Sushant Singh Rajput

সুশান্তের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

১৪ জুন তাঁর বান্দ্রার ফ্ল্যাটে বলিউডের অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ মেলে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নামে মুম্বই পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২০ ০৪:৩৯
Share:

সুশান্ত সিংহ রাজপুত। ফাইল চিত্র।

সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। মুম্বই পুলিশ ও বিহার পুলিশের পারস্পরিক দোষারোপে ‘তদন্ত মেঘাচ্ছন্ন’ হচ্ছে, এই মন্তব্য করে আজ বিচারপতি হৃষীকেশ রায়ের বেঞ্চ ৩৫ পাতার রায়ে বলেছে, ‘‘সত্য যখন সূর্যের আলোর ছোঁয়া পাবে, তখন যাঁরা জীবিত তাঁরাই যে শুধু ন্যায়বিচার পাবেন তা নয়। যিনি মারা গিয়েছেন, তিনিও শান্তির ঘুম ঘুমোবেন।’’

Advertisement

১৪ জুন তাঁর বান্দ্রার ফ্ল্যাটে বলিউডের অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ মেলে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নামে মুম্বই পুলিশ। কিন্তু ২৫ জুলাই পটনায় একটি এফআইআর দায়ের করেন সুশান্তের বাবা কে কে সিংহ। সেখানে তিনি সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী ও আরও ছ’জনের বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া ও টাকা তছরুপের অভিযোগ এনেছিলেন। সেই এফআইআর মোতাবেক মুম্বই গিয়ে তদন্ত শুরু করে বিহার পুলিশ। আর তখনই শুরু হয়ে যায় নীতীশ কুমার সরকার বনাম উদ্ধব ঠাকরে সরকারের চাপানউতোর। এর মধ্যেই রিয়া শীর্ষ আদালতে আর্জি জানান, মুম্বই পুলিশ যে হেতু প্রথম থেকে তদন্ত করছে, তারাই শুধু তদন্ত চালিয়ে যাক এবং বিহার পুলিশের কাছে কে কে সিংহের করা এফআইআর স্থানান্তরিত করে মুম্বই পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। কয়েক দিন শুনানির পরে আজ রিয়া চক্রবর্তীর করা সেই আবেদনেরই রায় দিল শীর্ষ আদালত।

ইতিমধ্যে বিহার সরকার কেন্দ্রের কাছে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছিল এবং সুপ্রিম কোর্টেও সে কথা জানিয়েছিল। সিবিআই তদন্তের সেই আবেদনেই শিলমোহর দিয়ে বিচারপতি রায় আজ বলেন, ‘‘সুশান্ত সিংহ রাজপুত এক প্রতিভাবান অভিনেতা ছিলেন। তাঁর আরও অনেক কাজ করার ক্ষমতা ছিল। তাঁর মৃত্যুর পিছনে কোনও অপরাধমূলক কাজ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।’’ সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে বিচারপতি জানিয়েছেন, এর পরেও যদি সুশান্তের মৃত্যু সংক্রান্ত কোনও মামলা দায়ের হয়, তা হলে সিবিআই-ই তার তদন্ত করবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: শাস্তি হোক অপরাধীর, সুশান্ত-কাণ্ডে দাবি শ্রীলেখা, ঊষসী, নীল, অতনুর

মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি, বিহার পুলিশের সঙ্গে অসহযোগিতা, এমনকি তথ্যপ্রমাণ লোপের চেষ্টার অভিযোগও এনেছিল সুশান্তের পরিবার। আজ বিচারপতি রায় জানান, আপাত ভাবে মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। তবে বিহার পুলিশের তদন্তে সাহায্য না-করে মুম্বই পুলিশ তাদের নিজেদের তদন্তেরই নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পৃথক মামলা দায়ের করে বিহার পুলিশের তদন্ত চালানো বা বিহার সরকারের সিবিআই তদন্তের সুপারিশ যে ‘আইনসিদ্ধ’, সে কথাও জানিয়েছেন বিচারপতি। রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘মুম্বই পুলিশ ও বিহার পুলিশ এত দিন ধরে পরস্পরকে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট— এই দোষারোপ করে চলেছে। এর ফলে সব পক্ষের তদন্তই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে এবং এই ধরনের পরিস্থিতিতে সত্যের মৃত্যু এবং ন্যায়বিচারের ক্ষতি হতে পারে। সুশান্তের পরিবার ও তাঁর ভক্তেরা এই তদন্তের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তাই এই মুহূর্তে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের খুব প্রয়োজন।’’

অভিনেতার মৃত্যু ঘিরে যার যা ইচ্ছে, একটা করে তত্ত্ব খাড়া করছে বলে আজ মন্তব্য করেন বিচারপতি। তাঁর কথায়, ‘‘এই সব জল্পনা বন্ধ করা দরকার। তদন্ত যখন সত্যের পথে চলবে, তখনই সাধারণ মানুষ বিচারব্যবস্থায় আস্থা ফিরে পাবেন।’’ বিচারপতির মতে, ‘‘এই তদন্তের পরিণতি সুশান্তের বাবাকে শান্তি দেবে। তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে হারিয়েছেন।’’ সুশান্তের বান্ধবী এবং কে কে সিংহের করা এফআইআরের প্রধান অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তী সম্পর্কে শীর্ষ আদালতের রায়, ‘‘রিয়া নিজেও সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন বলে আদালতে জানিয়েছিলেন। যাঁরা এই মামলায় নানা অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন, নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তাঁরাও ন্যায়বিচার পাবেন।’’

সিবিআই তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট ছাড়পত্র দেওয়ায় খুশি সুশান্তের পরিবার, বলিউড ও তাঁর ভক্তেরা। সুশান্তের পরিবারের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘দেশের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা আশা করছি, এই ঘৃণ্য অপরাধে যারা যুক্ত, তারা শাস্তি পাবে। ভারত যে এক সার্থক গণতান্ত্রিক দেশ, তা সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে ফের প্রমাণিত হল।’’ এই বিবৃতিতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে সুশান্তের পরিবার। অক্ষয় কুমার, কঙ্গনা রানাউত-সহ বলিউডের অভিনেতারাও সিবিআই তদন্তের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement