খ্যাতি আর শিকড়ের মধ্যে কোনও একটা বেছে নেওয়া সত্যিই কঠিন!
এটা কোনও প্রশ্ন ছিল না। নিছকই মন্তব্য। সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন হিসেবেই নিলেন। জবাবে পাল্টা বললেন, ‘‘আমাকে যে কোনও একটা বাছতে হবে কেন?’’
না, বাছাইয়ের সত্যিই কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু ‘বেগম জান’-এর ট্রেলার তিন কোটি মানুষ দেখেন আর বাংলা ছবি তিন লক্ষ! তখন চয়েস আপনা আপনি হয়ে যায়।
কলকাতার বহু বাঙালি মুম্বই গিয়ে থিতু হয়েছেন। তা হলে সৃজিত মুম্বইবাসী হলে বাংলায় এত হাপিত্যেশ কেন? অস্বীকার করার উপায় নেই, সৃজিতের ছবি নিয়ে সমালোচনা হলেও, তাঁর ছবি এলে দর্শক অন্তত নড়েচড়ে বসেন। ভাল-মন্দর চর্চা হয়। সেটাই বা কম কীসের!
‘বেগম জান’ নিয়েও চর্চা হচ্ছে। ‘রাজকাহিনি’র তুলনায় সংলাপ অনেক বেশি বোল্ড। সৃজিত বলছেন, সেটা হিন্দি ভাষার বৈশিষ্ট্যের কারণে। মুম্বইয়ে বিশেষ অতিথিদের জন্য স্ক্রিনিং করেছিলেন সৃজিত। খুবই ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন।
মহিলাকেন্দ্রিক ছবি নিয়ে বলিউ়ডে একটা হাওয়া উঠেছে। ‘পিঙ্ক’-এর পর ‘পার্চড’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’, ‘আনারকলি অব আরা’, ‘পূর্ণা’, ‘নাম শাবানা’... মহিলারাই যেখানে গল্পের শিরদাঁড়া। ‘বেগম জান’ সেই ব্যাটন আর একটু এগিয়ে নিয়ে গেল। আর বিদ্যা বালন নিজে বরাবর মহিলাপ্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘বেগম জান’ ছাড়া এত জন মহিলাকে পরদায় এতটা বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত হতে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। প্রস্তুতিটা অবশ্য স়ৃজিত বাংলায় থাকতেই করে ফেলেছিলেন। যে হাওয়াটা বলিউডে উঠেছে, সেটা বাংলায় এখনও জোরালো হয়নি। ‘রাজকাহিনি’ একটা টোকা দিয়েছিল। এ বার বাকি পরিচালকরা যদি মহিলাদের শো পিসের বাইরে আর কিছু ভেবে এগিয়ে যান...
জাতীয় পর্যায়ে যে স্বীকৃতি সৃজিত পাচ্ছেন সেটা বাংলা ছবি করে পেতেন না। যদিও পরিচালকের জবাব, ‘‘বাংলায় ছবি করেই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি।’’ কিন্তু ওই যে, বেশিসংখ্যক দর্শককে গল্প বলার লোভও তাঁর আছে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় যেমন বলে থাকেন, সৃজিতের বাংলায় ফেরার সম্ভাবনা কম। কথাটা বলতেই গমগমে স্বরে হেসে ফেললেন সৃজিত! আশ্বস্ত করলেন, কাকাবাবু ছাড়াও আর একটা বাংলা ছবি লক করে ফেলেছেন। আর হিন্দিতে? সেখানে অবশ্য চার-পাঁচটি ছবির কথা হচ্ছে। সবটাই ভট্ট-ক্যাম্পের সঙ্গে। মুম্বইয়ের পাল্লাই ভারী কিন্তু। ছবির স্ক্রিনিংয়ের পর আলিয়া ভট্ট তাঁকে ‘নিষ্ঠুর’ বলেছেন।
বাংলাও বোধহয় এ বার তাই বলবে!