রিয়া
ছেলে শৌভিকের গ্রেফতারির পরেই রিয়া চক্রবর্তীর বাবা ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, এর পরে আমার মেয়ের পালা।’’ মঙ্গলবার তাঁর আশঙ্কাই সত্যি হল। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রায় মাস দেড়েক পরে বিহার পুলিশের কাছে রিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সুশান্তের বাবা কে কে সিংহ। যদিও রিয়াকে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়নি। এ দিন দুপুরে মাদক চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে রিয়াকে গ্রেফতার করল নারকোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)। এর আগে রবিবার ও সোমবার রিয়াকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করেছিল এনসিবি।
সুশান্তের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া, অর্থ তছরুপের মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল রিয়ার বিরুদ্ধে। তবে কোনওটিই প্রমাণ হওয়ার আগে ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালে তাঁকে দোষী ধরে নিতে শুরু করে নেটিজ়েনের বৃহত্তর অংশ। #জাস্টিসফরসুশান্ত এর ঢেউয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলতে থাকে রিয়া-সুশান্তের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের। রিয়ার গ্রেফতারির দাবি নিয়ে সরাসরি সেলেব মহল থেকে আওয়াজ না উঠলেও, অভিনেতার মৃত্যুর পিছনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখন্ডে। এ দিন রিয়ার গ্রেফতারির পরে অঙ্কিতার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট, ‘‘কোনও কিছুই দৈবযোগে বা অদৃষ্টের জন্য হয় না। মানুষ কর্মের জোরে তার ভাগ্য তৈরি করে। এটাই কর্মফল।’’ শেখর সুমন িলখেছেন, ‘‘অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ করা হল।’’
রিয়ার গ্রেফতারির পরে এ দিন বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যাশিত ব্যক্তিরাই রিয়ার পক্ষে মুখ খুলেছেন। তবে নীরব থাকার সংখ্যাও কম নয়। কারণ রিয়ার গ্রেফতারির পিছনে মাদক-যোগ, যা সুশান্তের মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়েই প্রকাশ্যে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
প্রযোজক প্রীতীশ নন্দী টুইটে লিখেছেন, ‘‘রিয়ার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। খুন? প্রমাণ নেই। খুনে প্ররোচনা? প্রমাণ নেই। ১৫ কোটি টাকা চুরি? প্রমাণ নেই তারও। তবে পড়ে থাকে কী? মাদক...’’ সুশান্তের পাশাপাশি তিনি জুড়েছেন #জাস্টিসফররিয়া। একই সুরে তাপসী পান্নুর টুইট, ‘‘সে গোল্ড-ডিগারও নয়, খুনিও নয়। শুধু মাদক পাচার বা সেবন করেছিল। এ মামলা তো সুশান্তের নয়, যাদের তরফে ছিল তাদের ধন্যবাদ।’’
অন্য দিকে পরিচালক হনসল মেহতার টুইট, ‘‘এ বার #জাস্টিসফরগাঁজা ট্রেন্ড শুরু করা যাক।’’ পোস্টে ট্যাগ করেছেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীকে। পরিচালক ওনির তাঁর টাইমলাইনে নেগেটিভ কিছু পোস্ট না করার আর্জি জানিয়েছেন। একটি পরিসংখ্যান টুইট করেছেন তিনি, যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় মুম্বই ও দিল্লির মানুষ ৭০ মেট্রিক টন মারিজুয়ানা সেবন করেছেন। ওনিরের ক্যাপশন ‘‘এটা বলিউড নয়।’’ চেতন ভগতের টুইট, ‘‘এ বার কি ভারত স্বস্তির শ্বাস নেবে?’’ রিয়ার টি-শার্টের ক্যাপশন কোট করে অনুরাগ কাশ্যপ লিখেছেন, ‘‘রোজ়েস আর রেড/ ভায়োলেটস আর ব্লু/ লেট’স স্ম্যাশ দ্য প্যাট্রিয়ার্কি / মি অ্যান্ড ইউ।’’ এই ক্যাপশনটাই পোস্ট করেছেন বিদ্যা বালন, রাধিকা আপ্টে, সোনম কপূর, দিয়া মির্জ়া, সায়নী গুপ্তরা।
টেলিভিশনের এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে রিয়া আর্জি জানিয়েছিলেন, ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরা যেন তাঁর পক্ষে এগিয়ে আসেন, তাঁকে সাহায্য করেন। গত এক মাস ধরে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের সময়ে সমাজের বুদ্ধিজীবীরা আওয়াজ তুললেও, ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু সে ভাবে তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। এ দিন রিয়ার গ্রেফতারির পরে তাপসী, অনুরাগ, সোনম, বিদ্যার মতো প্রত্যাশিত ব্যক্তিরাও মুখ খুলেছেন। তবে ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির ব্যক্তিত্বরা এখনও নীরব।