কোনও গডফাদার ছিল না ইন্ডাস্ট্রিতে। নিজের প্রতিভার জোরে জায়গা করে নিয়েছিলেন প্রতিযোগিতা পেরিয়ে। কেরিয়ারে ওঠা-নামার পাশাপাশি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের জীবনে এসেছে অজস্র সম্পর্কও।
বিজ্ঞাপনের পরে সুশান্তের কাজ ছিল দূরদর্শনে। ‘পবিত্র রিশতা’ মেগাসিরিয়ালে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় মুখ। ওই সিরিয়ালেই তাঁর সহঅভিনেত্রী ছিলেন অঙ্কিতা লোখান্ডে।
২০০৯ সালে সুশান্ত-অঙ্কিতার সম্পর্ক ছিল ইন্ডাস্ট্রির সেরা গুঞ্জন। ‘পবিত্র রিশতা’-র জুটি মানব এবং অর্চনার প্রেম পর্দার বাইরেও জমে উঠেছিল। এমনকি, এও শোনা গিয়েছিল, তাঁরা নাকি গোপনে বিয়ে করে নিয়েছেন।
বাস্তবেও যখন তাঁদের বিয়ের ছবি দেখার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন অনুরাগীরা, তখন-ই কেটে গেল সম্পর্কের সুর। ২০১১ সালে সিনেমায় অভিনয় করবেন বলে ‘পবিত্র রিশতা’-র ইউনিট ছেড়ে দেন সুশান্ত।
এর পর ২০১৬ সালে জানা যায় সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে সুশান্ত আর অঙ্কিতার। দু’জনের কেউই তাঁদের বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে শোনা যায়, তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে এসে পড়েছিলেন কৃতী স্যানন।
ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে এ-ও শোনা যায়, সুশান্তের ইগোর জন্যই অঙ্কিতা সরে যান। তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখেই বোঝা যেত, এই বিচ্ছেদ কতটা কষ্ট দিচ্ছে অঙ্কিতাকে। সেই তুলনায় সুশান্ত অনেক নিরুত্তাপ ছিলেন।
এই সময়ই অঙ্কিতার জীবনে আসেন রাইপুরের ব্যবসায়ী বিকাশ জৈন। এক ‘কমন’ বন্ধুর মাধ্যমে আলাপ, ঘনিষ্ঠতা এবং তাঁকেই বিয়ে করবেন বলে নাকি ঠিক করেছিলেন অঙ্কিতা। বলিউডের বাতাসে ছড়িয়েছিল এমন খবর। যদিও অঙ্কিতা তা কোনও দিনই স্বীকার করেননি।
সেই খবরেই কি হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল সুশান্তের? ভেসে উঠছে এই জল্পনাও। প্রাক্তনের অকালমৃত্যুর খবরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি অঙ্কিতা। সংবাদমাধ্যমের ফোনে প্রথম পান দুঃসংবাদটি। অঙ্কিতার প্রতিক্রিয়া ছিল ‘হোয়াট!’ আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়েছিলেন সুশান্তের প্রথম প্রেমিকা।
২০১৭ সালে মুক্তি পায় ‘রাবতা’। বক্স অফিসে সাফল্য না পেলেও এই ছবির জুটি সুশান্ত-কৃতীর সম্পর্ক নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে। তবে সেই সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০১৮ সালে দু’জনে আলাদা হয়ে যান। শোনা যায়, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণ ছিল দু’জনের বদমেজাজ।
এর পর সুশান্তের নাম জড়িয়ে যায় তাঁর আর এক নায়িকা সারা আলি খানের সঙ্গে। ‘কেদারনাথ’ ছবিতে তাঁর বিপরীতেই ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেখড়ি হয় সইফ-অমৃতার কন্যার।
সে সময় সুশান্ত-সারার প্রেম ছিল আলোচনার অন্যতম বিষয়। কিন্তু সে সম্পর্কও দানা বাঁধেনি। পরে সারার সঙ্গে বিজ্ঞাপনেও কাজ করতে চাননি সুশান্ত। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, একই নায়িকার সঙ্গে এক বারের বেশি পর্দায় কাজ করতে পছন্দ করতেন না সুশান্ত।
এই নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছিল দিশা পাটানির ক্ষেত্রে। ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’-র প্রথম অর্ধে দিশা ছিলেন সুশান্তের নায়িকা। পরে তাঁর ‘ওয়েলকাম টু নিউইয়র্ক’ ছবিতেও ক্যামিয়ো ভূমিকায় ছিলেন দিশা।
দিশার প্রেমেও নাকি মজেছিল সুশান্তের প্রেমিক মন। ইন্ডাস্ট্রিতে শোনা যায় এমন কথাও। তবে দিশা বার বার বলেছেন, তাঁরা দু’জনে খুব ভাল বন্ধু।
সুশান্তের মৃত্যুর ঠিক আগের দিন, ১৩ জুন ছিল দিশার জন্মদিন। সে দিনও তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে উল্লেখ করেছিলেন সুশান্তের কথা।
তবে গুঞ্জন অনুযায়ী সুশান্তের শেষ বসন্তের সঙ্গিনী ছিলেন রিয়া চক্রবর্তী। রাজপুত পরিবারের ঘনিষ্ঠ জনরাও নাকি বলতেন, এক বাঙালি তরুণীকে বিয়ে করতে চলেছেন তাঁদের সুশান্ত।
মহেশ ভট্টের সঙ্গে অন্তরঙ্গতার সুবাদে প্রবাসী রিয়ার নাম চলে আসে বলিউডের প্রথম সারিতে। কিন্তু মহেশকে বরাবর নিজের শিক্ষক বলে পরিচয় দিয়ে এসেছেন ‘মেরে ড্যাড কি মারুতি’, ‘সোনালি কেবল’, ‘দোবারা’ ছবির নায়িকা।
সুশান্ত-রিয়া একসঙ্গে বেড়াতেও গিয়েছিলেন লাদাখ আর প্যারিস। তখনও জনসমক্ষে নিজেদের পরিচয় দিতেন ‘ভাল বন্ধু’ বলেই।
তাঁদের অপ্রকাশিত প্রেম পর্ব কার্যত সিলমোহর পড়ে গত ২১ জানুয়ারি, সুশান্তের ৩৪ বছরের জন্মদিনে। ইনস্টাতে দু’জনের ঘনিষ্ঠ ছবি পোস্ট করে রিয়া লেখেন, ‘মাই ক্রেজি ডায়মন্ড’।
এর পরেও সুশান্তকে বন্ধু বলেই পরিচয় দিয়েছেন রিয়া। সুশান্তের এই চরম সিদ্ধান্তের পিছনে উঠে আসছে তাঁর এই বাঙালি বান্ধবীর নামও।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও শোকবার্তা পোস্ট করেননি রিয়া। বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের যোগাযোগ করার সব পথও। প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের সম্পর্ক কি ছিল শেষ অবধি? আবারও বিচ্ছেদের ব্যথায় আরও গভীর অবসাদে ডুবে গিয়েছিলেন অভিনেতা? উত্তর রয়ে গেল ‘আনটোল্ড’ হয়েই।