সন্দীপ্তা সেন।
লকডাউনের পনেরো দিন কেটেছে। কোলাহল, ব্যস্ততা থেকে দূরে থাকা আপনাকে চারপাশের পরিস্থিতি ভয় পাওয়াচ্ছে রোজ। এ এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তা। বাইরে বেরলে সংক্রমণ । বাড়ি থাকলে তল খুঁজে না পাওয়া এক ভবিষ্যৎ। ভিতরে জমতে থাকা দুশ্চিন্তা, অবসাদ আপনার আত্মবিশ্বাসেও খানিক থাবা বসিয়েছে ঠিক করোনার মতোই?
আনন্দবাজার ডিজিটাল ফোন করেছিল সাইকোলজিস্ট, অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেনকে। না, তাঁর কোয়রান্টিন কেমন কাটছে তা জানতে নয়। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে সাইকোলজি নিয়ে মাস্টার্স করা সন্দীপ্তা এই অবসাদ কাটানোর উপায় বাতলালেন।
সন্দীপ্তা বললেন, “ প্ল্যান করে আদপে কিছুই হয় না। সবাই প্রায় বাড়িতে। কী অপেক্ষা করছে কেউ জানি না। এ অবস্থায় সবচেয়ে আগে দরকার নিজের রোজের লাইফস্টাইলটাকে স্বাভাবিক রাখা। আমাদের মস্তিষ্ক হঠাৎ করে এই বিশাল চেঞ্জটা নিতে পারে না। সেখান থেকে মনের উপরেও তার প্রভাব পড়ে। যার রেজাল্ট অবসাদ, দুশ্চিন্তা। অফিস যাওয়ার তাড়া নেই, ল্যাদ খেয়ে দেরি করে উঠলাম। একেবারেই করবেন না। যেমন উঠতেন আগে, সে রকম রুটিন মেনে চলুন।"
ওঠার পর, তার পর কী? প্রশ্নটা প্রায় লুফে নিয়েই তাঁর জবাব, "দেখুন কী হবে তো আমরা কেউ জানি না। যাই হোক, একসঙ্গে লড়াইটা লড়তে হবে। কিন্তু এখন এই দুশ্চিন্তা যদি এক বার অবসাদে পরিণত হয়ে যায়,তা হলে কিন্তু সেখান থেকে বেরনো মুশকিল।"
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ইমিউনিটি বাড়ানোর গোপন ফর্মুলা ভক্তদের জন্য ফাঁস করলেন সোনালি বেন্দ্রে
ডিপ্রেশন কাটাতে কী করা যেতে পারে। চার্ট করে দিলেন সন্দীপ্তা।
* ডিসিপ্লিনটা ভাঙতে দেওয়া চলবে না। যেমন সময়ে উঠতেন তেমন সময়েই উঠুন।
* ঘরের অনেক কাজ থাকে। সেখানে নিজেকে যুক্ত করুন।
* সারাক্ষণ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ নয়। সেখানকার ফেক নিউজ আরও চিন্তা বাড়াবে।
* পুরনো শখ ঝালিয়ে নেওয়ার সময় এখন। আঁকতে ভালবাসতেন? তাই করুন। বিয়ের পর নাচ ছেড়ে দিয়েছেন। এই তো সময়। আবার ঝালিয়ে নিন।
* আপনার এই কদিনেই দম বন্ধ হয়ে আসছে? বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটার কথা ভাবুন। লকডাউন হোক বা না হোক, তাঁকে কিন্তু একাই থাকতে হয়।এই সময় তাঁকে সময় দিন।
* লুডো, দাবার মতোই ইনডোর গেম খেলতে পারেন।
* খুব প্যানিকড হয়ে পড়লে ইউটিউবে রিলাক্সেশন ভিডিয়ো দেখে নিতে পারেন। ভাল লাগবে।
* মেডিটেশনও করতে পারেন।
বাবা মায়ের সঙ্গে বসে লুডো খেলছেন নিয়ম করে। নিজস্ব চিত্র
বাস্তব বুঝে নিজেও তাই করছেন সন্দীপ্তা। ঘর গোছাচ্ছেন,গাছে জল দিচ্ছেন, বাবা মায়ের সঙ্গে বসে লুডো খেলছেন নিয়ম করে। কে জিতছে? "মা-ই এগিয়ে। আমি সেকেন্ড পজিশনে।আর বাবা একদম শেষে।" হাসতে হাসতে বলছিলেন তিনি।
কী হবে তা নিয়ে আগে থেকে সাত পাঁচ ভাবতে তিনি চান না। অর্থকষ্ট, চাকরি যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা যে আসতে চলেছে তা মাথায় রেখেই এগনোর বার্তা তাঁর। সব ঝড় থেমে যাবে এক দিন, আশাবাদী সন্দীপ্তা।