জ্যাকেটে জমজমাট

আজ ১৫ ডিগ্রি। এই সময় ট্রেন্ডি জ্যাকেটের। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।এক জ্যাকেটে দুই শরীর? নাকি লেয়ারিং-এ শেয়ারিং? শীতে ফ্যাশনের হাত ধরে কলকাতার নিউমার্কেট থেকে শপিং মল-য়ে লেগেছে জ্যাকেট প্রেমের নেশা। ‘বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট’ নিয়ে মেতেছে কলকাতার জেন ওয়াই। যাদবপুরের প্রথম বর্ষের ইংরেজির ছাত্রী আরাত্রিকা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে শেয়ার করে অনলাইনে কিনেছে ‘বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট’। অনলাইনও ভরে গেছে এই কেতাবি জ্যাকেটে। আটশো থেকে তিন হাজারির নানা জ্যাকেট এখন জেন ওয়াই থেকে এক্স জেনের হট ফেভারিট!

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share:

এক জ্যাকেটে দুই শরীর? নাকি লেয়ারিং-এ শেয়ারিং?

Advertisement

শীতে ফ্যাশনের হাত ধরে কলকাতার নিউমার্কেট থেকে শপিং মল-য়ে লেগেছে জ্যাকেট প্রেমের নেশা। ‘বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট’ নিয়ে মেতেছে কলকাতার জেন ওয়াই। যাদবপুরের প্রথম বর্ষের ইংরেজির ছাত্রী আরাত্রিকা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে শেয়ার করে অনলাইনে কিনেছে ‘বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট’। অনলাইনও ভরে গেছে এই কেতাবি জ্যাকেটে। আটশো থেকে তিন হাজারির নানা জ্যাকেট এখন জেন ওয়াই থেকে এক্স জেনের হট ফেভারিট!

“দুজনে টাকা জমিয়ে আমরা বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট কিনেছি। এটা একটু ওভারসাইজ হওয়ায় সায়নও পরতে পারে, আমিও পরতে পারি। আর হঠাত্‌ করে খুব বেশি শীত করলে আমরা একসঙ্গে দুজনেই ওটা গায়ে চড়াই, লেয়ারিংও হল শেয়ারিংও হল” চোখ টিপে মুচকি হেসে বললেন আরাত্রিকা।

Advertisement

বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট

আসলে কেমন এই ‘বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট’? ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত বলছেন, “ওভারসাইজ হওয়ায়, ছেলে-মেয়ে যে কেউ পরতে পারেন বলে এই ধরনের জ্যাকেটকে মজা করে বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট বলা হচ্ছে। মেয়েরা যদি এটা পরে তার ওপরে কোমরে যদি একটা স্লিম বেল্ট পরে নেন তাহলে একটা স্টানিং লুক তৈরি হবে।” বোহেমিয়ান লুক চান? ম্যাক্সি স্কার্টের সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে ওভারসাইজড জ্যাকেট পরুন। বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট পরলে পায়ে অবশ্যই ওয়েজ হিল পরতে বলছেন অভিষেক।

আইটি সেক্টরের নালন্দা সেন কলকাতার কম ঠান্ডার রাতে জ্যাকেট ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেন না। তিনি বলছেন, “কলকাতায় ঠান্ডা খুব কম। সেক্টর ফাইভের হাল্কা শীত হাওয়ায় সঙ্গে যদি একটা স্টাইলিস্ট জ্যাকেট থাকে ব্যাস! হঠাত্‌ করে পার্টিতে যেতেও আর আলাদা করে ভাবতে হয় না আমাকে। ভিতরে যাই পরে থাকি, আমার ঘন লাল রঙের বোলেরো জ্যাকেট অফিসের সব ক্লান্তি মুছিয়ে একটা ফ্রেশ লুক এনে দেয়, আড্ডার মেজাজ তৈরি করে দেয়।” অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যর শীতের ওয়ার্ড্রোবে জ্যাকেট ইজ আ মাস্ট। “জ্যাকেট এমনই একটা পোশাক যা নিয়ে নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। আমি সাদা শার্ট, জিনস্-এর সঙ্গে টাই দিয়ে ডেনিম জ্যাকেট পরতে পারি।” ফ্যাশন দুনিয়ায় ইন্দো-ওয়েস্টার্ন লুকে আজকাল জ্যাকেট নিয়ে নানান এক্সপেরিমেন্ট চলছে বলে জানাচ্ছেন অভিষেক দত্ত। আর শীত মানেই ‘জ্যাকেট সিজন।’ স্পষ্ট করে বললে, কাছে আসার, উষ্ণতার বুনিয়াদ। কাট অনুযায়ী পোশাক বুঝে জ্যাকেট পরুন।

বোম্বার জ্যাকেট

হাতের নাগালেই রয়েছে বোম্বার জ্যাকেট। যার অন্য নাম ফ্লাইট জ্যাকেটও বটে। এক সময় এই জ্যাকেট পাইলটদের কথা ভেবেই তৈরি হয়েছিল। এখন তা ফ্যাশনওয়্যার হিসেবে জনপ্রিয়। আলতো আলতো হিমেল হাওয়ায় শরীর ঢাকতে অভিষেক বলছেন সলিড কালারের, হেভি লিনেনের এই বোম্বার জ্যাকেট গায়ে চড়াতে। পার্টির ক্ষেত্রে লম্বা গাউন, জাম্প স্যুট বা পালাজোর সঙ্গে এই জ্যাকেট আপনার শরীরে শীতকে আরও ঘন করে তুলবে। জ্যাকেটের সঙ্গে অ্যাক্সেসরিজও খুব জরুরি। তাই পার্টির বোম্বার জ্যাকেটের সঙ্গে থাক প্ল্যাটফর্ম হিল। জ্যাকেটের সঙ্গে স্কার্ভেরও কোথায় যেন একটা ভাব আছে বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা। রং বুঝে তাই জ্যাকেটের শরীরে স্কার্ভ আপনার সাজকে সকলের চোখে আলাদা করবে। আর শীত যদি বেশি হয়ে তাহলে লেদার বোম্বার জ্যাকেট পরুন।

মোদী জ্যাকেট

পশ্চিমী পোশাক হলেও এখন জ্যাকেটের ক্ষেত্রে একটা এথনিক লুক তৈরির প্রবণতা দেখা দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চন্দ্রাণী। তিনি বলছেন,“আগেকার দিনের নেহরুর জ্যাকেট এখন ‘মোদী’ জ্যাকেট হয়ে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। লং কুর্তি আর জিনস্-এর সঙ্গে এই জ্যাকেট পরে ফেলুন। মোটা খদ্দরের ছাই বা লাল রঙা এই ‘মোদী জ্যাকেট’ এথনিক লুক নিয়ে আসবে।” তবে শীতের ধূসর রঙে সাদা বা ক্রিম রঙের জ্যাকেট ব্যবহার না করাই ভাল, বড্ড একঘেয়ে হয়ে গেছে এই রং, বলছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা।

কিমোনো জ্যাকেট

এখন বাজার গরম ‘কিমোনো-ইন্সপায়ার্ড’ ফ্যাশনে। আজকের কিমোনো হল জাপানের ট্র্যাডিশনাল পোশাক। ষাট-সত্তরের দশকে এই জ্যাকেটের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। একটু পুরনো বা ভিনটেজ লুকে ফিরে যেতে মন চাইছে? তা হলে কিমোনো জ্যাকেট বেস্ট। শর্ট স্কার্টের সঙ্গে এই জ্যাকেট পরুন। ফ্যাশন ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা বলছেন “এখন স্কিন টাইট প্যান্ট আর লেগিনস্-এর খুব চল। এই ধরনের প্যান্টের সঙ্গে ঢোলা কিমোনো জ্যাকেট শীতের উষ্ণতাকে ছড়িয়ে দেয়।”

বানজারান জ্যাকেট

জ্যাকেটের দুনিয়াতেও সাবেকিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতাকে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু পশ্চিমী পোশাকই নয়, শাড়ির সঙ্গে শার্টের আকারে, ফুল হাতা স্কিন টাইট টি শার্ট দিয়ে বা বানজারাদের কারুকাজ ভরা ব্লাউজের মতো করে তৈরি জ্যাকেট এখন পার্টি, বিয়েবাড়িতে পরার খুব চল বলে জানাচ্ছেন চন্দ্রাণী। তিনি বলছেন, এই জ্যাকেট ব্লাউজের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোমরের ওপর অবধি দৈর্ঘ্য হলেই শাড়ির সঙ্গে খুব চমত্‌কার ভাবে এই বানজারান জ্যাকেট মানিয়ে যাবে। শীত মানেই চাপা রোম্যান্সের উত্‌সব। আর এই উত্‌সবে আপনার বানজারান জ্যাকেট বন্দি শাড়ি ঘেরা শরীর নেশা ছড়াবেই।

জরুরি টিপস্

• উজ্জ্বল রঙের জ্যাকেটের ভেতরের পোশাকের রং হাল্কা হতে হবে। গাঢ় রং চলবে না

• বানজারান জ্যাকেটে পিঠ খুলে রাখা চলবে না। শীতে পোশাক ঢেকেই সেক্সি লুক আনা যায়। অযথা পিঠ খোলার দরকার নেই

• বাংলার শীতে উল বা লেদারের জ্যাকেট এড়িয়ে চলাই ভাল

• জ্যাকেট পরে ভিতরে পুল ওভার পরবেন না। মোটা দেখায়

শ্রাগ বাহার

জ্যাকেটের জমজমাট এলাকায় হাল্কা জ্যাকেট হিসেবে শ্রাগের কদর দিন দিন বাড়ছে। এ বিষয়ে ফ্যাশন ডিজাইনাররা সকলেই বলছেন শীতের শরীরে রঙিন ঝরনা ঝরাতে। “রানি, হলদে, স্লেট রং, পার্পল-যে সমস্ত রং আমরা শীতকালে সচরাচর পরি না সেগুলোই এ বার মন খুলে পরুন, শীতের মজা মনে নিন” হাসতে হাসতে বলছেন চন্দ্রাণী। আর ফ্যাব্রিকের মধ্যে কলকাতার শীতে কটন সিল্ক, মোটা লিনেন, তসরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শাড়ি থেকে জিনস্ যে কোনও পোশাকেই শ্রাগ চলে যায়। বিশেষ করে যারা মোটা তাদের জন্য শ্রাগ বা জ্যাকেট শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঢেকে দেয় বলে অভিষেক মোটাদের জন্য জ্যাকেটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement