তা নিয়ে মতান্তর নেই। তা বলে কি মনখারাপও নেই, টিকটক বন্ধ হয়ে যাওয়ায়? কারণ, টলিপাড়ার বহু তারকাই এতে মজেছিলেন। কেউ ভাইরাল হয়েছিলেন, কেউ বা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন টিকটকের জন্য।
বড়পর্দার কোয়েল মল্লিক, যিশু সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত টিকটক জানতেন না এমন নয়। কিন্তু করতেন না। তাই তাঁদের কোনও অ্যাকাউন্ট ছিল না। ফলে, এই অ্যাপের থাকা না থাকা নিয়ে খুব যে আগ্রহী তাঁরা এমনটাও নয়। যিশু তো সরাসরি জানিয়েই দিলেন, এই অ্যাপ কোনও দিন ব্যবহার করেননি। ফলে, তাঁর বলার কিছুই নেই।
অভিনেত্রী শ্রাবন্তীকে টিকটকে দেখা গেলেও তিনি আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন, “টলিপাড়ার বন্ধুদের দেখে আমিও টিকটকে ভিডিয়ো পোস্ট করতাম। তবে যখন থেকে চিনের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হল আমি আর টিকটকে যাইনি। আমার বাবা আর্মিতে ছিলেন। আমাদের দেশের সেনার লড়াই, দুঃখ আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি। আমি আর টিকটকে নেই।”
আরও পড়ুন: চিনা অ্যাপ টিকটককে বিদায় দিয়ে দুই তারকা সাংসদ মিমি-নুসরত কী বললেন?
ঋতুপর্ণা অবশ্য অন্য কথা বললেন। তাঁর মতে, ‘‘আমার থেকে আমার মেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল। সারা ক্ষণ ওকে দেখতাম উপুড় হয়ে রয়েছে। ও বানাতেও জানত টিকটক ভিডিয়ো। কখনও পোস্ট করেনি।’’ তবে টিকটকে অন্যের গলায় নিজের লিপ সিঙ্কিং বা বলার চেষ্টা, এটা বেশ মজা দিত ঋতুপর্ণাকে।
ছোট পর্দার পরিচিত মুখ অদ্রিজা বললেন, ‘‘লকডাউনে অবসর কাটানোর সেরা বিনোদন ছিল এই অ্যাপ। তাই টিকটক করার পাশপাশি দেখতামও। মুম্বইয়ে আমার অনেক বন্ধু এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিছু কিছু চড়া দাগের পাশাপাশি, সূক্ষ্ম কনসেপ্টও দেখতে পেতাম। আর টিকটক নিমেষে জনপ্রিয় করে দিতে পারত খুব সাধারণকেও।’’ টিকটকের এই জনপ্রিয়তাই সাধারণ মানুষের সঙ্গে সঙ্গে টেলিপাড়ার নতুন প্রজন্মের মধ্যেও আসক্তি তৈরি করেছিল।
অভিনেত্রী মনামীর কথায়: ‘‘লকডাউনে আমার কিছু নাচের টিকটক এত ভাইরাল হয়েছিল যে আমার নাম দিয়ে অনেকেই ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন। শেষে সংস্থা আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে, যাচাই করে আমার অ্যাকাউন্টকে অফিসিয়ালি মান্যতা দেয়। তাই আমার অ্যাকাউন্টের পাশে ব্লু টিক দেখা যেত।’’
এই জায়গাতেই জন্ম নেয় দ্বিতীয় প্রশ্ন। সবারই অল্পবিস্তর জানা, ভাইরাল হলে, নির্দিষ্ট ভিউয়ার্স পাওয়ার পরে একটা টাকা পাওয়া যেত টিকটক থেকে। জনপ্রিয়তা প্লাস লক্ষ্মীলাভ, এক সঙ্গে দুটো পাওয়া যায় বলেই কি আসক্তির পরিমাণ এতটা? এই উত্তরে মনামীর দৃঢ় জবাব, ‘‘অ্যাপটি শুধুই এনজয়ের জন্য আপলোড করেছি। আর অংশও নিয়েছি মজা করব বলে। টাকা রোজগারের কোনও লক্ষ্যই ছিল না। শুনেছি, এটি বহু জনকে রোজগারের রাস্তা দেখিয়েছিল। কিন্তু আমাকে নয়। এমনকি, অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট হওয়ার পরেও সংস্থা আমাকে এই ধরনের কোনও অফার দেয়নি।’’
