ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে রাহুল দ্রাবিড় বলেছেন! ‘পোস্ত’র টিমে মিমি চক্রবর্তী একাই তিনশো হাঁকিয়েছেন। ডিজাইনার পোশাকে নাচগানের বদলে ‘পোস্ত’য় একেবারে ডিগ্ল্যাম লুক...বৈপরীত্যটা মেলালেন কী করে?
‘‘এত দিন যা করে এসেছি, তার চেয়ে ‘পোস্ত’ একেবারে আলাদা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছিলাম,’’ বলছেন মিমি। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় এই মুহূর্তে টলিউ়়ডের অন্যতম সেরা পরিচালক। ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’-এর সাফল্যের পর তাঁদের ‘না’ বলা মানেই বোকামি! হলই বা ডিগ্ল্যাম চরিত্র।
ছবিতে মিমি এক চাকুরিরতা মহিলা যার বছর ছ’য়েকের বাচ্চা রয়েছে। বাণিজ্যিক ছবির নায়িকারা কেরিয়ারের শীর্ষে থাকতে-থাকতে কোনও দিনই মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হন না। মিমি নিজেও দোনামনো করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে একটি হেলথ ড্রিংক সংস্থা বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। মায়ের ভূমিকায় থাকতে হবে বলে লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’’
‘পোস্ত’র বেলায় ঝুঁকিটা নিয়েই নিলেন। বেশ আত্মবিশ্বাসী গলায় বললেন, ‘‘কিছু দিন পরেই তো বাণিজ্যিক ছবি করব। মনে হয় না, মায়ের চরিত্র করেছি বলে সমস্যা হবে।’’ যে প্রযোজনা সংস্থায় মিমি বেশি কাজ করে থাকেন, এ ব্যাপারে তাঁর কর্ণধারের পরামর্শ নিয়েছিলেন। ‘‘উনি নিজেই আমাকে চরিত্রটা করতে বলেছিলেন,’’ বললেন মিমি।
নন গ্ল্যামারাস, বয়সের তুলনায় ভারী চরিত্র...নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদেই রাস্তাটা বাছলেন, না কি ব্রেকআপ সামাল দেওয়ার জন্য কঠিন কাজে ডুবে থাকতে চাইছিলেন? ‘‘অনেক দিন তো কাজ করলাম। এ বার যদি অন্য রকম কিছু না করি তো কবে করব,’’ বক্তব্য মিমির! তাঁর সাক্ষাৎকার মানেই রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে ব্রেকআপ দিয়ে শিরোনাম। ‘‘বিশ্বাস করুন, বোর হয়ে গিয়েছি। ব্রেকআপ থেকে আমি বেরিয়ে গিয়েছি। মিডিয়া বেরোতে পারছে না।’’ তা হলে আপনার নতুন অ্যাফেয়ারের কথা বলুন, মিডিয়া সেটা নিয়েই লিখবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিমির জবাব, ‘‘তাই দেখছি, আপনাদের জন্যই একটা প্রেম করতে হবে!’’
‘পোস্ত’ তাঁর কাছে একটা জার্নির মতো। জয় গোস্বামীর ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’ পাঠ করতে হয়েছে গল্পের ছন্দের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য। এক মাস ধরে ওয়ার্কশপ করেছেন। সমস্যা হয়নি তাল মেলাতে? ‘‘হয়েছে! প্রথমবার এগুলো করছি। ক্যামেরা সামনে থাকলে আমাকে যেটা করতে বলবে, করে দেব। নয়তো ওই ওয়ার্কশপে এমনি-এমনি চোখে জল এনে সংলাপ বলতে পারব না,’’ সটান জবাব মিমির। ওয়ার্কশপে সকলে দিব্যি স্কোর করছেন। মিমি তখনও আরষ্ট। ‘‘শিবুদা বলত, আমার মুখ ডোবাস না,’’ বললেন মিমি। শিবপ্রসাদ কিন্তু মিমিকে নিয়ে প্রত্যয়ী। বললেন, ‘‘আমি ঠিক লোককেই বেছেছি। স্বয়ং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছেন মানে বুঝতে পারছেন!’’
ওয়ার্কশপ করার কি আদৌ প্রয়োজন ছিল? মিমির মতে, ‘‘এক-একজন পরিচালকের কাজের ধরন এক-এক রকম। নতুন জিনিস শিখলাম।’’ মেকআপ করতে পারতেন না, কান্নার দৃশ্যে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারতেন না বলে নাকি রাগ হতো? ‘‘এগুলো কে বলেছে আপনাকে,’’ মিমির গলায় ছদ্ম রাগ! আরও গল্প আছে। মিমি প্রতিদিন সেটে মেকআপ করে যেতেন আর সেই মেকআপ তুলে ফেলা হতো। একদিন নিজেই টিস্যু পেপার নিয়ে সেটে গিয়ে বললেন, ‘‘এবার সব তুলে দাও।’’
কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘গানের ওপারে’ দিয়ে। পুপের চরিত্রটা তাঁকে জনপ্রিয়তা দিলেও, একটা সময় মিমি নিজেই ওই চরিত্রটার থেকে বেরোনোর জন্য হাঁকপাক করতেন। বিশেষ করে ধীরে-ধীরে যখন বাণিজ্যিক ছবির দিকে মন দিচ্ছিলেন। ‘‘সত্যিই, একটা সময় ভীষণ বিরক্ত লাগত! পুপের চরিত্রটা স্ট্যাম্পের মতো লেগে ছিল। মিমি মানেই পুপের মতো কেউ। ওই ইমেজ থেকে প্রাণপণে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতাম,’’ বললেন মিমি। ‘পোস্ত’ করে কি সেই জায়গাতেই আবার ফিরে গেলেন না? ‘‘উঁহু, ‘পোস্ত’ অতটা কাব্যিক নয়। একেবারে সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির চরিত্র,’’ বক্তব্য মিমির।
তিনি নিজে বেশ সাদামাঠাভাবে থাকেন। তার উপর মাকেও সঙ্গে রাখেন। ব্রেকআপের পর মা কী বলছেন? ‘‘ওই মায়েরা যেমন বলে থাকেন। নায়িকা হওয়ার কী দরকার ছিল! এই সব...’’ বললেন মিমি। যোগ করলেন, ‘‘একটা জিনিস বলতে চাই, এখানে সাজগোজ করিনি বলে মায়ের একটু মুখভার হয়েছে।’’ তা হলে কি মিমিকে অন্য ধারার ছবিতে দেখা যাবে না? ‘‘চিত্রনাট্যের উপর নির্ভর করছে।’’ ইতিমধ্যেই অন্য ধারার আর একটি ছবির শ্যুটিং শুরু করে দিয়েছেন। বাণিজ্যিক ছবির কাজও আছে সামনে।
ব্রেকআপ হলে অনেকে কাজ থেকে ব্রেক নেন। বেড়াতে যান। আর আপনি কাজেই ডুবে গেলেন? মিমির জবাব, ‘‘আমার ব্রেক, ব্রেকআপ কিচ্ছু চাই না। পরপর এভাবেই কাজ করে যেতে চাই।’’