অঙ্কুশ এবং শিবপ্রসাদ। ছবি: দেবর্ষি সরকার।
কে পুজোয় আসবে, কে ক্রিসমাসে— সবটাই অনেক আগে থেকে ঠিক হয়ে যায় এখন। তার পর থেকেই চলতে থাকে চাপানউতোর। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ঢাক পেটানো বা মিডিয়ায় প্রতিপক্ষকে একহাত নিয়ে নেওয়া...
এ বার পুজোয় ছ’টা ছবি একসঙ্গে রিলিজ় করেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই বক্স অফিস দখল নিয়ে প্রযোজক-পরিচালকদের মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কোন ছবি বক্স অফিসে ভাল করল সেই প্রশ্ন না হয় মুলতুবি রাখা গেল। বরং ছবিকে ছাপিয়ে উঠে আসছে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ। আনন্দ প্লাসের এক সাক্ষাৎকারে প্রসেনজিৎ় চট্টোপাধ্যায় তাঁর ছবি ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’কে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। অন্য ছবি প্রসঙ্গেও মতামত দেন। প্রসেনজিতের মন্তব্য নিয়ে পাল্টা বক্তব্য পেশ করেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তার পরেই ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে শোরগোল পড়ে যায়। একাধিক পক্ষে ভাগ হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মন্তব্য চলতে থাকে। প্রশ্ন উঠছে একসঙ্গে ছ’টা ছবি রিলিজ় করানো কি সত্যিই জরুরি ছিল? আনন্দ প্লাসের তরফে ইন্ডাস্ট্রির কয়েক জনের কাছে এই রকম কিছু প্রশ্নই রাখা হল।
অঙ্কুশ হাজরা (অভিনেতা)
প্র: বক্স অফিসের ব্যবসা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটা বিভাজন তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?
উ: পুজোর আগে থেকেই এগুলো দেখছি। একটা জিনিস বলতে পারি, এতে আখেরে ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি হচ্ছে। বলিউডে দুটো বড় ছবি একসঙ্গে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা কম ঘটে। ওদের হাতে পাঁচ-ছ’হাজার সিনেমা হল। তাও ওরা দুটো বড় ছবি একসঙ্গে রিলিজ় করে না। আমরা এখানে ছ’টা ছবি রিলিজ় করছি। যথারীতি ব্যবসা ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে। পুজোর রিলিজ়ের বিষয়টা ক্রমশ ইগোর লড়াইয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্র: কেন বলছেন এ কথা?
উ: এটাই তো সত্যি। আমি ক’জনকে হারিয়ে দিলাম, এটা নিয়েই ভাবছে সকলে। অন্যের চেয়ে ১০ লক্ষ টাকা বেশি ব্যবসা করেই খুশি হয়ে যাচ্ছে। ভাবছে না, বছরের অন্য সময়ে রিলিজ় করলে আমার ছবি আরও অনেক বেশি ব্যবসা করত। ছ’টার বদলে তিনটে ছবি রিলিজ় করলে যে ছবিটা দু’কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, সেটা নিশ্চিত ভাবে তিন কোটি বা তারও বেশি ব্যবসা করত। আমি কারও নাম নিচ্ছি না, কিন্তু নিজেই নিজের ছবির টিকিট কেটেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইন বুকিংয়ের স্ক্রিনশট দিয়ে বাহবা পেতে পারে। এই সবই তো চলছে।
প্র: আপনি যে প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে ছবি করেন, তারাই তো তিনটে ছবি রিলিজ় করেছে। সে ক্ষেত্রে কিছু বলছেন না কেন?
উ: একেবারে যে বলিনি তা নয়। কিন্তু কোন ছবি কখন রিলিজ় করবে সেই সিদ্ধান্তটা প্রযোজকেরাই নেন। আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রির সকলের বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বছরে আরও অনেক সপ্তাহ আছে, গাদাগাদি না করে অন্য সময়েও রিলিজ় করা যায়। এখন যেটা হচ্ছে, তাতে ব্যবসার চেয়ে ইগোর লড়াই আর দলাদলিটাই প্রকট হয়ে উঠছে।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (পরিচালক)
প্র: পুজোর সময় ছাড়াও যে অন্য সময়ে বাংলা ছবি ভাল ব্যবসা দিতে পারে সেটা আপনিই প্রমাণ করেছেন। তা সত্ত্বেও প্রযোজিত ছবি পুজোয় নিয়ে এলেন কেন?
উ: আমার প্রোডাকশন হাউজ়ে অনেক ধরনের ছবি তৈরি হয়। কোনওটা পুজোয়, কোনওটা ক্রিসমাসে, কোনওটা আবার গরমের সময়ে রিলিজ় করবে। আর আমি তো কবে ছবি মুক্তি পাবে তা সাধারণত এক বছর আগেই জানিয়ে দিই।
প্র: যদি একাধিক ছবি একসঙ্গে মুক্তি না পেত, তা হলে ব্যবসা ভাগাভাগি হতো না। আপনার কী মত?
উ: এটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। ব্যবসা ভাগাভাগি হতেও পারে, না-ও পারে। ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ ফিল গুড ছবি। পুজোর আমেজে এই ধরনের ছবি লোকের ভাল লাগবে ভেবেই রিলিজ় করেছি।
শ্রীকান্ত মোহতা (প্রযোজক)
প্র: পুজোর ছ’টা ছবি মুক্তি পেল। এতে কি কোনও ছবি ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারল?
উ: যদি কম ছবি থাকত তা হলে ভাল ছবিগুলো আরও বেশি ব্যবসা করতে পারত, এটুকুই। আর খারাপ ছবি কোনও দিনই ভাল ব্যবসা করতে পারবে না। ছবি যদি ভাল হয়, তা হলে যে কোনও সময়ে রিলিজ় করলেই সেটা চলবে।
প্র: তা হলে আপনার সংস্থাই তিনটে ছবি রিলিজ় করল কেন?
উ: ভাল ছবি দেখার লোক আছে বলেই করলাম। ‘হামি’, ‘উমা’, ‘দৃষ্টিকোণ’, ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ তো প্রমাণ করে দিয়েছে, ভাল ছবি যখনই মুক্তি পাক, দর্শক দেখবেন। একটা জিনিস হয়েছে, ভাল ছবি দেখতে গিয়ে টিকিট না পেয়ে দর্শক খারাপ ছবির টিকিট কেটে ফেলেছেন! অনেকে আবার ফ্রি-তে টিকিট বিলি করেও হল ভরাতে পারেনি এমন ঘটনাও ঘটেছে।