এই ছবি হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ অভিনেত্রীর।—নিজস্ব চিত্র।
নাট্যকর্মী তথা টলিউডের উঠতি অভিনেত্রী বৃষ্টি রায়ের নাম, ছবি এবং মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ উঠল। কল গার্ল পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ছবি, মোবাইল নম্বর-সহ পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওই অভিনেত্রীর। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি সোনারপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন। এই ঘটনার পিছনে কে বা কারা রয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার প্রায় প্রতিটি ট্রেন এবং বেশ কিছু স্টেশনেএকটি পোস্টার দেখা যাচ্ছে। সেই পোস্টারেবৃষ্টি রায়ের নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘আপনি কি কষ্টে আছেন? রাতে ঘুম আসে না? বউ দূরে থাকে? আর ভাবনা চিন্তা নয়, চলে আসুন আমাকে ফোন করে। সঙ্গে ইনকাম ১০ থেকে ২০ হাজার।’
বৃষ্টির অভিযোগ, গত এক মাস ধরে বিভিন্ন নম্বর থেকে প্রতিদিন প্রায় তিনশোফোন পাচ্ছেন তিনি। ফোনে তাঁকে অশালীন প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। আচমকা এই ধরনের ফোন পেয়ে প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বৃষ্টির দাবি, প্রথমে তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। দিন দশেক আগে স্টেশনগুলিতে ছড়িয়ে পড়াওই পোস্টারের কথা জানতে পারেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে সোনারপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃষ্টি। গত ২৮ অগস্ট ওই থানায় করাবৃষ্টির এফআইআরের প্রেক্ষিতেতদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে ফোন আসা এখনও বন্ধ হয়নি বলেই দাবি ওই অভিনেত্রীর। সোমবার সকালেওতাঁর কাছে অশালীন প্রস্তাব-সহ ফোন এসেছে বলে জানিয়েছেন বৃষ্টি।
এই পোস্টারই চোখে পড়ে বিভিন্ন ট্রেনে।—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: আইফেল টাওয়ার, স্ট্যাচু অব লিবারটি বানিয়েছেন এক বলিউড নায়িকার প্রপিতামহ! জানতেন?
কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে তাঁকে হেনস্থা করতে পরিচিত কেউ এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ বৃষ্টির। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘ওই পোস্টারে যে ছবিটা ব্যবহার করা হয়েছে, কিছু দিন আগে পর্যন্ত সেটি আমার হোয়্যাটসঅ্যাপ ডিপি ছিল। পরিচিত কেউ ছাড়া বাইরের কারও পক্ষে তার নাগাল পাওয়া তো সম্ভব নয়!’’
নাট্যজগতে যথেষ্ট পরিচিত মুখ বৃষ্টি। একাধিক টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন। সোহিনী সরকার এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘মানভঞ্জন’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। কয়েক মাস আগে মুক্তি পেয়েছিল সেই ছবি। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন বৃষ্টি। তাঁর কথায়, ‘‘গত সাত-আট বছর ধরে টলিউডে কাজ করছি। এই ঘটনা আমার ব্যক্তিগত জীবনে তো বটে, পেশাগত জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। কীভাবে সব কিছু গুছিয়ে উঠব বুঝতে পারছি না। এই ঘটনা যেই ঘটিয়ে থাকুক না কেন, আমার কেরিয়ার নষ্ট করাই তার লক্ষ্য। ব্যক্তিগত জীবনের শান্তিও নষ্ট করতে চায় সে।’’
আরও পড়ুন: সবার সামনে অনন্যাকে ধমকালেন কার্তিক! কেন জানেন?
বছর তিনেক আগে ঠিক এমনই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা সিরিয়ালের আর এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার। তাঁর ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিল কেউ বা কারা। এমনকি তিনি দেহ ব্যবসায় জড়িত, সে কারণে তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে—এমন খবরও প্রকাশ করে বেশ কিছু ওয়েবসাইট। সেই সময় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মধুমিতা এবং তাঁর স্বামী সৌরভ চক্রবর্তী। লালবাজারে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন। বৃষ্টির অভিযোগের কথা জানতে পেরে তিনি বলেন, ‘‘সঠিক শিক্ষা না পেয়েই এমনটা ঘটায় কিছু মানুষ। তাদের মনের পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত কিছু হওয়ার নয়।’’
তদন্ত কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে সোনারপুর থানার এক অফিসার জানান, ‘‘ওই মহিলা যাতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন, তার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই ঘটনায় এক চিকিৎসকের যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই একটি নামের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’