সুজাতার চরিত্রে স্বস্তিকা।
অভিনয়: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
নির্দেশনা: সুদীপ্ত রায়
সুজাতা! ঘর আগলে রাখা আগল ভাঙতে চাওয়া মেয়ে। মারকুটে, বদমেজাজি স্বামীর বদ্ধ আগল থেকে নিজেকে মুক্তি দেওয়ার খোলা আকাশে তাঁর গান ভেসে বেড়ায়।
লম্বা চুল। শাড়ি, ছোট্ট টিপের গাছে জল দেওয়া, বেকিং আর রান্নাঘরের সুজাতা শুধুই চার দেওয়ালে বরের দাসত্ব করা গৃহবধূ নয়। পরিচালক সুদীপ্ত রায় ৪০ মিনিটের ছবিতে ক্যামেরার সঙ্গে কথা বলা স্বস্তিকার মনকে গন্ধে, রঙে, বিষাদে, ছাই পোড়া আগুনে মাখিয়ে রেখেছেন। লোহায় পোড়া ওটিজির আগুন থেকে তৈরি মাফিন আর ভুল ওষুধ খাইয়ে শাশুড়ির দেহ চুল্লির আগুনে পুড়ে যাওয়ার মধ্যে সংযোগ দৃশ্য দর্শককে সুজাতার ভেতর চিনতে শেখায়। না, এ কোনও সাধারণ গৃহবধূ নয়। আসলে গৃহবধূ সাধারণ হয় না। শুধু সাধারণ বলে কিছুই নেই! এই ছবি তারই দলিল।
ছাই চাপা আগুন আর রক্তের গন্ধ নিয়ে খেলতে ভালবাসা সুজাতা স্বামীর পরকীয়ার গল্প করে দর্শকদের কাছে। বিছানায় খুব তাড়াতাড়ি তার শরীরের ভেতর ভিজে যায়… দর্শকদের নিজের যৌনতার কথাও বলে সে অকপটে। হোয়াটসঅ্যাপ কলে তাঁর স্বামী প্রেমিকার সেক্সি নাইটি দেখে রেগে গিয়ে ঠিক কী বলে? সেই সংলাপ অভিনয় করে দেখায় সুজাতা। স্বামীর প্রেমিকার পাল্টা সংলাপও তার মুখস্থ। সে জানায়, তার স্বামী বলতে থাকে বাড়িতে লকডাউনে প্রেমিকা সেক্সি নাইটি পরে স্বামীকে ‘সিডিউস’ না করে! প্রেমিকাকে ধমকায় স্বামী! আর তার প্রেমিকা বলে ওঠে, তার স্বামী সারা ক্ষণ বাড়িতে তাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। না কোনও চরিত্রকে দর্শক দেখতে পান না। স্বস্তিকা গল্পচ্ছলে ওই চরিত্র হয়ে কথা বলে ওঠেন। ধরা পড়ে তাঁর সহজাত অভিনয় দক্ষতা।
‘সুজাতা’র গল্প বলছেন স্বস্তিকা।
আরও পড়ুন: ‘লভ অ্যাট ফার্স্ট সেট’, বিবাহ থেকে বিচ্ছেদ, কঙ্কণা-রণবীরের জীবনে বরাবরই ব্রাত্য পাপারাৎজি
দরজা বন্ধ ঘরে কান পেতে স্বামীর সেক্স চ্যাট থেকে ঈর্ষা সবটাই শোনে সে। আর রাতে সেই স্বামীর সেক্স চ্যাটের বাস্তব শিকার হয় নিজে। রোজ খাটে জোর। ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে সুজাতার সেই ঘেন্না। নিরুপায় সুজাতা অন্ধকারে ছায়ার সঙ্গে গান গায়, ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে’। সুজাতা মিশে যায় পাতার সঙ্গে। গাছের আদরে যে পাতার প্রাণ তাকে তার নষ্ট হয়ে যাওয়া সন্তানের কথা মনে করায়। সেই সন্তান হারানোর আর্তনাদে রক্ত-গন্ধকে সুজাতা আলাদা করে রাখে। যেমন অসুস্থ শাশুড়ির পুঁজ রক্তের গন্ধ! কাঁচা মাছের গায়ে লেগে থাকা গন্ধ! গন্ধ আলাদা হয়ে থাকে তার জীবনে।
ছবির ফ্রেম জুড়ে ‘সুজাতা’।
আরও পড়ুন: স্বল্পবসনা হয়ে নাচ, সিরিয়ালে অভিনয়, ‘রাজকুমারী’ মোহেনা বাঁচেন নিজের শর্তেই
স্বস্তিকা ভীষণ রকম ‘সুজাতা’ হয়ে ওঠেন। স্বস্তিকাই এ ছবির ফ্রেম জুড়ে। ছবিতে বেশ গান গেয়েছেন স্বস্তিকা। এ ছবির তিনি নায়ক, তিনিই খলনায়িকা, কমেডিয়ান, গায়ক— সব! ‘তাসের ঘর’ ভাঙবে না গড়বে তা বোঝার জন্য ছবি দেখতে হবে। নিজেদের খুঁজে পাওয়ার অনেক জায়গা আছে এই ছবিতে। ক্যামেরার সঙ্গে কথা বলে নানা চরিত্রে, নানা মনের অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা। সাহানা দত্তের গল্পের জোরে তাঁর অভিনয়ের মেজাজ তাঁর মনের গন্ধকে অবধি দর্শকদের টের পাইয়ে দেয়। বেকিং-এর খুশির গন্ধ। স্বামীর রাগের প্রতীকী গলায় কালশিটের গন্ধ। মেঘের সঙ্গে উড়ে যাওয়ার মুক্তির গন্ধ, সবটাই শুধু স্বস্তিকা অভিনয় না করে বুঝিয়ে দেন।