রোশন সিংহ এবং শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: আপনি শ্রাবন্তীকে ছাড়ছেন না কেন?
রোশন: ছাড়ছি না আমি, বিষয়টা এমন নয়। জোর করে কাউকে আটকে রাখা যায় না। এখন তো শুনেছি, ওর মন অন্য দিকে। তবে একটা কথা বলি... ওর সঙ্গে বিচ্ছেদ হবে বলে তো বিয়ে করিনি!
প্রশ্ন: আপনি তো শ্রাবন্তীর সঙ্গে সংসার করতেই চান?
রোশন: হ্যাঁ। জানেন, পঞ্জাবে আমার পরিবারে এখনও অনেকেই জানে না আমি আর শ্রাবন্তী আলাদা থাকি। আজও আমার পরিবারের অনেকে শ্রাবন্তীর ছবিতে লাইক দেন। মিডিয়ার খবর ওদের কাছে যায়নি। তাদেরকে আমি কী বলব, জানি না।
প্রশ্ন: আপনি প্রথম সারির একজন নায়িকাকে বিয়ে করেছিলেন। মনে হয়নি, সম্পর্ক নাও থাকতে পারে?
রোশন: শ্রাবন্তী কোনও দিন বুঝতে দেয়নি, ও এত বড় মাপের নায়িকা। আমাদের সংসার খুব সুন্দর ছিল। আমার পরিবারের সকলের সঙ্গে ও খুব ভাল ব্যবহার করত।
প্রশ্ন: তা হলে কী এমন হল? আপনারা আলাদা হয়ে গেলেন!
রোশন: আমি বুঝতে পারছিলাম, ও স্পেস চাইছে। আলাদা থাকতে চাইছে। আমি ভেবেছিলাম, কিছু দিন একটু আলাদা থাকি আমরা। কিন্তু সেই স্পেসে অন্য কেউ চলে আসবে, ভাবতে পারিনি।
প্রশ্ন: সেই 'অন্য লোক' ব্যাবসায়ী অভিরূপ নাগচৌধুরী এখন শ্রাবন্তীর বিশেষ বন্ধু...
রোশন: শুনেছি। সংবাদমাধ্যমে পড়েওছি। আনন্দবাজার অনলাইনে আপনারাও তো খবর করেছেন। তবে দু'জনকে এক সঙ্গে আমি দেখিনি। এ নিয়ে কিছু বলার নেই আমার।
প্রশ্ন: শ্রাবন্তী এক সংবাদমাধ্যমকে আংটি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ওই আংটি তিনি অভিরূপকে দেননি…
রোশন: আমি জানি।
প্রশ্ন: কী জানেন?
রোশন: আমি আংটি বিষয়ে সব জানি। ক্যামাক স্ট্রিটের কোন দোকান থেকে কে কার জন্য আংটি কিনেছিল, আমার সব জানা। তবে আমি মুখ খুলতে চাই না।
প্রশ্ন: আপনি এখন কী চান?
রোশন: আমাদের কেস আদালতে এসছে। যা বলার আদালত বলবে।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, আপনি নাকি প্রচুর টাকার বিনিময়ে শ্রাবন্তীকে মুক্তি দেবেন?
রোশন: বাজে কথা। সকলে ভাবে, শ্রাবন্তী বড়লোক আমার যেন কোনও টাকাই নেই। এটা একদম ভুল। আমি বিয়েতে ওকে যা গয়না দিয়েছি, সেই বিষয়ে কি সবাই জানে? জানে না।
প্রশ্ন: আপনি নাকি 'উপরি' নিতেন?
রোশন: যে যা পারছে লিখে যাচ্ছে। আসলে রোশনের নামে কী বলবে শ্রাবন্তী? কী দোষ দেবে? সে সব দিতে না পারায় এ সব রটছে। ও তো পারিশ্রমিক সোজাসুজি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিতো। আর এক সময় আমি ওর অ্যাকাউন্টের দেখাশোনা করতাম। সে রকম নোংরা মনোবৃত্তি হলে, যা করার আগেই করতাম। আমার এ সব ভাবতেও ঘেন্না করে। আমরা যখন সংসার করেছি বাড়ির সব দায়িত্ব আমার ছিল। আর সেটাই স্বাভাবিক। ও একজন অভিনেত্রী হয়ে তো আর বাজার করতে যাবে না! আমিই জোর করে ওকে ফ্ল্যাট কেনাই। ওর টাকাতেই ফ্ল্যাট কেনা হয়। আমি সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এক সঙ্গে সংসার করতাম। দরকার পড়লে ওর কাছ থেকে টাকা চাইতাম। সেটাকে কেউ খারাপ ভাবে দেখছে কেন? আমিও তো খরচা করেছি। ভিখারি তো নই!
প্রশ্ন: লকডাউনে কি দূরত্ব বাড়ল?
রোশন: একেবারেই না। ওর দিদি-জামাইবাবু এসে আড্ডা দিত। সারা রাত সিনেমা দেখতাম আমরা। আমার মা এসে ফ্ল্যাটে থাকত। ওর মা-বাবা আসত। বাড়ি জমজমাট ছিল। ভাবিনি, এত কিছু হবে। তবে একটা কথা বলব?
প্রশ্ন: হ্যাঁ বলুন…
রোশন: যখন শ্রাবন্তীর সঙ্গে প্রেম করতাম, তখন শরীরের প্রচুর যত্ন নিতাম। সংসার শুরু করার পর আমি মোটা হয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিলাম। যে রোশনকে শ্রাবন্তী পছন্দ করেছিল, সেই রোশন আর আমি ছিলাম না। তার জন্য ওর খারাপ লাগছিল হয়ত। তখন আমি পরিবার নিয়েই বেশি ভাবতাম।
প্রশ্ন: শ্রাবন্তীর ছেলের সঙ্গে নাকি আপনার সম্পর্ক ভাল ছিল না…
রোশন: সে রকম কিছুই নয়। আজকাল ছেলেমেয়েরা খুব পরিণত। বড় হয়ে যাচ্ছে এখন। শ্রাবন্তী সম্পর্ক নিয়ে যে সিদ্ধান্তই নিক, ও ছেলের কথা ভেবে যেন নেয়। আজ বলে নয়, আমি অনেক সময়েই ওকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি।
প্রশ্ন: যেমন?
রোশন: ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শ্রাবন্তী যখন মদন মিত্রের দোল উৎসবে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিল, তখন আমার কাছে সংবাদমাধ্যম থেকে ফোন এসেছিল। চেষ্টা করা হয়েছিল, আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু বলি। আমি তো কিছু বলিইনি, উল্টে ওকে সাবধান করেছিলাম। ওর মনোনয়নপত্র পাঠিয়ে বলা হয়েছিল কোনও ভুল তথ্য থাকলে জানাও, ওর মনোনয়ন পত্র বাতিল করব। আমি এ সবের মধ্যে যাইনি। তবে ও বিজেপি-তে যোগ দেবে, আমি জীবনেও ভাবতে পারিনি।
প্রশ্ন: কেন?
রোশন: নিজের এলাকা থেকে কী ভাবে হেরে গেল। ওর উচিত রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া।
প্রশ্ন: আপনি এখন কী করবেন? শ্রাবন্তী তো ফিরবে না…
প্রশ্ন: অপেক্ষা করব। আদালত কী রায় দেবে দেখি। আমি নিজের মতো থাকব।