(বাঁ দিকে) শাহরুখ খান। সানি দেওল (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
গত বছরটা সানি দেওলের ভালই কেটেছে। ‘গদর ২’-এর বিপুল সাফল্যের পর থেকে তাঁকে হাসিমুখে নানা জায়গায় সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গিয়েছে। একই বছরে ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’-তে ধর্মেন্দ্রর অভিনয়ও নস্ট্যালজিক করে তোলে দর্শককে। আবার বছরশেষে ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে ববি দেওলের চরিত্রটি সাড়া ফেলে দেয় গোটা দেশে। সানির ছেলের বিয়েও ধুমধাম করে হয় গত বছরই। সব মিলিয়ে দেওল পরিবারের খুশি আবহ ছিল গোটা বছর জুড়েই। সেই খুশির পরিবেশে আরও একটি কারণে হালকা হতে পেরেছিলেন সানি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ৩০ বছরের পুরনো এক ঝগড়া মিটিয়ে ফেলেছিলেন অভিনেতা।
৩০ বছর ধরে দুই অভিনেতার মনোমালিন্য চলছিল। একে অপের মুখ দেখা তো দূর, ফোনে কথাও বলেননি তাঁরা। তবে ২০২৩-এ অগস্ট মাসে মুক্তি পায় সানির বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘গদর ২’। এই ছবির অপ্রত্যাশিত বক্স অফিস সাফল্য চমকে দিয়েছিল খোদ নির্মাতাদেরও। বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর সানিকে নিয়ে নতুন করে বিস্তর লেখালিখি শুরু হয় নানা পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেটে। যে সানি খুব একটা পার্টি করেন না, বলিউডের কোনও অনুষ্ঠানেই যান না, তিনি নিজে ছবির একটি সাকসেস পার্টি দেন। সেই পার্টিতে ইন্ডাস্ট্রির বহু তারকা হাজির ছিলেন। সকলকে চমকে দিয়ে পার্টিতে পৌঁছন শাহরুখ খান। ৩০ বছর পর দু’জনের দেখা। এবং দেখা হতেই কোলাকুলি করেন দুই অভিনেতা। সেই ছবি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
এত বছরের মনোমালিন্য এত সহজে মিটল কী করে? পরে সানি জানান, তিনি নিজে ফোন করে শাহরুখকে আমন্ত্রণ করেছিলেন। এবং শাহরুখও এক কথায় রাজি হয়ে যান। সম্প্রতি এ বিষয়ে সানি বলেন, ‘‘আসলে সময় সব ক্ষতে মলম লাগিয়ে দিতে পারে। কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। আমাদের বয়স যখন কম ছিল তখন পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। এখন আমরা সকলেই নিজের জীবনে তৃপ্ত। সবাই জীবনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। মানসিক ভাবে সকলেই এখন খুশি। তাই পুরনো ঝগড়া আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। সকলে আমার পার্টিতে এসেছিলেন তাতে আমি খুবই খুশি।’’
তা হলে কি এত দিন সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সানি? তার স্বাদ মিলতেই পুরনো তিক্ততা মুছে ফেললেন। কিন্তু ৩০ বছর আগে কী এমন হয়েছিল? এই ঝগড়ার সূত্রপাত সেই ‘ডর’ ছবি থেকে। সানি একদমই সন্তুষ্ট ছিলেন না তাঁর চরিত্র নিয়ে। তিনি ছিলেন ছবির নায়ক, নায়িকা জুহি চাওলা এবং খলনায়ক শাহরুখ। খলচরিত্র হওয়া সত্ত্বেও শাহরুখের চরিত্রই বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল। এবং এই ছবি যে তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, তার সাক্ষী ইতিহাস। তবে সানি শুরু থেকেই এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেই সময় খলচরিত্রকে প্রাধান্য দেওয়ার চল ছিল না। নায়ক গুরুত্ব পাবে না, এ কেউ ভাবতেও পারতেন না। তাই ছবির নির্মাতা যশ চোপড়ার কাছে অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন সানি। যদিও যশ এ বিষয়ে চিত্রনাট্যে কোনও বদলই করতে রাজি হননি। সেই সময় বেজায় চটে যান সানি। শোনা যায়, রাগে-দুঃখে নাকি নিজের পরনের ট্রাউজার্স ছিঁড়েই ফেলেন সানি। তাও মন গলেনি যশের। ছবির সম্পাদনায় একচুলও বদল করেননি তিনি। শাহরুখের উত্থান ‘ডর’ থেকেই। বলিউডের বাদশা হওয়ার রাস্তাটা সেই সময়ই তৈরি হয়ে যায়। হয়তো সেই কারণেই সানির অভিমান এত বছর টিকেছিল। ২০২৩-এ বিপুল সাফল্যের মুখ দেখে অবশেষে সেই মান-অভিমানের পালা মিটল।