KK

Singer KK Dies: নজরুল মঞ্চে বেলাগাম ভিড়, বন্ধ বাতানুকূল যন্ত্র, কেকে-র অসুস্থতার জন্য উদ্যোক্তারাই দায়ী?

উদ্যোক্তাদের একাংশের অপরিণামদর্শিতা এবং তার ফলে বল্গাহীন ভিড়ই কি কেকে-র অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ? অনেকেই সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২২ ১০:২৭
Share:

ফাইল চিত্র।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে তারকা গায়ক কেকে-র অসুস্থ হয়ে পড়া এবং কালক্রমে মৃত্যুর জন্য কি দায়ী অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একাংশের অপরিণামদর্শিতা? বুধবার থেকে কিন্তু সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে আলোচনা।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। তাই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক অতটা খুঁটিয়ে কেউ দেখেননি। কিন্তু রাত থেকেই নেটমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট হতে থাকে। সেই সব পোস্ট যাঁরা করেছেন, তাঁদের অনেকেই নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেই পোস্টগুলিতেই দেখা যাচ্ছে, বেলাগাম ভিড় হয়েছিল কেকে-র অনুষ্ঠানে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের বক্তব্য, অত ভিড় দেখে কেকে প্রথমে গাড়ি থেকে নামতেও দ্বিধা করছিলেন। কোনওক্রমে ভিড় সরিয়ে তাঁকে সরাসরি গ্রিনরুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

কেকে-র আগেই ওই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পী শুভলক্ষ্ণী দে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বুধবার বলেছেন, ‘‘এত ভিড় ছিল যে, কেকে স্যরকে বহুক্ষণ গাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছিল। উনি গাড়ি থেকে নামতে দ্বিধা করছিলেন। তার পর ভিড় সরিয়ে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রায় ঘিরে ধরে সটান গ্রিনরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। তবে আমি অনুষ্ঠান করব বলে আমায় ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। আমি গিয়ে ওঁর সঙ্গে আলাপও করি।’’

Advertisement

ঘটনাচক্রে, বুধবার সকালে চিকিৎসক কুণাল সরকার তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছেন। যেখানে প্রয়াত কেকে-র একটি সাদা-কালো ছবি দিয়ে তিনি খোলাখুলিই লিখেছেন, ‘যতটা দুঃখ, ততটাই লজ্জা। বেসামাল ভিড়। এসি বেহাল-ভীষণ গরম। মুখের উপর ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার স্প্রে করা। দু’ঘন্টার উপর সময় নষ্ট করে তার পর শেষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। আমাদের ক্ষমা করো।’

ভিড় যে ব্যাপক ছিল, তা শুভলক্ষ্ণীর কথাতেই স্পষ্ট। কিন্তু নজরুল মঞ্চের বাতানুকূল যন্ত্র কি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল? শুভলক্ষ্ণীর বক্তব্য, ‘‘এসি বন্ধ ছিল কি না, সেটা বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু নজরুল মঞ্চের দরজা বারবার খোলা এবং বন্ধ করা হচ্ছিল। বারবার অনেক লোক ঢুকছিল। প্রচন্ড গরমও ছিল। ওঁকে (কেকে) দেখে বোঝা যাচ্ছিল, গরম লাগছে। খুব অস্বস্তিও হচ্ছে।’’ পাশাপাশিই শুভলক্ষ্ণী জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের মধ্যেই কেকে বারবার ঘাম মুছছিলেন। একেকটা গান গাওয়ার পর গ্রিনরুমে গিয়ে জলও খাচ্ছিলেন।

নজরুল মঞ্চে দর্শক ধরে মেরেকেটে আড়াই হাজার। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে তার চেয়েও বেশি লোক ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। একটি অসমর্থিত সূত্রের দাবি, অন্তত সাত হাজার লোক ঢুকেছিলেন নজরুল মঞ্চে। অনেকে পাঁচিল টপকেও ঢুকেছিলেন। ভিড় সামলাতে নজরুল মঞ্চের সাতটি দরজার মধ্যে পাঁচটিই খুলে দেওয়া হয়েছিল বলে ওই সূত্রের দাবি। অসমর্থিত সূত্রটির আরও দাবি, মঞ্চের সামনে ভিড় হটাতে একটা সময় সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থেকে রাসায়নিক স্প্রে করা হয়েছিল। বস্তুত, ফেসবুকে কেকে-র অনুষ্ঠানের যে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন অনেকে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, অনুষ্ঠান মঞ্চের আশেপাশে খুব একটা শৃঙ্খলার বালাই ছিল না। লোকের তুলনায় জায়গা অপ্রতুল হওয়াতেই।

অনুষ্ঠানের দর্শক কলেজছাত্র রোহিত সাউ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, তিনি পাস যোগাড় করে কেকে-র অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, নজরুল মঞ্চে এমন বিশৃঙ্খলা আগেও ঘটেছে। রোহিত জানান, গত সপ্তাহে একটি নামী বাংলা ব্যান্ডের অনুষ্ঠানেও দর্শকদের চাপে গেট ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি তা দেখেওছেন। যেমন দেখেছেন কেকে-র অনুষ্ঠানে বেসামাল, বেলাগাম ভিড় এবং তজ্জনিত বিশৃঙ্খলা।

কেকে-কে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার আগে দু’ঘন্টা সময় নষ্ট করা হয়েছে— কুণালের পোস্টের এই শেষ বাক্যটি নিয়ে বিতর্ক থাকবে। কারণ, পুলিশ-প্রশাসন এবং কেকে-র ঘনিষ্ঠদের সূত্রে ঘটনাপ্রবাহ যা জানা গিয়েছে, তাতে নজরুল মঞ্চ থেকে ধর্মতলার হোটেলে ফিরে আসেন প্রয়াত গায়ক। ফেরার পথে গাড়িতে শীত লাগায় তিনি গাড়ির বাতানুকূল যন্ত্র বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। কেকে-র হাত-পায়ের পেশিতেও খিঁচুনি হচ্ছিল বলে একটি সূত্রের দাবি। হোটেলে ফিরে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে অনেকে ছবি তুলতে চাইছিলেন। কিন্তু তাঁদের তিনি বারণ করেন। ঘটনাক্রম অনুযায়ী, তার পরেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটি সূত্রের দাবি, সোফায় বসতে গিয়ে কেকে হোটেলের ঘরে পড়ে যান। সেই পতনজনিত কারণে তাঁর মাথায় চোট লাগে। ক্ষতও তৈরি হয়। তার পরেই তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

কেকে-কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে কতটা সময় লেগেছিল, তা তর্কসাপেক্ষ। হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ কুণালের পোস্ট অনুযায়ী, ‘দু’ঘন্টার উপর সময় নষ্ট করা হয়েছে।’ ওয়াকিবহাল কেউই এই দাবিটি সত্য কি না, তা বলতে পারছেন না। ঘটনাস্থলে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা পুরো বিষয়টির আকস্মিকতায় এতটাই বিহ্বল যে, তাঁরাও সময়ের হিসেবনিকেশ করতে অপারগ।

তবে একটা অভিমত বলছে, অনুষ্ঠানের সময় কেকে যদি অসুস্থ বোধ করেই থাকেন বা নজরুল মঞ্চ থেকে হোটেলে ফেরার পথেও শীত করা বা পেশিতে খিঁচুনির কথা বলে থাকেন, তা হলে গাড়ি ঘুরিয়ে তাঁকে তখনই কেন কোনও হাসপাতালে নিযে যাওয়া হল না। আবার এর পাল্টা অভিমত হল, কেকে শারীরিক ভাবে অত্যন্ত ‘ফিট’। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ফলে তাঁর সেই অসুস্থতা সাময়িক বলে ভেবে নিয়ে থাকতে পারেন তাঁর সঙ্গীরা।

তবে নজরুল মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক সেকেন্ডের যে ভিডিয়োটি নেটমাধ্যমে অনেকে পোস্ট করেছেন, তাতে স্পষ্টতই কেকে-কে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। খানিকটা বিহ্বলও। সারা শরীর ঘর্মাক্ত। যখন তাঁকে ঘিরে ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখনও তাঁর পিছু-পিছু দৌড়চ্ছে উদ্বেল জনতার একাংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement