সব ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। দর্শক দেখেন। ব্যবসা হয়। তেমনই সব ধারার কাজেই প্রারম্ভিক কিছু কাজ কিন্তু এক। পরিচালক পরিচালনা করেন। আমরা রূপটান নিয়ে চরিত্র হয়ে উঠি। ক্যামেরার সামনে অভিনয় করি। এটা বলতে পারি, এখন আমার কাছে বিষয় নির্ভর চিত্রনাট্য আসছে।
রান্না শিখছেন শুভশ্রী!
মেহুলের সেই ফুল ছাপ খাটো ফ্রক নেই! পরনে নরম নীলচে সবুজ তাঁত। গোলাপি হাতাকাটা ব্লাউজ। দুই বিনুনির চুল পরিপাটি আঁচড়ে কাঁধ ছাপিয়ে। এ ভাবেই কেয়াতলার ‘অঞ্জলি বাটী’-তে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর হাতা-খুন্তি সামলাচ্ছেন ‘পৌলমী’ শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। ভাল-মন্দ রাঁধছেনও!
প্রশ্ন: বুধবার সক্কাল সক্কাল শাড়িতে সুন্দরী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়! ব্যাপার কী?
শুভশ্রী: (গলা খুলে হাসি) এটাই আমার আগামী ছবির লুক। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘বৌদি ক্যান্টিন’-এর। ভরা গরম। পরমদারা তাই খুব নরম তাঁতের শাড়ি আর মানানসই স্লিভলেস ব্লাউজ বেছেছেন। যত রকমের হাল্কা, মিষ্টি রঙ আছে সব পরব। আমারও খুব আরাম লাগছে।
প্রশ্ন: রাজ ‘লুক’ দেখেছেন?
শুভশ্রী: হ্যাঁ দেখেছে। খুব খুশি হয়েছে। বলেছে, পরম সাজগোজ নিয়েও বেশ সজাগ। গরমে খুব সুন্দর সাজিয়েছে তোমায়। খুব স্নিগ্ধ, মিষ্টি লাগছে দেখতে।
প্রশ্ন: কোথায় শ্যুট হচ্ছে? সঙ্গে কারা?
শুভশ্রী: কেয়াতলার ‘অঞ্জলি বাটি’তে শ্যুট হচ্ছে। আমার সঙ্গে পরমদা, অরুণ মুখোপাধ্যায়, অনুসূয়া মজুমদার, ঋদ্ধিশ, পুষণ সবাই আছেন।
প্রশ্ন: ‘পরিণীতা’র সেই খাটো ফ্রকের চুলবুলে ‘মেহুল’ শাড়ি পরে ‘বৌদি’! খুশি?
শুভশ্রী: (খুশির হাসি) খুশি হব বলেই তো এই ধরনের চরিত্র বাছা। আমরা জীবনে যা করি সেটা নিজেকে তৃপ্ত করব বলেই করি। আরও খুশি, ইদানীং যে ধরনের চরিত্রগুলো আসছে বেশ অন্য রকম। যেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব বা পারছি। আরও ভাল লাগে যখন সংবাদমাধ্যম আগ্রহ দেখায় বা অনুরাগীরা ছবি দেখে মন্তব্য করে। এ সমস্তই নতুন ধারার কাজ করতে বেশি বেশি উৎসাহ জোগায়। মেহুলকে যেমন সবাই ভালবেসেছেন, পৌলমীকেও ততটাই ভাল লাগবে সবার। এটা আমার আশা। সত্যি হলে আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হবে না।
শুভশ্রী যখন পৌলমী।
প্রশ্ন: পৌলমীকে কেন ভাল লাগবে দর্শকদের?
শুভশ্রী: অনেক কারণে ভাল লাগবে। নারীশক্তির প্রতিনিধি পৌলমী। সমাজকে, সংসারকে অনেক বার্তা দেবে। বিনোদনের হাত ধরে। এখন নারীরা এক জোট হলে অনেক অসাধ্যসাধন করতে পারে। সেই দিকটিও দেখতে পাবেন দর্শক। বাকিটা জানতে গেলে তো ছবিটা দেখতে হবে।
প্রশ্ন: ‘পরিণীতা’, ‘হাবজি গাবজি’, ‘ধর্মযুদ্ধ’, ‘ডা. বক্সী’, ‘বৌদি ক্যান্টিন’---- ক্রমাগত নিজেকে ভাঙছেন। আর বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে ফিরবেন না?
শুভশ্রী: আমার মতে, সব ছবিই বাণিজ্যিক। আমরা কেউই তো নিজের জন্য ছবি বানাই না। সব ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। দর্শক দেখেন। ব্যবসা হয়। তেমনই সব ধারার কাজেই প্রারম্ভিক কিছু কাজ কিন্তু এক। পরিচালক পরিচালনা করেন। আমরা রূপটান নিয়ে চরিত্র হয়ে উঠি। ক্যামেরার সামনে অভিনয় করি। এটা বলতে পারি, এখন আমার কাছে বিষয় নির্ভর চিত্রনাট্য আসছে। আমি বেছে ভিন্ন ধরনের চরিত্র নিচ্ছি। তার মানে এটাও নয়, যে ধরনের চরিত্র করে সবার ‘শুভশ্রী’ হয়ে উঠেছি তাকে ভুলে গিয়েছি। বিনোদন দুনিয়ার তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয়ও কিন্তু মুখের কথা নয়। পাহাড়ের ঢালে, সমুদ্রে নাচ-গান করাও খুব কঠিন। ভাল চিত্রনাট্যে বাণিজ্যিক বা বড় স্কেলের ছবির উপাদান সুন্দর করে মিশিয়ে দিতে পারলে আমার কোনও আপত্তি নেই। চোখ বুজে সেই ছবি করব।
প্রশ্ন: ‘বৌদি ক্যান্টিন’ নিয়ে পরমব্রতর সঙ্গে তিনটে কাজ। পরিচালক-প্রযোজক না অভিনেতা পরমব্রত, কে বেশি কড়া?
শুভশ্রী: পরিচালক, অভিনেতা দুই ধারাতেই পরমদাকে দেখলাম। পেশার সঙ্গে কোনও আপোস নেই ওর। যে কোনও ধারাতেই নিবেদিতপ্রাণ। অভিনয়ের সময় তার বাইরে কিচ্ছু বোঝে না। পরিচালক পরমদা বেশ কড়া। খুব যে বকছে তা কিন্তু নয়। কিন্তু খুঁটিনাটি সব বিষয়ে নজর। যেটা চায় সেটা আদায় করে নেয়। কী চাইছে, সেটাও ওর কাছে স্পষ্ট। তাই শ্যুটিংয়ের জায়গাতেও কোনও অবাঞ্ছিত সমস্যা নেই। সব খুব মসৃণ ভাবে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আজকের ব্যস্তদের জন্য পৌলমীর ক্যান্টিন আছে। রাজের সংসারে শুভ নিজে কী কী রাঁধেন?
শুভশ্রী: (হেসে ফেলে) রাজের জন্মদিন বা বাড়ির বাচ্চাদের জন্মদিনে পায়েস ছাড়া কিচ্ছু রাঁধি না। রাজ বা শাশুড়ি মা আমায় আগুনের আঁচে যেতেই দেন না! বিয়ের আগে যাও বা রাঁধতে জানতাম গত চার বছরের বিবাহিত জীবনে সব ভুলে গিয়েছি। অভ্যাস না থাকলে যা হয়। সেই ফাঁকটা ভরাট হচ্ছে পরমদার সেটে। শ্যুট করতে করতেই বেশ কিছু রান্না শিখে নিয়েছি। পরমদাকেও জানিয়েছি সেটা।
প্রশ্ন: ‘ধর্মযুদ্ধ’ চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে। ‘হাবজি গাবজি’ জুনে মুক্তি পাবে। ‘ধূমকেতু’-র ভবিষ্যৎ কী?
শুভশ্রী: (একটু থেমে) সত্যিই বলতে পারব না। এই দুটো ছাড়াও আরও এক মুঠো ছবি এ বছর মুক্তি পাওয়ার কথা। তালিকায় 'ধর্মযুদ্ধ', 'হাবজি গাবজি', ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ‘বিসমিল্লা’, ‘পাখি’, বৌদি ক্যান্টিন সহ সম্ভবত ৬-৭টি ছবি মুক্তি পাবে। বাকি ছবির কথা জানি না।
প্রশ্ন: ২৯ এপ্রিল দেব আর জিৎ-এর ‘কিশমিশ’, ‘রাবণ’ মুক্তি পাচ্ছে, আপনার দুই নায়ককে কিছু বলবেন না?
শুভশ্রী: অবশ্যই। দু’জনের জন্যই আন্তরিক শুভেচ্ছা। দু’জনের ছবিই হিট হোক। সাফল্যের মুখ দেখুক দেব, জিৎ। দুটো বাংলা ছবি দেখতেই প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমাক দর্শক। টলিউড ঘুরে দাঁড়াক। দর্শক কেবল বাংলা ছবি দেখতেই যেন আবার হলমুখী হন।