Tota Roychoudhury

Tota: শুরু থেকেই বাতিলের খাতায়! সবাই বলতেন, ও তো শখে অভিনয়ে এসেছে: জন্মদিনে টোটা

নিজের জীবনটাকে কী ভাবে দেখেন টোটা রায়চৌধুরী? কী-ই বা ভাবেন অভিনয়ের কেরিয়ার নিয়ে? জন্মদিনে নিজেই জানালেন পর্দার ‘ফেলুদা’।

Advertisement

টোটা রায়চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২২ ১৬:২২
Share:

টোটা রায়চৌধুরী

প্রতি বছর এই একটি দিন আমার নিজেকে আঁতিপাতি খুঁজে দেখার দিন। নিজেকে, নিজের অভিনয় জীবনকে আবারও উপলব্ধি করার দিন। একটা বছর এগিয়ে যাওয়ারও দিন। জন্মদিন মানেই হুল্লোড়, তেমনটা তো কোনও দিনই নই। আগের রাতে থেকে উদ্‌যাপন, পার্টি— এটাও হয়নি। আমি বরাবরই পরিবার-ঘেঁষা। এ দিনটায় আরও বেশি করে পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে কাটাই।

Advertisement

ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া জীবনে কিছুই হয় না— এটা আমার বিশ্বাস। সকাল সকাল তাই দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরেই শরীরচর্চা। ওটা ছাড়া আমি অচল। আর শরীর সঙ্গ দিলে অনেক দিন পর্যন্ত দৌড়াতে পারব। মা পায়েস রেঁধেছেন। সকালে সেই দিয়ে মিষ্টিমুখ। আজ কোনও খাবারে না নেই। দুপুরে বাঙালি পরিবারে যে রকম পাঁচ তরকারি, ভাজা, মাছ, মিষ্টি দিয়ে এলাহি আয়োজন থাকে, আমার জন্য সেটাই হবে। বিকেলে ভাই, ভাইয়ের বৌ, পরিবারের বাকিদের নিয়ে কেক কাটা। আড্ডা দেব। রাতে সপরিবারে রেস্তরাঁয় নৈশভোজ।

লোকে বলে, টোটার তো গতে বাঁধা জীবন। সত্যিই তাই। কোনও দিন পরিবারের বাইরে গিয়ে জন্মদিন পালন করিনি। বোর্ডিং স্কুলে যখন পড়তাম, তখনও এই সময়ে গরমের ছুটি। ফলে, বাড়ির বাইরে জন্মদিন পালনের প্রশ্নই নেই। অনেকে এ-ও জিজ্ঞেস করেন, কোনও দিন বেহিসেবি হতে ইচ্ছে করেনি? কিংবা বিশৃঙ্খল হতে? হলে হয়তো আরও বেশি উন্নতি করতে পারতাম! এত কঠোর অনুশাসন মেনে চলতে চলতে জীবনটাই যে উপভোগ করা হল না! আসলে স্বামীজির ভক্ত তো আমি! আজ থেকে নয় সেই ছোটবেলা থেকে। ওঁর কর্মযোগের অনুপ্রেরণায় জীবন কাটাতে পারলে বুঝব যে, যথার্থ রূপে সফল হয়েছি। তা ছাড়া, আমার কাছে উপভোগ তখনই যথার্থ, যখন আমি পরিবারের সামনে এবং আয়নার সামনে টানটান হয়ে, নিজের প্রতিবিম্বের চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতে পারব। সেটাই যদি না পারলাম, তা হলে আর কিসের উপভোগ! আসল সাফল্য তো নিজেকে না বদলে উন্নতির চেষ্টা করা। তাতে যতটা পাওয়া যায়, ততটাই যথেষ্ট।

Advertisement

আমার জীবন মানে আমার অভিনয় জীবনও। ২৫ বছর হল এই পেশায়। জন্মদিনে সে দিকেও ফিরে তাকাই। সঙ্গে সঙ্গে একটি গানের পংক্তি মনে পড়ে— ‘ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব’। পৌঁছে গিয়েওছি। শুরু থেকেই আমি সবার বাতিলের খাতায়। সবাই বলতেন, ও তো শখে এসেছে। কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। আমার সেনাবাহিনীতে ভর্তির কথা ছিল। হঠাৎই অভিনয়ে। সেই ‘বাতিল’ মানুষটাই নিজেকে প্রমাণিত করতে অনেক লড়াই করেছে। নিজেকে তৈরি করে আস্তে আস্তে এই জায়গায় পৌঁছেছে। আশা রাখি, আগামী দিনে শরীর সুযোগ দিলে আরও অনেকটা পথ পেরোতে পারব।

সমালোচকেরা এর পরেই জানতে চান, ‘বাতিল’ বলেই কি আমার প্রতিভার অপব্যবহার হয়েছে? জন্মদিনে কোনও ভুল কথা নয়। এতগুলো বছর পেরিয়ে উপলব্ধি করতে পারি, অপব্যবহার দু’তরফেরই ছিল। এক হাতে তো তালি বাজে না। আসলে আমি অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে ঠকেছি। এটা আমাদের পারিবারিক ‘দোষ’! আমার বাবা, ভাইরাও লোককে বিশ্বাস করে ঠকেছেন, ঠকেন। তবু আমরা মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস সরাতে পারি না! আর তাই অভিযোগও জানাই না। আগে অনেক সময়েই অনেক কড়া কথা বলে ফেলতাম। অতিমারির পরবর্তী সময়ে বুঝেছি, জীবন খুব ছোট্ট। আমাদের হাতে সময় কম। এ দিকে, সমস্যার পাহাড়। এই কারণেই সবাই এত অসহিষ্ণু। নেটমাধ্যমে তার ছাপও পড়ে। সবাই কটাক্ষের শিকার হন। কটাক্ষ করেনও। আমি ধীরে ধীরে পরিশীলিত, মার্জিত, নম্রভাষী হওয়ার চেষ্টা করেছি।

এ বারের জন্মদিনে তাই এটাই বুঝলাম, টোটা রায়চৌধুরী ‘বুড়ো’ নয়, সব দিক থেকেই ‘বড়’ হয়ে গিয়েছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement