Pori Moni

Taslima-Pori Moni: ধর্মান্ধ গোষ্ঠী, ধনী গোষ্ঠী, প্রভাবশালী গোষ্ঠী পরীমণিকে জ্যান্ত কবর দিয়েছে: তসলিমা

বিচারাধীন পরীমণিকে নিয়ে কেচ্ছায় মেতেছে সমাজের একাংশ। বিচারের আগেই একজন শিল্পীর হেনস্থার বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনেরা নীরব কেন, উঠেছে প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৯:১২
Share:

পরীমণি এবং তসলিমা নাসরিন।

বাংলাদেশের অভিনেত্রী পরীমণি মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেফতার হন। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। শুক্রবার আদালত তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

কিছুদিন আগে বোটক্লাব-কাণ্ডে পরীমণি এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ-চেষ্টার অভিযোগ এনেছিলেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তাঁকেও মাদক-সহ গ্রেফতার করা হয়। সেই ব্যবসায়ী মারাত্মক অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পরীমণির জামিন মিলল না। তাঁকে যেতে হচ্ছে জেলে। এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

শনিবার, প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েকটি গোষ্ঠী এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাবে।

Advertisement

বিচারাধীন অভিনেত্রী পরীমণিকে নিয়ে কেচ্ছায় মেতেছে সমাজের একাংশ। বিচারের আগেই একজন শিল্পীর হেনস্থার বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনেরা নীরব কেন, এই কথা উঠে আসছিল। অবশেষে সংবাদমাধ্যমে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন ১৭জন বিশিষ্ট নাগরিক।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে এই বিবৃতি দিয়েছেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, সেলিনা হোসেন, আবেদ খান, ফেরদৌসী মজুমদার, সারোয়ার আলী, মফিদুল হক, মামুনুর রশীদ, আবদুস সেলিম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসীর মামুন, গোলাম কুদ্দুছ ও হাসান আরিফ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চলচ্চিত্র জগতের এক অভিনেত্রীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নব্য ধনিক সমাজের যে চেহারা ফুটে উঠেছে তা আমাদের গভীরভাবে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। নারীকে বাণিজ্য ও ভোগের পণ্য হিসেবে ব্যবহারের ধারা নানাভাবে পরিপুষ্টি পেয়ে সামাজিক অনাচারের ভোগবাদী সংস্কৃতি প্রবল করে তুলেছে। অর্থ-বিত্ত, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অশুভ আঁতাতের প্রতিফল যখন ন্যক্কারজনকভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করল, তখন নারীর ওপরই এর দায়ভার অর্পণের বিশাল আয়োজন আমরা প্রত্যক্ষ করছি। পুরুষতান্ত্রিক কূপমণ্ডূক চিন্তার এই দাপট সামগ্রিকভাবে সমাজকে এবং বিশেষভাবে নারীকে নানাভাবে নিগ্রহের শিকারে পরিণত করেছে। … আমরা নারীর সাংস্কৃতিক অধঃপতনের শিকার হয়ে ওঠার জন্য যারা দায়ী, যারা এর ইন্ধনদাতা, তাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি করছি এবং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সাংস্কৃতিক সামাজিক আন্দোলন বেগবান করার প্রয়োজনীয়তা সবার সামনে মেলে ধরছি।”

সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিষয়ও তুলে ধরা হয় ১৭জন বিশিষ্ট নাগরিকের এই বিবৃতিতে।

এ দিকে ‘বিশিষ্ট’দের সমালোচনা করে ফেসবুকে এক লেখা লিখেছেন তসলিমা নাসরিন। প্রথম থেকেই তিনি পরীমণির প্রতি সহানুভূতিশীল। তসলিমা লিখেছেন, “ফাইনালি বাংলাদেশের 'বিশিষ্ট নাগরিকেরা' চলচ্চিত্র শিল্পী পরীমণির ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। বিশিষ্ট নাগরিকেরা সব সময়ই সব ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর কিছু লোকের ক্রমাগত চাপে এবং অনুরোধে মাথা দোলান, কয়েকদিন ভেবে চিন্তে বিবৃতিতে নাম যাওয়ায় রাজি হন। তার আগে অবশ্য নিশ্চিত হয়ে নেন, অন্য ‘বিশিষ্ট’রা বিবৃতিতে সই করেছেন। বিশিষ্টদের নাম থাকলে বিশিষ্টরা এগোন, অ-বিশিষ্টদের সঙ্গে শুরু থেকে প্রতিবাদে নামেন না, তার চেয়ে বসে বসে নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে সর্বহারার সর্বনাশ দেখেন।”

প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পরীমণির বিরুদ্ধে আক্রমণ। ফাইল চিত্র।

তসলিমা এরপর ৪ জুলাই পরীমণিকে নিয়ে লেখা তাঁর প্রথম পোস্ট তুলে ধরেছেন— “ফেসবুকে শিং মাছের মতো দেখছি প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে বাংলাদেশের নায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে কুৎসিত সব গালাগালি। কোনও মেয়ের বিরুদ্ধে যখন লোকেরা ক্ষেপে ওঠে, তাকে দশদিক থেকে হামলা করতে থাকে, এমন উন্মত্ত হয়ে ওঠে যেন নাগালে পেলে তাকে ছিঁড়ে ফেলবে, ছুঁড়ে ফেলবে, পুড়িয়ে ফেলবে, পুঁতে ফেলবে, ধর্ষণ করবে, খুন করবে, কুচি কুচি করে কেটে কোথাও ভাসিয়ে দেবে, তখন আমার ধারণা হয় মেয়েটি নিশ্চয়ই খুব ভাল মেয়ে, সৎ মেয়ে, সাহসী মেয়ে, সোজা কথার মেয়ে। আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা এটাই বলে। বাংলাদেশের সিনেমা আমি দেখি না। পরীমণির নামও আগে শুনিনি। তবে তাকে আমি দূর থেকে আমার শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জানাচ্ছি। সব মেয়ে স্ট্রাগল করে না, কিছু মেয়ে করে। কিছু মেয়ে স্ট্রাগল করে সব মেয়ের জন্য যুগে যুগে বেটার পরিস্থিতি আনে। এই স্ট্রাগল করা কিছু মেয়েই একেকটা মাইলফলক।”

এরপর তসলিমা লিখেছেন, “সেই শুরু, সেই থেকে লিখে যাচ্ছি। মেয়েটির দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছিলই। এর মধ্যে মেয়েটিকে দেশের পুলিশ গোষ্ঠী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী, ধনী গোষ্ঠী, মূর্খ গোষ্ঠী, মাফিয়া গোষ্ঠী, মিডিয়া গোষ্ঠী, প্রভাবশালী গোষ্ঠী— যত গোষ্ঠী আছে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিয়েছে। নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে গেছে সম্ভবত। যত মানসিক ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। শেষে আড়মোড়া ভাঙলেন কারা? ‘বিশিষ্ট নাগরিকেরা’। বিশিষ্ট নাগরিকেরা বড় বৃদ্ধ। বড় বেশি ঘুমিয়ে থাকেন। কানে কম শোনেন। দেশ যে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে, সে খেয়াল রাখেন না। দেশ জুড়ে যে নারীবিদ্বেষী হায়েনারা আর শকুনেরা সাহসী মেয়েদের কামড়ে খাচ্ছে, ছিঁড়ে খাচ্ছে— তা দেখেন না, চোখে ছানি পড়েছে অনেক আগেই। বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা জরুরি কথা বলতে বড় বেশি দেরি করেন। পরিবেশ ঠিক থাকলে, মুখ খুললে অসুবিধে হবে না জেনে, তারপর মুখ খোলেন। বেড়ালের গলায় ঘণ্টিটা সব সময় অ-বিশিষ্টরা বাঁধেন। ঝুঁকি নেন অ-বিশিষ্টরাই। তাদের চোখ কান খোলা। সমাজে আসলে অথর্ব বিশিষ্টের চেয়ে প্রতিবাদী অ-বিশিষ্টদের বেশি দরকার।”

শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন যখন এই পোস্ট দিয়েছেন, তত ক্ষণে পরীমণির ঠাঁই হয়েছে জেলে। সম্ভবত তিনি জানতে পারেননি তখন‌ও। বাংলাদেশের বিশিষ্ট ১৭ জনের সমবেত বিবৃতিও আগের। নতুন পরিস্থিতিতে তাঁরা কী বলবেন? পরীমণির পরিণতিই বা কী হবে? তা যদিও অজানা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement