ক্ষীরের পুতুল
টলিউডের ঘুম কেড়ে নিয়েছে প্রতি সপ্তাহে দু’দিনের লকডাউন। ৮৪ দিন লকডাউনের পরে ‘নিউ নর্মাল’-এর শর্ত মেনে শুটিংয়ে ফেরায় স্বস্তি ফিরেছিল। এক মাস কাটতে না কাটতেই ফের সিঁদুরে মেঘ। তার উপরে এখন ১২ ঘণ্টা শুটিংয়ের বদলে সর্বোচ্চ ১৪ ঘণ্টা শুটিং করতে হচ্ছে। ‘জয় বাবা লোকনাথ’ ধারাবাহিকের লোকনাথ অর্থাৎ ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় রবিবার শুটিংয়ে পৌঁছে বললেন, ‘‘সকাল সাতটায় পৌঁছে মেকআপ করে ফ্লোরে যাই। দুটোর সময় লাঞ্চের আধ ঘণ্টার বিরতির পরেই ফের টানা রাত আটটা অবধি শুটিং। একটার জায়গায়, কম করে দেড়খানা এপিসোডের শুটিং করতে হচ্ছে রোজ।’’
সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজের মাঝে দু’দিন লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকায় ধারাবাহিকের ব্যাঙ্কিংয়ের চাপ তৈরি হয়েছে। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে নতুন ফরম্যাটে ১৫টি করে এপিসোড ব্যাঙ্কিং করার উপায় বার করেছেন নির্মাতারা। ‘এখানে আকাশ নীল’-এর চিত্রনাট্যকার পারমিতা মুনশি বললেন, ‘‘অনেক ছোট দৃশ্য নয় বরং একটি বা দু’টি দীর্ঘ দৃশ্যতেই এখন এপিসোড শেষ। এতে প্রোডাকশনের খরচও কমছে। ডাবল ইউনিট শুটিংও হচ্ছে।’’
লকডাউনের আগেই একটি চ্যানেল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পাঁচ দিনের বদলে সপ্তাহে সাত দিনই দেখানো হবে নতুন শুরু হওয়া ধারাবাহিকগুলি। আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে নতুন ধারাবাহিক ‘ক্ষীরের পুতুল’। গ্রাফিক্স নির্ভর ধারাবাহিকে বেশি যত্নের প্রয়োজন। এতে কাজের মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা কতটা? পরিচালক অমিত দাসের কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্মের কাছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষীরের পুতুল’কে পৌঁছে দিতে প্রতি দৃশ্যে যত্ন নিতে হচ্ছে। পাঁচটা এপিসোড ব্যাঙ্কিং করতে, ১০ দিন শুটিং করতে হবে।’’ এ ক্ষেত্রে এপিসোড ঠিক সময়ে পৌঁছনো গেলেও তাঁর সমস্যা অন্যত্র, ‘‘কী ভাবে শুটিং করলে পরে সহজে গ্রাফিক্সের কাজ করা যায়, সেটা অনেক টেকনিশিয়ানই জানেন না। লোক কম থাকায় একজন সহকারী নিয়েই ডাবল ইউনিট শুটিং করলাম একদিন।’’
ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রদের মধ্যে কারও সংক্রমণ হলে কী হবে, তা নিয়েও রয়েছে দুশ্চিন্তা। নন টেলিকাস্ট আটকাতে পারমিতা মুনশির মত, ‘‘এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই প্রধান চরিত্রের পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রের ট্র্যাক খুলে রাখা হচ্ছে।’’
দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন হলে বাজেট সমস্যাও প্রকট হবে। শুটিংয়ে ভাড়া দেওয়া হয় এমন এক বাড়ির মালিক বললেন, ‘‘আগামী ৩০ জুলাই থেকে আট দিনের শুটিংয়ের শিডিউল থাকলেও লকডাউনের জন্য পনেরো দিন ভাড়া নেওয়া হয়েছে বাড়িটা।’’ প্রযোজনা সংস্থা ম্যাজিক মোমেন্টসের অন্যতম কর্ণধার শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন হলে শুটিংয়ের বাজেট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তেমন পরিস্থিতি বুঝলে স্টুডিয়ো মালিকের সঙ্গে কথা বলে রফা করতে হবে।’’
সব মিলিয়ে লকডাউনের ভ্রুকুটি ফের চিন্তায় ফেলেছে টেলিপাড়াকে। নন টেলিকাস্টের আশঙ্কাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি করে ভাবাচ্ছে তাঁদের।