আয় তবে সহচরী
মারণভাইরাসের প্রথম তরঙ্গকে ছাপিয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় তরঙ্গ। তৃতীয় ঢেউয়ের গতিপ্রকৃতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, পরিস্থিতি আগের চেয়েও ভয়ানক। আগের দু’বার টেলিপাড়ায় কার্যত তালা পড়েছিল। কিন্তু ছোট পর্দার কেউই চান না, ফের সেই পরিস্থিতি তৈরি হোক। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জোড়াতালি দেওয়া শুটিংয়ে ধারাবাহিকের মান পড়ে যায়। সেই ছাপ পড়ে টিআরপি-তেও। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে টিআরপি যে কী ভীষণ বস্তু, তা সকলেরই জানা।
সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত পরিস্থিতিতে কতটা সাবধান হচ্ছে ছোট পর্দার ইন্ডাস্ট্রি? ধারাবাহিকের প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সাবধানতা অবলম্বন করেছি। ছোট ছোট ইউনিট নিয়ে কাজ হচ্ছে। একসঙ্গে বেশি অভিনেতা না রাখার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া অন্যান্য কোভিডবিধি মানা হচ্ছে। না মেনে কোনও উপায় নেই। নিজেদের স্বার্থেই এটা করতে হবে।’’ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যখন নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেই সময়ে বিধিনিষেধ মানার ক্ষেত্রে হয়তো খানিক ঢিলেমি ছিল, কিন্তু এই মুহূর্তে সকলেই সতর্ক হয়ে কাজ করছেন বলে জানালেন লীনা। আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এর আগে কোভিডের যে গাইডলাইন ছিল, প্রযোজক-শিল্পী সকলকেই সেগুলো মানতে বলা হয়েছে ইতিমধ্যে।’’
গাঁটছড়া
বৃহস্পতিবার রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা পনেরো হাজার ছাড়িয়েছে। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই কোভিডে আক্রান্ত। ছোট পর্দার অনেক অভিনেতা ও কলাকুশলীও ভাইরাসের কবলে। কিন্তু তা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য নেই। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রযোজকদের তরফ থেকে নাকি বার্তা গিয়েছে করোনা হলে সে কথা বাইরে চাউর করার প্রয়োজন নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে গেলে কাজে যোগ দেবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই বার্তার অন্যতম কারণ, কাজ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা। সিনেমার শুটিং বন্ধ থাকলে যতটা ক্ষতি, সিরিয়ালের ক্ষেত্রে সেই ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেশি। নিত্যদিন টেলিকাস্টের চাপ সিনেমায় নেই। ছোট পর্দার এক জনপ্রিয় অভিনেত্রীর কাছে সেটের পরিস্থিতি জানতে ফোন করা হলে, তিনি সাফ জানিয়ে দেন, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর এক অভিনেত্রীর গলার স্বর, কাশির দমক বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তিনি অসুস্থ। কিন্তু তিনি কোভিড টেস্ট করাননি এবং শুটিংয়েও যাচ্ছেন। সাবধানতার উল্টো দিকে এমন ছবিও বিরল নয়।
করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছোট পর্দার প্রযোজক-পরিচালক সুশান্ত দাস। বিষয়টি জানিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন। এখন বাড়িতে বসেই কাজ সামলাচ্ছেন সুশান্ত। বাড়িতে বয়স্ক মানুষ এবং বাচ্চা রয়েছে কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘আয় তবে সহচরী’ ধারাবাহিকে কনীনিকা প্রধান চরিত্রে। ‘‘প্রাণে ভয় নিয়েই কাজ করছি। এর মধ্যে আমি একটা সিনেমারও শুটিং করলাম। যতটা সাবধানতা অবলম্বন করা যায় করছি, কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হবে কি না, জানি না। তবে ভয় পেলেও কাজটা করতে চাই। শুধু আমার কথা বলছি না। আবার কাজ বন্ধ হয়ে গেলে বহু মানুষ পথে বসবেন।’’
নতুন ধারাবাহিকের কাজ শুরু করেছেন অভিনেতা রণজয় বিষ্ণু। এই মুহূর্তে দার্জিলিংয়ে আউটডোরে রয়েছেন তিনি। সেখান থেকে জানালেন, ‘‘আমাদের ইউনিটের সকলে মাস্ক পরছেন। আমাদের সঙ্গে দার্জিলিং পুলিশ রয়েছে। যাতে ভিড়ভাট্টা না হয়, নিয়মবিধি মানা হয়, ওরা সেটা দেখছে। থার্ড ওয়েভ আসার আগেই আমরা শুটিং শুরু করেছিলাম। তখন থেকেই নিময় মেনে কাজ হচ্ছে।’’
নিয়ম না মানলে যে নিজেরাই ফাঁপরে পড়বেন, এ সত্যও বুঝতে পেরেছেন অভিনেতারা। ‘বসন্ত বিলাস মেসবাড়ি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘ফেডারেশন, আর্টিস্ট ফোরামের প্রোটোকল অনুযায়ী শুটিং হচ্ছে। কারও শরীর খারাপ হলে তাকে সেটে আসতে বারণ করা হয়েছে। আমরা মেকআপ করার পরেও মাস্ক পরছি। শট দেওয়ার আগে খুলে নিচ্ছি। আবার লকডাউন হোক, এটা কেউ চাই না। কাজ বন্ধ হওয়ার চেয়ে নিজেরা সতর্ক হওয়াই শ্রেয়।’’