রাজনীতির ধার
West Bengal Assembly Election 2021

রাজনীতির ময়দানে নাম লিখিয়েছেন অনেক তারকা, কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণের নিশানায় কেন অভিনেত্রীরাই!

মিমি বা নুসরতকে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট দল নারীর অপমান নিয়ে সরব হয়। আবার দল সাপেক্ষে বদলে যায় আক্রমণের অভিমুখ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১ ০৭:২৪
Share:

শ্রাবন্তী, পায়েল, মিমি, নুসরত

ঠিক দু’বছর আগে যখন মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানের নাম ঘোষণা হয়েছিল নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে, তখনও ছিছিক্কারে ভেসে গিয়েছিল নেট দুনিয়া। ‘কোনও রাজনৈতিক জ্ঞান নেই, স্রেফ গ্ল্যামারের জোরে তাঁরা প্রার্থী হচ্ছেন’— উঠে এসেছিল এমনই মন্তব্য। তার সঙ্গে চলেছিল ব্যক্তিগত কুৎসা। ঠিক একই জিনিস ফের শুরু হয়েছে। সোমবার বিজেপিতে সরকারি ভাবে যোগ দিয়েছেন শ্রাবন্তী। বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। শ্রাবন্তী রাজনীতিতে আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রোলের শিকার হয়েছেন। তাঁর বিয়ে-সম্পর্ক সব কিছু নিয়েই চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। মিমে ছেয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ট্রোলড হয়েছেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেত্রী পায়েল সরকার, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সায়নী ঘোষও। নির্বাচনের মরসুমে অনেক পুরুষ অভিনেতাও রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু যশ দাশগুপ্ত বা দলবদল করা হিরণকে নিয়ে ট্রোল করা হলেও, এ ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়নি।

Advertisement

‘‘আঙুল তো মেয়েদের দিকেই ওঠে। সব কিছুতেই তাঁদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে টানাটানি। আর আমি এখন ট্রোলকে পাত্তা দিই না। ও সব নিয়ে ভাবার সময় নেই,’’ বলছেন মিমি। একই বক্তব্য নুসরত জাহানেরও। তাঁর মতে, ‘‘ট্রোলকে গুরুত্ব দেওয়ার মানে হয় না। আমি সাংসদ হওয়ার পরে ট্রোলিং আরও বেশি বেড়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য নিয়ে কেনই বা আমি মাথা ঘামাব?’’ কুকথা সহ্য করতে হয়েছে নুসরতকেও। নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি কাউকে কৈফিয়ত দেবেন না, স্পষ্ট জবাব অভিনেত্রীর।

বিজেপি-তৃণমূল-বাম সব দলেরই আইটি সেল আছে। প্রতিটি দলই অপরপক্ষকে তুলোধোনা করতে ব্যস্ত। যখন মিমি বা নুসরতকে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট দল নারীর অপমান নিয়ে সরব হয়। আবার দল সাপেক্ষে বদলে যায় আক্রমণের অভিমুখ। সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। মিমি, শ্রাবন্তীদের তাঁদের কেরিয়ারের শুরুর দিন থেকে চেনেন। সুদেষ্ণা বলছিলেন, ‘‘শ্রাবন্তীকে যে ভাবে ট্রোল করা হচ্ছে, তা একেবারেই সমর্থন করি না। একই ঘটনা মিমি-নুসরত যখন রাজনীতিতে এসেছিল, তখনও ঘটেছে। কারও বিরোধিতা করার অর্থ ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। আমি বডিশেমিং, ক্যারেক্টার শেমিংয়ের বিরুদ্ধে।’’ পুরুষ নয়, মেয়েদের নিয়েই চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয় মানছেন পরিচালক। ‘‘এখনও আমাদের সমাজ পুরুষপ্রধান। মেয়েদের ছোট করে সকলে আনন্দ পায়,’’ মত সুদেষ্ণার।

Advertisement

রাজ্য-রাজনীতির রঙের ভাগাভাগি কি পারস্পরিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে? শ্রাবন্তী, নুসরত, মিমি এক সময়ের বেস্টফ্রেন্ডস। তাঁদের গার্ল গ্যাংয়ের পার্টি বেশ চর্চিত ছিল। আগেকার মতো দেখাসাক্ষাৎ হয়তো তাঁরা করে উঠতে পারেন না কিন্তু বন্ধুত্বে ফাটলও ধরেনি। ব্যক্তিগত সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশেই থাকেন। শ্রাবন্তী নিজে উদ্যোগ নিয়ে মিমির সঙ্গে শুভশ্রীর সম্পর্ক সহজ করে দিয়েছিলেন। আবার মিমিও অনেক বিষয়ে শ্রাবন্তীকে পরামর্শ দিয়েছেন। কিছু দিন আগেই ছিল মিমির জন্মদিন। শ্রাবন্তী তাঁকে উইশ করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। দু’জনের সেই বার্তালাপে অন্তরঙ্গতার সুর ছিল স্পষ্ট। মিমি যেমন রাজনীতির সঙ্গে বন্ধুত্বকে গুলিয়ে ফেলেন না। সম্প্রতি গোয়ায় গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেখানে ছিলেন বিজেপির সদস্য পার্নো মিত্র। তাঁরা একসঙ্গে পার্টিও করেছেন।

এ দিন শ্রাবন্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। যে দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলন, সে দিন তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তৃণমূলে যোগ দেওয়া পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর বিপরীতে তাঁকে প্রার্থী করা হলে তিনি রাজি হবেন? শ্রাবন্তীর পছন্দের পরিচালক রাজ। তাঁরা থাকেনও একই আবাসনে। তখন শ্রাবন্তী পাশ কাটিয়ে জবাব দিয়েছিলেন, সবটাই নির্ভর করছে দলের সিদ্ধান্তের উপরে। রাজ যেমন স্পষ্ট জানালেন, বন্ধুত্বের উপরে রাজনীতির প্রভাব পড়বে না। ভোটের ময়দানে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, সময় বলবে। ২১ ফেব্রুয়ারি রাজের জন্মদিনে কিন্তু শুভেচ্ছাবার্তা দিতে ভোলেননি শ্রাবন্তী। আবার বিজেপিতে যোগ দেওয়া শ্রাবন্তীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজও। মেসেজের উত্তর দেননি সদ্য বিজেপিতে নাম লেখানো পায়েল সরকারও।

রাজনীতির রং যাই হোক, টলিউড যে ব্যক্তিগত সমীকরণে সেই প্রভাব ফেলতে ইচ্ছুক নয়, সেটাই আশার কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement