পারফর্ম করছেন শিল্পীরা।
মঞ্চে তখন আলো কম। আর চারিদিকে নীরবতা। একরাশ আশা নিয়ে মঞ্চের ও পারে যে লোকগুলো বসে আছেন, ওঁদের চোখে-মুখে একটাই ভাব, কী হয়, কী হয়...? একটা সরেঙ্গির আওয়াজ ভেসে আসতে শুরু করল।
হালকা আলো জ্বলতেই দেখা গেল বিরাট একটা বাক্সের ভিতর ছোট ছোট অনেকগুলো কুঠুরি। তার মধ্যেরই একটা কিউবিকলের ছোট্ট ছোট্ট আলোগুলো জ্বলে উঠলো। খুলে গেল লাল পর্দাটাও। সাদা ধবধবে ধুতি-পাঞ্জাবি, আর সাদা গোঁফের বয়স্ক একটা মানুষ কামঞ্চ বাজাচ্ছেন। বোঝা গেল, ওটা সরেঙ্গি নয় কামঞ্চরই আওয়াজ। আর ততক্ষণে সুরও ধরে ফেলেছেন কয়েকজন। এক এক করে ব্যাকগ্রাউন্ডে শুরু হয়ে গেল সরেঙ্গি, আর আলগোছার আওয়াজ। আর এই সবকটা আওয়াজকে নিয়ন্ত্রণ করছে ঢোল আর ঢোলকের শব্দ।
আরও অনেকগুলো কুঠুরির পর্দা খুলে গেল। হঠাতই ব্যাকস্টেজ থেকে করতাল হাতে ছুটে এসে একজন পুরো ব্যাপারটা পরিচালনা করতে শুরু করলেন। মাঝেমধ্যে কাকে যেন একটা লাইট আর সাউন্ড ঠিকঠাক করতে ইশারাও করে চলেছেন। বোঝা গেল, কন্ডাক্ট করছেন। একটা গমগমে গানের মেজাজ। সঙ্গে একটা থিয়েট্রিক্যাল এক্সপিরিয়েন্স। সুফি কবি বুল্লেহ শাহের 'অলফত ইন বিন উন বিন' গানটা ছাপিয়ে গেল হাইওয়ে থেকে আসা বিরক্তিকর ক্যাকোফোনি।
আরও পড়ুন, সহজিয়া সুর আর দরদিয়া আলাপে মাতোয়ারা শহর
এ ভাবেই সদ্য কলকাতায় পারফরম্যান্সটা জমিয়ে দিলেন রাজস্থানের "মনগনিয়ার সিডাকশন"। করতাল হাতে যিনি পরিচালনা করতে এলেন তিনি দায়েভু খান। আর যাঁর প্রচেষ্টায় সেই ২০০৬ সাল থেকে মনগনিয়ার সিডাকশন এর পথচলা শুরু তিনি এ দেশের নামজাদা থিয়েটার ডিরেক্টর রয়স্টেন আবেল।
এই মনগনিয়ার গায়কদের একটা পারফরম্যান্স রয়স্টেনকে খানিকটা সিডিউসই করেছিল। সে দিনই ঠিক করে ফেলেছিলেন যে অন্যদেরকেও শোনাবেন। আর নাম দিয়ে দেন মনগনিয়ার সিডাকশন।
বিশালাকয় বাক্সটার ভিতরে ছোট্ট ছোট্ট ৩৩ টি কিউবিকল। প্রত্যেকটাতেই একজন করে গায়ক নয়তো একজন করে বাজনদার। ৭০ মিনিটের লম্বা পারফরম্যান্সে প্রত্যেকের ভূমিকা ছিল। যাঁর যখন ভূমিকা তাঁর কুঠুরির আলোটাও জ্বলে উঠবে, পর্দাটাও খুলে যাবে।
মনগনিয়ার গায়কদের নিয়ে যিনি এই প্রোডাকশন পরিচালনা করেন তিনি দায়েভু খান। পারফরম্যান্স শেষে বললেন "মনগনিয়ার সঙ্গীতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। আর তাই এতোটা দরদ দিয়ে গাইতে পারি।"