শনিবার চলচ্চিত্র উৎসবের আড্ডায় তারকা সমাহার। ছবি: সংগৃহীত।
বাঙালি মানেই আড্ডা। শনিবার ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শনিবার সন্ধ্যায় নন্দনকে যেন ঘিরে ধরল সেই আড্ডার মেজাজ। সিনেপ্রেমীদের লক্ষ্য তখন একতারা মুক্ত মঞ্চ। কারণ কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হবেন টলিপাড়ার একঝাঁক তারকা। আলোচনার বিষয় ‘চরিত্র না তারকা’। উৎসবের প্রথম ‘সিনে আড্ডা’য় পক্ষে-বিপক্ষে বললেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চঞ্চল চৌধুরী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, রাজ চক্রবর্তী, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, ঈশা সাহা, নাজিফা তুষি। সৌরভ দাসের সঞ্চালনায় জমে উঠল বৈঠকি আড্ডা।
বিতর্ক সভার শুরুতেই প্রসেনজিৎ শোনালেন ‘২২শে শ্রাবণ’ ছবি থেকে তাঁর বিখ্যাত সংলাপ— ‘‘জীবনে ভাত-ডাল ও বিরিয়ানির তফাতটা বুঝতে শেখ। প্রথমেরটা নেসেসিটি, পরেরটা লাক্সারি।’’ আলোচনার মূল সূত্র যেন এখানেই গাঁথা হয়ে গেল। প্রসেনজিতের কথায় , ‘‘তারকা ও স্টারডম দুটোই প্রয়োজন। কারণ এক জন তারকাও কিন্তু অভিনয় করতে পারেন।’’
শনিবার দুপুর থেকেই নন্দন চত্বরে বাড়তে থাকে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী আবার নিজেকে ‘তারকা’ মানতে নারাজ। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমি চরিত্রের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। স্টারডম ভাল লাগে। কিন্তু তার আগে অভিনয় জানাটা জরুরি।’’
ইন্ডাস্ট্রিকে একাধিক তারকা উপহার দিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী। তাঁর মতে, ভাল চরিত্র এবং দর্শক আসলে তারকার জন্ম দেন। বনি-কৌশানীকে ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে এসেছিলেন রাজ। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বনি বললেন, ‘‘ফিল্মি পরিবারে বড় হয়েছি বলে ছোট থেকেই তারকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকে আর সেই স্টারডম নেই। নিজের কাজটা শুধু মন দিয়ে করি।’’
বলা হয় সমাজমাধ্যমের ফলোয়ার দেখে এখন নাকি টলিপাড়ায় অভিনেতা নির্বাচন করা হয়। কৌশানী বলেন, ‘‘মাচায় আমাকে দেখার জন্য অগণিত অপেক্ষারত মানুষ আমার কাছে স্টারডম।’’ এ প্রসঙ্গেই অভিনেত্রী মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘লকডাউনের সময় অনেকের হাতে কাজ ছিল না। আজকে কাজ আসছে এটাই ভাল কথা। তাই আগে মন দিয়ে অভিনয় করতে হবে।’’
শনিবার সন্ধ্যায় নন্দনে উপচে পড়ল ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
ইশাও সমর্থন করলেন কৌশানীর মন্তব্য। বাংলাদেশের ‘হওয়া’ ছবির অভিনেত্রী নাজিফা তুলনায় ঢালিউডে নতুন। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে মিল নেই এ রকম চরিত্রই আমাকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ স্টারডম আসে-যায়, কিন্তু অভিনয় থেকে যায়।’’
নন্দনের দর্শক তখন অপেক্ষা করছিলেন অনির্বাণের বক্তব্য শোনার জন্য। এক সময়ের চরিত্রাভিনেতা অনির্বাণ আজকের তারকা। কিন্তু অনির্বাণ এই বক্তব্যকে নস্যাৎ করে বললেন, ‘‘ছোটবেলায় আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ‘নমস্কার, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বীরপুরুষ’ এইটুকু বলে বেরিয়ে এসেছিলাম। তার পরেও আজকে যা পেয়েছি আমার কাছে সেটাই যথেষ্ট।’’ এ প্রসঙ্গেই ‘মন্দার’-এর পরিচালক মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আমি যা পারি না, যে আমার স্বপ্নপূরণ করে, সে তারকা। দর্শক ও নায়কের এই বিশ্বাসটাই স্টারডম। জীবনে এই অলীক ভালবাসারও প্রয়োজন আছে।’’
অন্য দিকে, শনিবার সকাল থেকেই নন্দন চত্বরে ভিড় বাড়তে শুরু করে। নন্দনের কাউন্টার থেকে ‘ডেলি পাস’ নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে শনিবার নন্দন-১ এ ইরানের পরিচালক জাফর পানাহির ‘নো বেয়ারস’ দেখার জন্য সিনেপ্রেমীদের মধ্যে আগ্রহ ছিল সব থেকে বেশি।