গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
নিষিদ্ধ চিনা অ্যাপ টিকটক। যার দৌলতে ছোটপর্দার পাশাপাশি এই প্ল্যাটফর্মেও ‘স্টার’ হয়ে গিয়েছেন টেলি দুনিয়ার বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী। টিকটকের দৌলতে কারও ফ্যান ফলোয়ার্স ২ লক্ষ, কারও বা তার থেকেও বেশি। তালিকায় ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, সৌমিলি বিশ্বাস, রিমঝিম মিত্রের মতো সিনিয়র অভিনেতাদের সঙ্গে আছেন তিয়াসা রায়, শ্রুতি, শ্রীমা ভট্টাচার্য, নীল ভট্টাচার্য, সৈঋতি বন্দ্যোপাধ্যায়, নবনীতা, অলকানন্দা গুহ প্রমুখ।
এক দিকে অবসর বিনোদনে ইতি, অন্যদিকে জনপ্রিয়তায় ভাটা। কী অনুভূতি হচ্ছে?
‘বাবা লোকনাথ’ ভাস্বরের অকপট স্বীকারোক্তি: ‘‘খুব ভাল টাইম পাস হত, অস্বীকারের জায়গা নেই। কিন্তু সবার আগে দেশ। দেশের জন্য এটুকু তো করাই যায়!’’
কথায় কথায় আরও জানা গেল, ‘সবাই করছেন আমিও ট্রাই করি’এই মানসিকতা নিয়ে অ্যাপটি ডাউনলোড করেছিলেন ভাস্বর। ক্রমশ জনপ্রিয়তা বেড়ে অভিনেতার ফ্যান ফলোয়ার্স হয়েছিল ২ লক্ষ।
কিন্তু সেই ভাল লাগা ভাস্বরের সেদিনই মুছে গিয়েছে যেদিন গালওয়ান উপত্যকায় চিন প্রথম হামলা চালায় ভারতের উপর। ভাস্বরের কথায়, “লাদাখ এলওসি-তে যেদিন থেকে প্রথম গন্ডগোল শুরু সেদিন থেকেই টিকটক করা বন্ধ করে দিয়েছি।’’
পর্দায় যেমন, পর্দার বাইরেও তেমনই অকপট ‘শ্রীময়ী’ ইন্দ্রাণী হালদার। কোনও দিন টিকটক ব্যবহার করেননি। কিন্তু করলে দেশের জন্য সেই অ্যাপ ছেড়ে দিতে একটুও দ্বিধা করতেন না, বলে জানালেন তিনি। ইন্দ্রাণীর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে দেশের উপর চিন যে ভাবে হামলা চালাচ্ছে তাতে শুধু তারকা নন, সমস্ত দেশবাসীর উচিত সমস্ত চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা।“
নিজস্ব টিকটক অ্যাকাউন্ট ছিল না সৌমিলি বিশ্বাসেরও। কিন্তু মাঝেমধ্যে তাঁকে দেখা যেত ভাস্বর বা রিমঝিম মিত্রের অ্যাকাউন্টে। অনুরাগীরা পছন্দ করতেন তাঁর উপস্থিতি। আর সেটা হবে না। মনখারাপ লাগছে? “একটুও না। আমি কিন্তু মন থেকে অ্যাপটাকে পছন্দ করতাম না। ফলে, আমার নিজস্ব অ্যাকাউন্ট ছিল না।”
তা হলে যে মুখ দেখাতেন? ‘‘ওটা অনেকটাই হুজুগে পড়ে। অনেক সময় ভাস্বর বা রিমঝিম বলত, আয় না, সবাই মিলে মজা করি। তখন হয়তো মুখ দেখাতাম। কিন্তু প্ল্যাটফর্মটাকে ভীষণ সস্তা মনে হয়েছে। তাই এড়িয়েই চলতাম। অ্যাপ বন্ধ হওয়ায় তাই ভীষণ খুশি।’’
এঁরা আগের প্রজন্মের। তাই হয়তো বিনোদনের পথ বন্ধ হলেও খুব দুঃখিত নন। কিন্তু এই প্রজন্মের টেলিস্টার, যেমন তিয়াসা, নীল, শ্রুতি, শ্রীমা, নবনীতা, অলকানন্দা, এঁদেরও কি এক মত?
নব্য প্রজন্ম এক সঙ্গে দুটো দিকে আলো ফেলেছেন। প্রথমে অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন, মিস করবেন তাঁরা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমটিকে। প্রত্যেকে জানিয়েছেন, সারা বছর তো বটেই, লকডাউনে তাঁদের অবসর বিনোদনের সেরা উপায় হয়ে উঠেছিল অ্যাপটি।
যেমন, কখনও একসঙ্গে দেখা গিয়েছে ‘কৃষ্ণকলি’ জুটি নীল-তিয়াসাকে। কখনও নবনীতা, শ্রীমা, শ্রুতি একাই পারফর্ম করেছেন। সেগুলো হিট হওয়ায় জনপ্রিয় হয়েছেন তাঁরাও। আবার এই অ্যাপের জোরে অনেকে যে করে-কম্মে খেয়েছেন, একটা ছোট্ট ভিডিয়োর দৌলতে সাধারণ ছেলেমেয়েরাও জনপ্রিয়তায় নেক্সট ডোর বয় বা গার্ল হয়ে উঠেছেন, সেটাও অস্বীকার করা যাবে না।
কিন্তু সবার আগে দেশ। দেশকে যে দেশ বিপন্ন করবে সেই দেশের কোনও কিছুই গ্রহণীয় নয়। এই অনুভূতিকে সামনে রেখে তাই তাঁদের নতুন ভাবনা, “বিদেশি জিনিস ব্যবহার অনেক হল। এই সুযোগে দেশি অ্যাপগুলোকে জনপ্রিয় করলে কেমন হয়?’