অনুপম, ঋদ্ধি এবং ঋতব্রত ।
রাজ্য তথা দেশ জুড়ে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। হাসপাতালেও শয্যা পেতে পেতে রোগীর শ্বাসবায়ু ফুরিয়ে আসছে। তার মধ্যে অক্সিজেনের কালোবাজারিতে নাকাল রোগীর পরিবার। এমতাবস্থায় কোভিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে কোভিড ইন্টেরিম রিলিফ সেন্টার তৈরি করে ফেললেন টলিউডের কিছু তারকা।
কন্দর্পপুর ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে আপাতত কোভিড রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হল। আজ থেকে চালু করা হবে সেই হেল্পলাইন নাম্বার। এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনুপম রায়, তাঁর স্ত্রী পিয়া চক্রবর্তী, ঋদ্ধি সেন, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুষা বিশ্বনাথন ও রাজর্ষি নাগ।
ঋতব্রত বললেন, ‘‘হেল্থ অ্যান্ড ইকোডিফেন্স সোসাইটি নামে একটি এনজিও এবং বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে একত্রে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে করোনায় আক্রান্তরা বিনামূল্যে অক্সিজেনের পরিষেবা পাবেন। এখানে চিকিৎসক, নার্সও থাকবেন। হাসপাতালে বেড পেতে যে সময়টা লাগছে, তখনই অনেক রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল কমে যাচ্ছে... এই মাঝের সময়টা খুব বিপজ্জনক। সেই সময়টা অক্সিজেন সাপোর্ট যাতে দেওয়া যায়, সেটাই আমাদের চেষ্টা।’’ রোগীর পরিবার রোগীর নাম, ডিটেলস ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল কত জমা দিয়ে যোগাযোগ করলে, চিকিৎসকেরা রোগীর অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রিলিফ সেন্টারের ছবি পোস্ট করে ঋদ্ধি সেন লিখেছেন, ‘‘বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন কিট, ইমার্জেন্সি ওষুধও চলে এসেছে। শনিবার থেকেই সব তথ্য পেয়ে যাবেন আপনারা।’’ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে উদ্যোক্তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
এ দিকে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে অক্সিজেন লঙ্গরের ব্যবস্থা করেছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অক্সিজেন বা হাসপাতালে বেডের আবেদন দেখে নিজে যোগাযোগ করে তাঁদের সাহায্য করছেন রাজ চক্রবর্তী। কঠিন সময়ে সাহায্য পেয়ে মানুষের কৃতজ্ঞতায় ভরে যাচ্ছে রাজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজও। তবে এই সহযোগিতার হাত বাড়াতে গিয়ে তারকারাও কম নাকাল
হচ্ছেন না।
অনেক দিন ধরেই ‘দেশের নামে’ নাটকের বন্ধুদের সঙ্গে কোভিড রোগীদের সাহায্য করছিলেন ঋতব্রত। কিন্তু অক্সিজেন জোগাড় করতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সাক্ষী হন অভিনেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে একটা সিলিন্ডারের দাম সর্বোচ্চ ৮৯০০০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়েছে। এমনও হয়েছে অনেকের সঙ্গে যে, অক্সিজেন পাওয়ার জন্য ১০০০০ টাকা অগ্রিম দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু টাকাটা ট্রান্সফার করার পরে আর ফোন ধরেননি অক্সিজেন সাপ্লায়ার। সেই সব নাম্বার, ডিটেল সেভ করে রেখেছি।’’ আপৎকালীন অবস্থা কাটলেই আইনি পদক্ষেপ করবেন বলে জানালেন ঋতব্রত। আপাতত বিনামূল্যে মানুষকে শ্বাসবায়ুর জোগান দেওয়ার কাজেই তাঁরা ব্রতী।
এই অতিমারির মাঝে মানুষের কথা ভেবে কয়েকদিনের মধ্যে ইমার্জেন্সি সার্ভিস গড়ে ফেলা সহজ কাজ নয়। সব পেরিয়ে আজ তাঁরা সফল। রাজনৈতির রঙের ঊর্ধ্বে উঠে একজোট হয়ে কাজ করছে টলিউড। মৃত্যুর সঙ্গে যু্দ্ধে রত কত রোগীর আয়ু লেখা হবে এঁদের হাতে...