কুসুমিতার গল্প
খেলা নিয়ে ছবি কিংবা খেলোয়াড়ের বায়োপিক বানিয়ে বলিউ়়ড কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলছে। মহাবীর ফোগতের জীবন-গল্প নিয়ে তৈরি ‘দঙ্গল’-এর ব্যবসার অঙ্ক দেখলে চক্ষু চড়কগাছ হতে বাধ্য! মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, সচিন তেন্ডুলকরের বায়োপিকও সুপারহিট হয়েছে। স্পোর্টস ফিল্ম নিয়ে বলিউ়ডের আগ্রহ অনেক দিনের। বাংলাও এ বার এই জঁর নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে। নইলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে পর পর খেলা-কেন্দ্রিক ছবি তৈরি হতো না।
সামনেই মুক্তি পাবে দেবের ‘চ্যাম্প’। বক্সিং নিয়ে ছবি। সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘মেসি’। যেখানে ফুটবল উন্মাদনাই প্রেক্ষাপট। আর একটি ফুটবল-কেন্দ্রিক ছবি ‘কুসুমিতার গল্প’। হঠাৎ করে টলিউ়়ড স্পোর্টস ফিল্ম নিয়ে আগ্রহী হল কেন? শুধুই কি বলিউডের অনুকরণ?
‘চ্যাম্প’-এর পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর কাছে প্রশ্ন করতে তিনি বললেন, ‘‘আমি নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করতে ভালবাসি। সে কারণেই এই গল্পটা। তবে আমার চেয়েও এই গল্প নির্বাচনের পিছনে দেবের ভূমিকা বেশি।’’ আসলে দেব অনেক দিন ধরে মতি নন্দীর ‘শিবার ফিরে আসা’ নিয়ে ছবি করতে চাইছিলেন। কিন্তু সেই কাহিনির কপিরাইট অন্যর কাছে থাকায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।
‘কুসুমিতার গল্প’ ছবিতে নামভূমিকায় ঊষসী চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ছবির যা অবস্থা তাতে নতুন কনটেন্ট না নিয়ে এলে চলবে না। ‘কুসুমিতার গল্প’ বায়োপিক। আশা করি দর্শকের ভাল লাগবে।’’
মেসি
কিন্তু স্পোর্টস ফিল্মের নিজস্ব একটা ছক থাকে। খেলোয়াড়ের জীবনের ওঠা-পড়া, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতে ওঠা ...ইত্যাদি। সে দিক থেকে দেখলে বিষয়টি একঘেয়ে নয় কি? ‘‘সে তো সব প্রেমের গল্পই এক। কে কী ভাবে বলছে সেটার উপরই সবটা নির্ভর করে। তবে আমাদের ছবিতে খেলা নয়, খেলোয়াড়ের জীবনযুদ্ধই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে,’’ বললেন রাজ। বক্সিং নিয়ে ছবি হলে ‘রকি’ সিরিজ কিংবা ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’-র তুলনা আসা স্বাভাবিক। তবে সে সব নিয়ে রাজ বা দেব কেউই চিন্তিত নন।
স্পোর্টস ফিল্ম মানেই হিট তা কিন্তু নয়। সব ছবি ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ বা ‘সুলতান’ হতে পারে না। মেরি কমের বায়োপিক যেমন চলেনি। স্পোর্টস ফিল্মেও কি মহিলার চেয়ে পুরুষের গল্প দেখতে বেশি পছন্দ করেন জনতা? ‘‘মহিলা খেলোয়াড়দের কদর কোথায়? আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল ফল করলেও কেউ ফিরে তাকায় না,’’ হতাশ গলায় বললেন ঊষসী। তবে সাইনা নেহওয়াল, গীতা ফোগতকে নিয়ে ছবি তৈরি হওয়ায় ঊষসী খুশি।
চ্যাম্প
বাংলায় যে আগে খেলাভিত্তিক ছবি হয়নি তা নয়। ‘কোনি’ বিখ্যাত ছবি। ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘মোহনবাগানে মেয়ে’, ‘সাহেব’ এই রকম উদাহরণও মিলবে। তবে সাম্প্রতিক অতীতে বাংলা ছবিতে স্পোর্টস ফিল্মের দেখা মেলেনি। হয়তো খেলাকে প্রেক্ষাপট করে অন্য রকমের গল্প বলা হয়েছে। যেমন রাজের ‘লে ছক্কা’ বা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’। অরুণ রায় মোহনবাগানের প্রথম শিল্ড জয় নিয়ে ‘এগারো’ তৈরি করেছিলেন। পুরোদস্তুর খেলা নিয়ে ছবি। অথচ সেটা একেবারেই চলেনি। একই বিষয় নিয়েই আবার হিন্দিতে ছবি তৈরির কথা চলছে অনেক দিন ধরে।
তবে পুরনো বাংলা ছবির সঙ্গে এখনকার ছবির তফাত আছে। তখন খেলার টেকনিক নিয়ে কেউ তত মাথা ঘামাতেন না। গল্পটাই আসল ছিল। এখন বিষয়ের মধ্যে অনেক বেশি পেশাদারিত্ব এসেছে। ‘দঙ্গল’এর জন্য আমির খান কতটা পরিশ্রম করেছিলেন সেটা সকলেরই জানা। গীতা ফোগতের চরিত্র করার জন্য ফতিমা সানা শেখকে কুস্তি শিখতে হয়েছিল। ‘চ্যাম্প’এর জন্য দেবকেও ওজন বাড়াতে-কমাতে হয়েছে। শিখতে হয়েছে খেলার মারপ্যাঁচ। ‘মেসি’ ছবির জন্যও রণদীপ আর আরিয়ানও খেলায় পেশাদারিত্ব নিয়ে এসেছেন। ‘কুসুমিতার গল্প’র জন্য ফুটবলার শিলটন পালের কাছ থেকে রীতিমত তালিম নিয়েছেন ঊষসী।
‘চ্যাম্প’ বা ‘মেসি’র সাফল্য ঠিক করে দেবে বাংলাতেও স্পোর্টস ফিল্মের ধারা তৈরি হবে কি না।