মিমি, পরমব্রত এবং শ্রাবন্তী।
লাল টুপি, লাল জামা, পিঠের ব্যাগে উপচে পড়া রংবেরঙের রাংতায় মোড়া উপহার নিয়ে হাজির সান্তা ক্লজ়। ভাল বাচ্চাদের মোজায় টুপটাপ খসে পড়বে সেই উপহার আর দুষ্টু বাচ্চাদের ভাগ্যে শুধুই লবডঙ্কা! বছরশেষে সব দুষ্টুমি দূরে সরিয়ে শান্তশিষ্ট হয়ে মোজা ঝুলিয়ে বসে আছেন সেলেবরাও। সারা বছর বক্স অফিস, ফোটোশুট, ইন্টারভিউ সামলে এ বার সেলেবদের নিজেদের জন্য কিছু উইশ করার পালা...
মিমি চক্রবর্তীর পড়াশোনা কনভেন্ট স্কুলে। তাঁর ছোটবেলায় ক্রিসমাস বড় ইভেন্ট ছিল। ‘‘প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। ২০ তারিখ আমাদের শেষ ক্লাস হতো। তার পরে ছুটি পড়ে যেত। শেষ দিন আমরা বাড়ি থেকে সকলের জন্য খাবার নিয়ে যেতাম। প্রতি ক্লাসে ৫০-৬০ জন স্টুডেন্ট থাকত। তাই এক এক জন প্রায় দশজনের জন্য খাবার নিয়ে যেতাম। কেউ কেক তো কেউ চকলেট আনত। সে দিন স্কুলের মাটিতে বসে আমরা খেতাম, গিফ্ট শেয়ার করতাম।’’ এখনও তাঁর কাছে ক্রিসমাস খুব স্পেশ্যাল। বছরের এই সময়ে স্কুলকে খুব মিস করেন মিমি। এখনও নিজের উইশ লিখে মোজায় পুরে ব্যালকনিতে ঝুলিয়ে রাখেন। এ বছরে তাঁর উইশ কী? মিমি হেসে বললেন, ‘‘সান্তার কাছে চাওয়া উইশ কাউকে বলতে নেই।’’
রাহুলের কাছে অবশ্য ছোটবেলার ক্রিসমাসে সান্তাক্লজ় নিয়ে অত উন্মাদনা ছিল না। ‘‘একেবারেই বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবেশে বড় হওয়ায় সান্তা সিনড্রোম সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। কোনও উপহার চাইতাম না আর কখনও পাইওনি। ২০১৩তে সান্তার আগাম উপহার পেলাম সহজকে, ৯ ডিসেম্বর।’’ আর এ বছর? এ বার কিন্তু রাহুল নিজের জন্য উইশ করতে চান। সান্তার উইলপাওয়ারে ধূমপান ছাড়তে চান।
ছোটবেলায় মা-বাবাই ছিল তাঁর সান্তা ক্লজ়। আর এখন শ্রাবন্তী নিজেই তাঁর ছেলের সান্তা। ‘‘আমার ছোটবেলায় মা-বাবাই মোজার মধ্যে উপহার ভরে রাখতেন। আমিও ঝিনুকের ছোটবেলায় তা-ই করেছি। এখন ও বড় হয়ে গিয়েছে। সব বুঝতে পেরে যায়।’’ গিফ্টের বহর না থাকলেও ক্রিসমাস সেলিব্রেট করেন শ্রাবন্তী। বাড়িতেই ছেলের সঙ্গে ক্রিসমাস ট্রি সাজান। ছোট ছোট সান্তা এনে, রংবেরঙের চকমকে গিফ্টের প্যাকেট দিয়ে আলো লাগিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সেজে ওঠে। তবে নিজের জন্য কিছু উইশ করতে চান না শ্রাবন্তী, ‘‘আমি কোনও দিনই সান্তা হোক বা ঠাকুর, কারও কাছেই কিছু চাইতে পারি না। এই যেমন আছি, ভাল আছি, সিনেমা করছি। এই ভাবেই থাকতে চাই।’’
রাহুল এবং ঋদ্ধি
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও একই সুর। সান্তার কাছে নিজের জন্য তেমন কিছুই চাওয়ার নেই। তিনি শুধু চান, ‘‘পৃথিবীর মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সকলে সব কিছু বুঝতে পারুক আর পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকুক।’’
এ দিকে বেশ অন্য রকম ক্রিসমাস কাটিয়ে বড় হয়েছেন ঋদ্ধি সেন। প্রত্যেক বছরই থিয়েটারের মর্নিং শো দিয়ে শুরু হতো ঋদ্ধির ক্রিসমাস। ‘‘হাজরার বাড়িতে থাকতাম তখন। আগের দিন ঠিক রাত বারোটার সময়ে দূর থেকে মিডনাইট ক্যারলের আওয়াজ ভেসে আসত। আর পরের দিন সকালে থাকত শো। অভিনয়ই যেহেতু আমাদের ধর্ম, তাই সে দিন অভিনয় করতে পারাটা খুব আনন্দের ছিল। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, ঘুম থেকে উঠে দেখি মাথার কাছে নাসিরউদ্দিন শাহর ‘স্পর্শ’-এর ডিভিডি। ওই সিনেমাটা আমার খুব প্রিয়, জীবনটাই বদলে দিয়েছিল।’’ এই বছরে সান্তার কাছে ঋদ্ধি শুধু নিজের জন্য উইশ করতে চান না। ‘‘ছোটবেলায় বুঝতাম না, কিন্তু এখন জানি আমার মা-বাবাই আমার সান্তা ছিলেন। একমাত্র মানুষই সান্তা হয়ে উঠতে পারে। তাই এই বছর চাইব, সারা পৃথিবী জুড়ে যে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ, সেটা যেন ২০১৯-এ সকলে কাটিয়ে উঠতে পারি।’’
সেলেবদের উইশলিস্ট তো রেডি। দেখা যাক, সান্তা কার ইচ্ছেপূরণ করে...