বনি সেনগুপ্ত।
৬ বছর থাকার পরেও শাসকদলে তিনি যেন ‘বহিরাগত’। নতুন দলে তাঁর স্থান কোথায়? কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের ভিডিয়ো বিতর্কে তাঁর ভূমিকা কী? আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে অকপট বনি সেনগুপ্ত।
প্রশ্ন: নেটমাধ্যমে এক দম অন্য ‘লুক’! অনুরাগীরা বলছেন ‘টু হট’...
বনি: (হেসে ফেলে) তাই? আমি যদিও কিছু না ভেবেই করেছি। সব সময় এক লুক দেখতে দেখতে অনুরাগীদেরও একঘেয়েমি আসে। আমিও বোরডমে ভুগি। তাই যখন যেমন পারছি ‘লুক’ বদলাচ্ছি।
প্রশ্ন: প্রত্যক্ষ রাজনীতি, দল বদল...সবটাই একঘেয়েমি কাটাতে?
বনি: রাজনীতিতে আমি নতুন নই। পরোক্ষ রাজনীতি করতাম। এ বার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিলাম। যদিও দল বদল একঘেয়েমি কাটাতে নয়।
প্রশ্ন: কেন দল বদলালেন?
বনি: ১০ বছর ধরে মা পিয়া সেনগুপ্ত তৃণমূল করছেন। এ বছর তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে বলেও দেওয়া হল না। খারাপ লেগেছে। আমায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হত প্রচারে। মুখ বুজে চলে যেতাম। তার পরেও দেখছি, দলে যেন জায়গা নেই! কোনও কথা থাকে না। বিপদে সাহায্য চেয়েও পাইনি। সুপ্রিমোর সঙ্গে কথা বলতে হত তাঁর অধস্তনদের মাধ্যমে। একটা সময়ের পরে আত্মসম্মানে বাধছিল। প্রতি পদে যেন অপমানিত হচ্ছিলাম। সেখানে বিজেপি-র সদস্য, নেতা-মন্ত্রীরা যথেষ্ট বিনয়ী, আন্তরিক। তাই ভেবেচিন্তে সরে গেলাম। ওঁরা সম্মান দিচ্ছেন আমায়। গুরুত্ব দিচ্ছেন। দিলীপ ঘোষ, সব্যসাচী দত্ত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে, ওঁদের অনুরোধে একদম শেষ মুহূর্তে বিজেপি-তে যোগ দিলাম। যোগদানের দিন ভাল করে সেজেগুজেও যেতে পারিনি (হাসি)।
প্রশ্ন: দিলীপ ঘোষ তো ‘রগড়ে’ দেবেন শিল্পীদের!
বনি: আমি বুঝতেই পারলাম না, কেন এমন মন্তব্য করলেন রাজ্য সভাপতি। খুব খারাপ লেগেছে। ওঁর মুখ থেকে এ ধরনের কথা আশা করিনি। দলের সবাই যথেষ্ট সম্মান করছিলেন। হঠাৎ এ রকম একটা মন্তব্য শিল্পীদের নিয়ে! একেবারেই ঠিক নয়। যিনি যে পেশাতেই থাকুন, দিনের শেষে তিনি মানুষ। দিলীপ ঘোষ নিজেই বলেছেন, সবাই দেশের নাগরিক। এর পর এই কথা আমি অন্তত মেনে নিতে পারছি না।
প্রশ্ন: নতুন দলের প্রচারে আপনাকে দেখাই যাচ্ছে না!
বনি: আমি কিন্তু যাচ্ছি। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যাচ্ছি না হয়তো। কিন্তু ওঁর হয়েই প্রচারে গিয়েছি। ২৮ থেকে ৩০ মার্চ নন্দীগ্রামে ছিলাম। পর পর যাব ডোমজুড়, সিঙ্গুর, আদিসপ্তগ্রাম, চুঁচুড়া।
প্রশ্ন: নতুন দল টিকিট দিল না?
বনি: দল টিকিট দিতে চেয়েছিল। আমি রাজি হইনি। হাতে খুব অল্প সময়। যে অঞ্চলেই দিক, সেখানে নিজের পরিচিতি তৈরি করে জেতাটা চাপ ছিল। একটা টিকিট পাওয়ার জন্য দলে ঢুকেই এত বড় ঝুঁকি নিতে চাইনি। তার থেকে এই নির্বাচনে প্রচারের দায়িত্ব সামলানোই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হল।
প্রশ্ন: অথচ যশ এসেই প্রার্থী! দাপিয়ে প্রচার করছেন। সারাক্ষণ আলোচনার কেন্দ্রে। খারাপ লাগছে না?
বনি: আমার একেবারেই খারাপ লাগছে না। আাবারও বলছি, প্রার্থী তালিকার শেষ ৮টা নাম যখন এসেছে তখন হাতে দাপিয়ে প্রচারের সময় নেই। হারার সম্ভাবনা খুব বেশি। তার থেকে এই সিদ্ধান্ত বুদ্ধিমানের নয়? আমি তো টিকিটের জন্য দল বদলাইনি! এতে বরং নতুন দলে সম্মান থাকল। যখন প্রার্থী হওয়ার উপযুক্ত হব, নিজে টিকিট চেয়ে নেব।
প্রশ্ন: কৌশানীর জিত আপনার হার হলে সত্যিই বড্ড চাপ হত...
বনি: (হাসি) বিশ্বাস করুন, আমার কোনও ইগো নেই। মা, কৌশানী বিরোধী দলে, তাই নিয়েও সমস্যা নেই। ঠিক তেমনই কৌশানী জিতলে আমি দুঃখ পাব না। শাসকদল থেকে যখন ফোন আসে, তখন আমি কৌশানীর পাশে বসে। আমায় জিজ্ঞেস করতেই বলেছিলাম, জিততে পারলে তুমি যে সম্মান পাবে তাতে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবে না। রাজি হয়ে যাও। আজ বিরোধী দলে যোগ দিয়েছি বলে কৌশানী জিতলে অপমানিত হব! কৌশানীর ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে কিন্তু সংবাদমাধ্যমে ওকেই প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছি। তা হলে সেটাও করতাম না।
প্রশ্ন: কৌশানীর সঙ্গে যা হল ঠিক হল? খারাপ লাগছে?
বনি: খুব খারাপ লাগছে। যা হয়েছে, একেবারেই ঠিক হয়নি। আমি বলেছি, পুরো ভিডিয়ো না দেখিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু অংশ কেটে নিয়ে ভাইরাল করা পরিণতমনস্কতা নয়। এটা বিজেপি-কে মানায় না।
প্রশ্ন: এক দলে থাকলে পুরোপুরি কৌশানীর পাশে থাকতে পারতেন...
বনি: থাকছি তো। সব মাধ্যমে ওর হয়েই বলেছি। পাশাপাশি এটাও কৌশানীকে বলেছি, তোমার বলার ভঙ্গি, শরীরী ভাষা ঠিক ছিল না। বিরোধী দল হয়েও আমি কিন্তু ওকে টিপস দিই। বোঝাই, কিছু বিষয় আছে সেটা নিয়ে মুখ না খোলাই ভাল। আসলে, কথার পিঠে কথায় অনেক অপ্রিয় প্রসঙ্গ মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়। ওরও সেটাই হয়েছে। তার জন্য এ ভাবে টার্গেট করাটাও ঠিক হয়নি।
প্রশ্ন: দুটো দলকেই দেখছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে ঢুকে যাচ্ছেন। '২১-এর নির্বাচনে পাল্লা ভারী কোন দিকে?
বনি: প্রার্থী ছাড়াই আমাদের ছোট জনসভায় হাজার দশেক লোক এসে যাচ্ছেন! এবং ওঁরা প্রার্থীর নাম পর্যন্ত জানেন। অনেক সময়েই শাসকদলের নাকি প্রার্থীর নামই জানেন না এলাকাবাসী। আমি প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে দেখেছি, বহু মুসলিম স্বেচ্ছায় বলছেন ‘জয় শ্রীরাম’! বাইরে থেকে এলেও বিজেপি কিন্তু বাংলা দখলের মনোভাব নিয়ে আসছে না। বাংলারই ভূমিপুত্রদের হাতে বাংলাকে তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করছে।
প্রশ্ন: অভিনয়ের কী হবে?
বনি: প্রার্থী হইনি বলে বাঁচোয়া। এপ্রিলে হয়তো একটা প্রোজেক্ট শুরু হবে। শ্যামসুন্দর দে-র সঙ্গে কথা চলছে। রাজা চন্দ পরিচালক। অঙ্কুশ হাজরা-ঐন্দ্রিলা সেন মলদ্বীপ থেকে ফিরলেই সবাই মিলে আলোচনায় বসব।
প্রশ্ন: শিবির বদলে ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার জায়গা আরও শক্ত হল?
বনি: এই কথাটা প্রায় সবাই বলছেন, বনি-কৌশানী সেফ খেলে নিল! ২ জনে ২ দলে। কিসের সেফ খেলা? সত্যিই বুঝতে পারছি না। আমরা যে, যার আদর্শ বেছে নিয়েছি। আমরা যত না ভাবছি, আমাদের হয়ে লোকে ভেবে ফেলছে বেশি। এটাই বিরাট সমস্যা!
প্রশ্ন: জুটি, সম্পর্কও যেমন ছিল তেমনি থাকবে?
বনি: একদম। যশ-নুসরত যদি পারেন আমরা নয় কেন? তা ছাড়া, আমি বলেই দিয়েছি, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। ঘরের ভিতরে ওর কোনও স্থান নেই। আগে আমরা সবাই যে ভাবে থাকতাম, সে ভাবেই থাকব। কৌশানীরও সায় আছে তাতে।