প্রতীকী ছবি।
লকডাউনের জন্য সমস্ত শুটিং অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। কিন্তু আংশিক বা সম্পূর্ণ লকডাউন উঠলেও শুটিং চলাকালীন মাথায় রাখতে হবে কিছু বিধিনিষেধ। তার জন্য সম্প্রতি একটি বিশেষ তালিকা প্রকাশ করেছে ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন)। সেই তালিকায় লেখা রয়েছে লকডাউন ওঠার পরেও সাময়িক ভাবে কী কী নিয়ম মেনে শুটিং করতে হবে।
নিয়মাবলিতে সর্বাগ্রে খেয়াল রাখা হয়েছে শিল্পী, টেকনিশিয়ানদের স্বাস্থ্যের কথা। শুটিং ফ্লোরে ঢোকার আগে প্রত্যেকের থার্মাল স্ক্রিনিং হবে। বাইরের জামাকাপড় পরে ফ্লোরে ঢোকা যাবে না। সেটে পরার জন্য জামাকাপড়ের সেট রাখা থাকবে আগে থেকে। ফ্লোরে ঢোকার আগে বাইরের জামা বদলে পরে নিতে হবে সেটের পোশাক। বেরোনোর আগে ছেড়ে ফেলতে হবে সেটি। রোজ সেটি কাচাও বাধ্যতামূলক। শুটিং চলাকালীন প্রত্যেক টেকনিশিয়ানের মাস্ক, গ্লাভস, জুতো পরে থাকা বাধ্যতামূলক। থাকবে স্যানিটাইজ়ার টানেল। প্রত্যেককে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে হবে সেটি। সমস্ত টেকনিশিয়ানকে খাবার আনতে হবে বাড়ি থেকে। তার জন্য অবশ্য টেকনিশিয়ানদের খাবারের বাজেট ধরে দিতে হবে প্রযোজকদের। খাবারের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে ৪৫ মিনিট। তার মধ্যে প্রত্যেক শিল্পী ও টেকনিশিয়ানকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। খাবারের জন্য ইউজ় অ্যান্ড থ্রো প্লেট, চামচ, গ্লাসের বন্দোবস্ত করবে ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন নিজে। শিল্পী কিংবা টেকনিশিয়ানদের মধ্যে কেউ অন্তঃসত্ত্বা হলে কিংবা পরিবারের অন্য কোনও সদস্য প্রেগন্যান্ট থাকলে, কোনও ভাবেই শুটিং স্পটে আসা চলবে না। সিরিয়াল এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য সমস্ত আউটডোর শুটিং বন্ধ। যা শুট করার, তা সারতে হবে ইনডোরেই। নন-ফিকশনে শুটিং চলাকালীন সঞ্চালক ও প্রতিযোগীদের মধ্যে ন্যূনতম তিন-পাঁচ ফুটের দূরত্ব বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
ফিকশন ও নন-ফিকশন দুই ক্ষেত্রেই কোনও টেকনিশিয়ান অসুস্থ থাকলে ফিটনেস সার্টিফিকেট জমা দিয়েই ফ্লোরে ঢুকতে হবে। যে টেকনিশিয়ান ১৪ দিনের কোয়রান্টিনে গিয়েছিলেন, তাঁকে জমা করতে হবে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট। অন্যথায় ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হবে সেই ব্যক্তিকে।
মেকআপ আর্টিস্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকআপ আর্টিস্ট, হেয়ার ড্রেসারদের পিপিই কিট দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। মেকআপ চলাকালীন একটি ঘরে দুই বা তিনজনের বেশি মানুষ থাকতে পারবেন না। পাশাপাশি ফ্লোরে ব্যবহৃত বাথরুম পরিষ্কার করা, পরিশুদ্ধ জল পানের ব্যবস্থা করার দিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। খেয়াল রাখা হচ্ছে টেকনিশিয়ানদের যাতায়াতের ব্যবস্থার দিকেও। প্রত্যেককে পিক আপ এবং ড্রপ দেওয়ার কথা উঠেছে। বড় গাড়িতে পাঁচজন এবং ভ্যানে আটজনের বেশি কাউকে নেওয়া যাবে না। রোজ স্যানিটাইজ় করতে হবে গাড়িও।
যে নন-ফিকশন শোয়ে অডিয়েন্স দরকার, তার জন্য আগাম অনুমতি নিতে হবে। ফিকশন শো দৈনিক ১২ ঘণ্টা এবং নন-ফিকশন শো রোজ ১৪ ঘণ্টার বেশি শুটিং করা যাবে না। ফিকশন শোয়ের ক্ষেত্রে শিল্পী ছাড়া ২৩-২৫ জনেই শুটিং সারতে হবে। নন-ফিকশনে সব ডিপার্টমেন্টের মোট ৬০ জন মিলে কাজ করা যাবে। বাইরে থেকে আসা গাড়ির ড্রাইভার বা অন্য কারও শুটিং ফ্লোরে প্রবেশের অনুমতি মিলবে না।
স্টোরি লাইন ও চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রেও বেঁধে দেওয়া হয়েছে নিয়ম। এমন দৃশ্য শুট করতে হবে, যাতে দু’-তিনজন অভিনেতা আছেন, তার বেশি নয়। প্রয়োজনে জুনিয়র আর্টিস্টকেও শুট করার অনুমতি দেওয়া হবে। স্টোরি লাইন ও স্ক্রিপ্ট এমন ভাবেই লিখতে হবে, যাতে সমস্ত নিয়ম পালন করা যায়।
এ কথা স্পষ্ট, অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত এই তালিকায় খেয়াল রাখা হয়েছে শিল্পী থেকে টেকনিশিয়ান... সকলের দিকেই। তবে এটি খসড়া। সরকার, চিকিৎসক ও ইম্পার অন্য সংগঠনের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। প্রযোজনা সংস্থা এবং বাকি সকলে এর সঙ্গে সহমত হলে, তবেই নিয়ম বলবৎ হবে। দল বেঁধে কাজ করলে তবেই শুটিং সফল হয়। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই নিয়ম কতটা মেনে চলা সম্ভব, তা সময়ই বলবে।