টেলি তারকারা
ঘটনা এক: জনপ্রিয় চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন অভিনেতা জিতু কামাল। এপ্রিল এবং মে মাসে প্রাপ্য পারিশ্রমিকের ৩৫ শতাংশ পেয়েছিলেন। অন্য কাজের সুযোগ আসায় চুক্তি থেকে মুক্ত হতে চান তিনি। কিন্তু তখন তাঁকে চ্যানেল ধরে রাখলেও হঠাৎ জুন মাসে চুক্তি থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় তাঁকে। সে দিন থেকে অভিনেতার হাতে কাজ নেই।
ঘটনা দুই: ‘জয়বাবা লোকনাথ’ ধারাবাহিকে লকডাউনের আগে বারদী গ্রামের জমিদারের চরিত্রে অভিনয় করতেন সপ্তর্ষি রায়। প্রযোজনা সংস্থার তরফে পারিশ্রমিক কমানোর বলা হয় তাঁকে। সমঝোতায় যাওয়ার কথা বললে পরিষ্কার বলা হয়, কম টাকায় কাজ করতে রাজি না হলে এনওসি দিতে হবে। অন্য কাজ হাতে না থাকলেও এনওসি দেন তিনি। সপ্তর্ষির জায়গায় কাস্ট করা হয় অভিনেতা অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়কে।
সরকারি নির্দেশিকা মেনে লকডাউন পরবর্তী সময়ে শুটিং করতে খরচ বেড়েছে। বাড়তি খরচ তুলতে বেশ কয়েকটি প্রযোজনা সংস্থা চুক্তিবদ্ধ অভিনেতাদের উপরে সর্বাধিক ২০ শতাংশ কম টাকার বিনিময়ে কাজ করার শর্ত চাপিয়েছেন। ‘চুনিপান্না’র মধুজা অর্থাৎ পায়েল দে বললেন, ‘‘প্রোডাকশন থেকে ধারাবাহিকের সমস্ত শিল্পীকে ২০ শতাংশ টাকা কমাতে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা মেনেও নিয়েছি। কিছু দিন আগেই শেষ হয়েছে ‘দুর্গা দুর্গেশ্বরী’, সেখানেও পারিশ্রমিক কমানো হয়েছিল।’’
নিতান্তই অনুরোধের ভঙ্গিতে বলা হলেও শিল্পীদের বুঝতে বাকি নেই, এর পিছনে রয়েছে চোখ রাঙানিও। কম পারিশ্রমিকে রাজি না হলে তাঁর চরিত্রটি ভ্যানিশ হতে পারে। টাকা কমানোর শর্তে রাজি না হওয়ায় আরও অনেক শিল্পীকেই বসিয়ে দেওয়ার ঘটনা শোনা গিয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন শিল্পীরা। ‘সৌদামিনীর সংসার’-এর সৌদামিনী, অর্থাৎ সুস্মিলী আচার্যের মতে, ‘‘কাজটাকে ভালবাসি বলেই কম টাকা পাওয়া সত্ত্বেও ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারিনি।’’ অসীম মুখোপাধ্যায় কিংবা অনুরাধা রায়ের মতো প্রবীণ শিল্পীরাও টাকা কমানোর শর্তে রাজি ছিলেন না বলে বাদ পড়েছেন বলে খবর।
প্রশ্ন উঠছে, খরচ বাড়লে সকলের জন্যই একই নিয়ম বলবৎ হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও উঠছে স্বজনপোষণের অভিযোগ। ‘জয় বাবা লোকনাথ’-এর লোকনাথ অর্থাৎ ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রোডাকশন থেকে আমাকেও অনুরোধ করছিল, কিন্তু টাকা কমানোর শর্তে রাজি হইনি।’’ অনেক প্রোডাকশন আবার খরচের বোঝা শিল্পীদের কাছ থেকে তুলতে রাজি নন। ‘শ্রীময়ী’র রোহিত সেন অর্থাৎ টোটা রায়চৌধুরী পারিশ্রমিক কমানোর কথা শুনে বললেন, ‘‘পারিশ্রমিক কমানোর কথা বলা হয়নি আমাকে। অন্যদের কাছ থেকেও শুনিনি।’’ যদিও এই ধারাবাহিকের প্রযোজক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘শিল্পী-কলাকুশলীদের কাছে পারিশ্রমিক কমানোর অনুরোধ রেখেছিলাম। তাঁরা মেনেও নিয়েছেন।’’
এই বিভাজন ঘোচাতে একটি চ্যানেল আবার অন্য পন্থা নিয়েছে। ওই চ্যানেলের প্রধান ঈশিতা সুরানা পোদ্দার বললেন, ‘‘সবক’টি ধারাবাহিকেই শিল্পীদের কাজের সময় বেঁধে দিয়েছি। বেশি করে ফুটেজ তুলে রাখছি। প্রয়োজনে চরিত্রের সংখ্যা কমাই, কিন্তু শিল্পীদের টাকা কমানোর শর্ত দিচ্ছি না।’’ অন্য একটি জনপ্রিয় চ্যানেলেরও একই মত।