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মতে, যেহেতু তাঁর অ্যাকাউন্ট নেই তাই রোজগারের প্রশ্নও উঠছে না। তবে তিনিও শুনেছেন, এই ধরনের কিছু সুযোগ পাওয়া যেত টিকটক থেকে। তবে টালিগঞ্জের কারও থেকেই তিনি এই ধরনের সুবিধে নেওয়ার কথা শোনেনি। কিন্তু শিল্পা শেট্টিকে তিনি টিকটকে সারা ক্ষণ ব্যস্ত থাকতে দেখেছেন।
এ বার আসা যাক তৃতীয় প্রশ্নে। কাদের মুখ এই অ্যাপে বেশি দেখা যেত? টলিপাড়া না টেলিপাড়ার তারকাদের? ‘‘এই একটি বিষয়ে কোনও ভাগাভাগি ছিল না টালিগঞ্জে। টেলি, টলি সব তারকাই টিকটক করতে ভালবাসতেন। মুখও দেখাতেন। কারণ টিকটক একটা ভাল প্ল্যাটফর্ম ছিল জনসংযোগের। আমিও সেই লোভেই দুটো ভিডিয়ো পোস্ট করেছি। তবে ১৫ সেকেন্ডে নাচের ভিডিয়ো তৈরি করা আমার কাছে চ্যালেঞ্জের। কারণ, আমি নাচতে শুরু করলে থামতে পারি না’’, সহজ কথা দেবলীনা কুমারের।
অর্থাৎ, এই একটি প্ল্যাটফর্ম গ্ল্যামারাস আর উঠতি তারকাদের একাকার করে দিয়েছিল? ইতিবাচক উত্তর মিলল বনি সেনগুপ্তের কাছ থেকে। প্রথমেই বনি খুনসুটির সুরে জানিয়ে দিলেন, তাঁর থেকেও বেশি আসক্তি ছিল স্টেডি বান্ধবী কৌশানি মুখোপাধ্যায়ের। অভিনেত্রীর ফ্যান ফলোয়ার্স ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি। বনির কথায়: ‘‘আমি কৌশানির ভিডিয়োগুলোই রিপোস্ট করতাম। এনজয় করতাম।’’
মিমি চক্রবর্তী বা নুসরত জাহানের মতো সাংসদেরাও কি শুধুই উপভোগ করতেন বলে এত টিকটক করতেন? অভিনেতার মতে, ‘‘শহরতলি বা গ্রামের লোকেরা সারা ক্ষণ টিকটকে মজে থাকতেন। ফলে, তাঁদের কাছে পৌঁছতেই সম্ভবত এই দুই তারকাকে প্রায়ই দেখা যেত অ্যাপটিতে। কম সময়ে ভীষণ জোরালো সংযোগ তৈরি করে দিতে পেরেছিল এটি।’’
আরও পড়ুন: ‘শ্রীময়ী-রোহিতরা এক হয় না, মা-কাকিমার প্রেমিক ফিরলে মানতে পারবেন সবাই?’
একই কথা বললেন অদ্রিজাও, ‘‘যাঁরা অ্যাপে ভিডিয়ো ডাউনলোড করে জনপ্রিয় হয়েছেন তাঁরা নিজেদের শিল্পী মন সবার সামনে তুলে ধরার নেশার পাশাপাশি রোজগারের টানে এটি করতেন। মুম্বইয়ে অনেক ভাল কনসেপ্ট তৈরি হত অ্যাপে ডাউনলোড করার জন্য। কলকাতাও যে খুব বেশি পিছিয়ে ছিল এমন নয়। তবে সেরাটা আসত মুম্বই থেকে।’’
তা হলে টিকটক স্টার হতে গেলেও গাইডের প্রয়োজন পড়ত? কোনও গাইড নয়, আপনা থেকেই কিছু কনসেপ্ট তৈরি করে দিত সংস্থা। সেই অনুযায়ী কাজ করতে হত যাঁরা এই অ্যাপটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। কারণ, সংস্থার একটি নির্দিষ্ট মান বা মাপে পৌঁছতে পারলে তবে উপার্জনের দরজা খুলত।
তবে বড়-ছোট পর্দা একমত, যাঁদের আসক্তি ছিল তাঁদের সেটা কাটাতে সময় লাগবে। যাঁরা রোজগার করতেন, তাঁদের পকেটে টান পড়বে। যাঁরা জনপ্রিয়তা বা জনসংযোগপ্রিয় ছিলেন, তাঁরাও কয়েক পা পিছিয়ে গেলেন হয়তো।