দুঃখটাকেই রেওয়াজে ঢেলে দিয়েছি

ভূমি ছেড়ে দিলেও, সেই গানগুলোর জনপ্রিয়তা তাঁকে ছাড়েনি। নিজের মতো করে ‘তুলকালাম’ হিটের চেষ্টা চািলয়ে যাচ্ছেন সুরজিৎভূমি ছেড়ে দিলেও, সেই গানগুলোর জনপ্রিয়তা তাঁকে ছাড়েনি। নিজের মতো করে ‘তুলকালাম’ হিটের চেষ্টা চািলয়ে যাচ্ছেন সুরজিৎ

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০১:০১
Share:

সুরজিৎ।—ফাইল চিত্র।

আজও তিনি ভূমি-র সুরজিৎ। কেউ ‘ভূমির সুরজিৎ’ বলে সম্বোধন করলে যারপরনাই খুশি হন। মনে করেন, এটাই সংগীত জীবনের প্রাপ্তি। গোড়া থেকেই ব্যান্ড ছাড়া একক গানের কথা ভাবতে পারেননি। তাই ভূমি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দল গড়লেন ‘সুরজিৎ ও বন্ধুরা’ নামে। ঝুঁটি বাধা, সদাহাস্য, লম্বা গড়নের এই সুরকার অনায়াসেই বললেন, ‘‘ভূমি ছেড়ে আসার পর যখন মনকেমন, তখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না দলের নাম কী দেওয়া যায়। ভূমি-র পর ‘একতারা’ হলে বড্ড ক্লিশে হয়ে যেত...।’’

Advertisement

দেখতে দেখতে পাঁচ বছর। মঞ্চে উঠলে আজও শ্রোতাদের মধ্য থেকে অনুরোধ আসে ভূমি-র গান ‘কান্দে শুধু মন’, ‘বারান্দায় রোদ্দুর’। তবে এখন সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘ভ্রমর’।

তা হলে ‘প্রাক্তন’ ভূমি-র সুরজিৎকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে? এক কথায় স্বীকার করলেন, ‘‘ফিল্মের গানই তো এখন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে চালাচ্ছে। কিন্তু এটা হওয়ার কথা ছিল না। ভাবুন তো, বাঙালির অনুরোধের আসর! তখন কোথায় ছবির গান?’’ কণ্ঠে আফসোস গায়কের। অনেক আড়ষ্টতা, সংশয় নিয়েও রেডিয়োতে প্রাইভেট অ্যালবাম বাজানোর জন্য অনুরোধ করতে গিয়েছিলেন সুরজিৎ। উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘‘ওঁরা উল্টে আমাকেই বললেন, গান বাজাব। কিন্তু টাকা দাও। আর সেটাও এক-আধ টাকা নয়। লাখের ওপরের বাজেট। এই পর্যায়ে চলে গিয়েছে গানবাজনা।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: লর্ডস থেকে ফিরে ক্যামেরায় মুখোমুখি ঝুলন

ডিজিটাল মিডিয়াই ভরসা। মনে করিয়ে দেন, অ্যালবাম করেও আগে যে সাংঘাতিক কোনও লাভ হতো, তা নয়। সিডি বিক্রি হলেও মিউজিক কোম্পানি শিল্পীদের দারুণ কিছু টাকা দিত, এ ঘটনা বিরল। যুগের নিয়মে তিনি বুঝে গিয়েছেন, নিজের ঢাক ভদ্র ভাবে নিজেকেই পেটাতে হবে। ভরসা করছেন ইউটিউব চ্যানেলের উপর। নিজের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘‘দুর্ধর্ষ একটা গান বানাতে হবে...না, মানে অন্তত চেষ্টা করতে হবে। যদিও জানি, বাংলা গানে কোটি কোটি হিট আনা সহজ নয়।’’

সম্প্রতি সিনেমার গানের কাজে হাত দিয়েছেন সুরজিৎ। পরিচালক নীতীশ রায়ের সঙ্গে রূপকথার ছবি ‘বুদ্ধু ভুতুম’। চমৎকার সুর করেছেন। সুর দিয়েছেন শঙ্কুদেব পণ্ডার ‘কমরেড’-এও। তা ছাড়াও রয়েছে ‘কুসুমিতার গপ্পো’, ‘পুজোর ডায়েরি’র কাজ। ছবির কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, বাংলায় সত্যিকারের ভার্সেটাইল গায়কের অভাব। বুঝিয়ে বললেন সে কথা, ‘‘সম্প্রতি ‘কমরেড’ ছবিতে এমন একটা গান ছিল, যার জন্য গায়িকার মৌলিক গায়কিও বদলে ফেলার প্রয়োজন হয়। সেটা কোথাও পাচ্ছিলাম না। আকৃতির (কক্কর) কাছে নিয়ে গিয়ে ফেললাম। ও চমৎকার ভাবে গানটা গেয়ে দিল।’’ এক গানেই স্টার হওয়া যায়, এটা মানেন না। বললেন, ‘‘এমনকী ‘আমাকে আমার মতো’ জনপ্রিয় গানের পরেও অনুপমকে অনবরত হিট গান দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই ও স্টার। বহু জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও অনুপমের পা আজও মাটিতে রয়েছে, আকাশে নয়।’’ সুরজিৎ নিজেও তাই। ‘বারান্দায় রোদ্দুর’-এ থেমে যায়নি তাঁর কণ্ঠ। ‘ক্যাবলা হয়ে যাই’, ‘গাড়ি সিগন্যাল মানে না’— একের পর এক হিট গান আজও বঙ্গমঞ্চ মাতিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি মনে করেন, আজকের রিয়্যালিটি শোয়ের রমরমা যতই বাড়ুক, সেখানে গায়কদের নিজস্বতা তৈরি হচ্ছে না। বললেন, ‘‘প্রতিযোগীরা শুধু মান্না-কিশোর-আশা-লতার গান গেয়ে নম্বর পাচ্ছে। নিজের গান কোথায়?’’

রাজনীতির মঞ্চে তাঁকে দেখা গিয়েছে কয়েক বার। অনেকে নাকি জানতেও চেয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ডাকছেন। কী ব্যাপার? কিন্তু সোজা বললেন, ‘‘রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না।’’ আসলে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন, বিশাল গাড়ি, বড় বাড়ি— এ রকম বাঁধা ছকে জীবনটাকে বানাননি তিনি। ছটফটিয়ে বললেন, ‘‘একটা তুলকালাম হিট গান দিতে চাই, বুঝলেন।’’ ভূমি ছেড়ে আসার ধাক্কা তাঁর জেদ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বললেন, ‘‘দুঃখটাকেই রেওয়াজে ঢেলে দিয়েছি।’’ নিজের মাকে মনে রেখে তৈরি করেছেন ‘মা ফাউন্ডেশন’— গান এবং বাজনার স্কুল। আর দিনরাত হাতড়ে বেড়াচ্ছেন একের পর এক পাগল করা সুর। যা একই সঙ্গে সকলের গান, আবার একারও গান!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement