বৃহস্পতিবার ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের শ্যুটিংয়ের ছবি
মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতিতে বুধবার ৫০ জনকে নিয়ে ধারাবাহিকের শ্যুট হয়েছিল টেলিপাড়ায়। কিন্তু ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের হুমকিতে বিকেলবেলা মাঝ পথে শ্যুট বন্ধ করে দিতে হয়। জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিক সম্মেলনে বসতে হয় প্রযোজক, চ্যানেল ও আর্টিস্ট ফোরামকে। আর্টিস্ট ফোরাম থেকে প্রযোজক, চ্যানেল সকলেই চাইছেন কাজ শুরু করতে। মানুষের রোজগার বন্ধ করে রাখার এই পদক্ষেপকে অমানবিক বলে মনে করছেন সকলে। কিন্তু তার পরেও অনিশ্চিত ধারাবাহিকের ভবিষ্যৎ। বিবাদের মীমাংসা করতে বিজয়গড় পার্টি অফিসে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন প্রোডিউসর্স (ডব্লিউএটিপি) এবং আর্টিস্ট ফোরাম।
কিন্তু সেই বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি কোনও পক্ষই। ফলত, কাজ এখনও বন্ধ। পুরোপুরি স্বাভাবিক ভাবে কাজ হবে কি হবে না, কেউ জানে না। কিন্তু বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বৃহস্পতিবার শ্যুটিং হওয়া, না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে প্রযোজক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়, লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং নিসপাল সিংহ রানে সবাই এক কথায় বলে ওঠেন, ‘‘আজ রাতেই আমরা কল টাইম দেব। আশা করি শিল্পী থেকে কলাকুশলীরা সকলে কাজে আসবেন।’’ সেই মতো শ্যুটিং হল ‘শ্রীময়ী’-র।
বুধবারের শ্যুটিং পর্ব
শ্রীময়ীর পরিচালক দিগন্ত সিংহ আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, সব টেকনিশিয়ান আসেননি। কিন্তু যাঁরা এসেছেন, তাঁদের নিয়েই কাজ হয়েছে। কিন্তু তার পরের দিনই কী হবে, তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ধোঁয়াশায় সকলে। দিগন্ত নিজে ফেডারেশনের এক জন সদস্য। তিনি বললেন, ‘‘আমিও তো টেকনিশিয়ান। ফেডারেশনের সদস্য। কিন্তু এত বছর ধরে আমাকে ফেডারেশন খাওয়ায়নি। গত ১৫ বছর ধরে আমার ভাতের দায়িত্ব নিয়েছেন শৈবালদা, লীনাদির মতো প্রযোজকরাই। সে ক্ষেত্রে তাঁরা ডাকলে আমি আসব না? এমন তো হতে পারে না।’’ স্বরূপ বিশ্বাসের হুমকিতে ভয় পাননি দিগন্ত। তিনি জানালেন, স্টুডিয়োর আশেপাশে অনেক টেকনিশিয়ান ঘোরাফেরা করছেন। কিন্তু কেউই ভয়ের চোটে কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দিগন্তের কথায়, ‘‘কেউ কাজ করতে চাইছে, বলতে পারছেন না। কেউ কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। রোজগারও প্রয়োজন, এ-দিকে ফেডারেশনের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করছে মনে। চার দিকে যেন ভয়ের পরিবেশ। কিন্তু সবাই চাইছেন, কাজ হোক, রোজগার হোক, সব স্বাভাবিক হয়ে যাক।’’
দিগন্ত মনে করেন, চার দিকে চাকরির অভাব, মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। কাজ নেই। সেখানে তাঁর মতো টেকনিশিয়ানদের কাছে কাজের সুযোগ থাকলেও, তা করতে দেওয়া হচ্ছে না উপরতলা থেকে। এটা অমানবিক বলে মনে হচ্ছে পরিচালকের।
বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলন
ফেডারেশনের দাবি ছিল, কোনও টেকনিশিয়ান নির্দিষ্ট ২০টি ধারাবাহিকে কাজ করতে পারবেন না। কারণ, ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লক়ডাউনের মধ্যে সেগুলির শ্যুটিং চলেছে। যত ক্ষণ না প্রোডিউসার গিল্ডের সঙ্গে ফেডারেশনের নতুন চুক্তি কার্যকর হচ্ছে, তত ক্ষণ এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। সেই ২০টি ধারাবাহিকের তালিকা দেওয়া হয়েছিল ফেডারেশনের তরফে— ‘কৃষ্ণকলি’, ‘তিতলি’, ‘অপরাজিতা অপু’, ‘গ্রামের রাণী বীণাপাণি’, ‘বরণ’, ‘খেলাঘর’, ‘যমুনা ঢাকি’, ‘গঙ্গারাম’, ‘জীবন সাথী’, ‘মিঠাই’, ‘সাঁঝের বাতি’, ‘খড়কুটো’, ‘শ্রীময়ী’, ‘মোহর’, ‘দেশের মাটি’, ‘রিমলি’, ‘ওগো নিরুপমা’, ‘ফেলনা’, ‘কি করে বলবো তোমায়’, ‘ধ্রুবতারা’।