জয়া।
প্র: অতনু ঘোষের সঙ্গে আবার ‘বিনিসুতোয়’...
উ: আসলে এটাই অতনুদার সঙ্গে আমার প্রথম ছবি। শুট হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে। তার পরে ‘রবিবার’ করেছিলাম। ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে এখন।
প্র: আপনার চরিত্রের দুটো লুক রয়েছে...
উ: হ্যাঁ। সেটা এখনই খোলসা করব না। একটু রহস্য থাকুক। ছবিতে একটি গান আছে, ‘মনের গভীরে মন, তারও গভীরে মন’— এই গানটাই ছবির পরিচয়। আসলে আমরা নিজেদের মনকেই চিনি না অনেক সময়ে। নিজের অন্তরের জার্নি বলা যায় এই ছবিটা। আমার চরিত্রের নাম শ্রাবণী বড়ুয়া। শ্রাবণীর সঙ্গে বরং বড় পর্দায় আলাপ হোক।
প্র: অতিমারি পরিস্থিতিতে দর্শক তো ওটিটি-নির্ভর হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে হল রিলিজ়ে কতটা আশাবাদী?
উ: এই ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি, গল্প, সাউন্ড ডিজ়াইনিং... সবই বড় পর্দার জন্য তৈরি হয়েছে। আমি খুবই খুশি যে ছবিটি বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে। আমি নিজে বড় পর্দায় কাজ করতে ভালবাসি। আর এ সময়ে সিনেমা হলে ছবি মুক্তি পাওয়াটাও খুব জরুরি।
প্র: অতিমারির কারণে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কি পাল্টে গিয়েছে?
উ: ক’দিন আগে এক পত্রিকায় পড়ছিলাম যে, একে অপরের সঙ্গে মেশা, কোলাহলের মধ্যে যাওয়া... এ সবের প্রতি মানুষ ইচ্ছে বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আমারও মাঝেমাঝে অদ্ভুত উপলব্ধি হচ্ছে। একদিন অভ্যেসবশত বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনেকটা চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু মাস্ক পরতে ভুলে যাই। হঠাৎ গাড়িতে ওঠার সময়ে যেই ব্যাপারটা খেয়াল করি, মনে হতে লাগল যেন আমি বেআব্রু হয়ে পড়ছি। এ ভাবেই চারপাশটা মনে হয় বদলে যাচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যে কাজও করতে হবে। আর শুটিং তো একা একা হয় না। দশটা লোক নিয়েই হবে। আমাদের শুটিং বন্ধ করে রাখা মানে জল থেকে মাছকে তুলে নেওয়া। জল ছাড়া মাছ তো বাঁচবে না। শুটিং ছাড়া আমরাও থাকতে পারব না। নিরাপদে কাজের নতুন পদ্ধতি বার করতে হবে। কিন্তু কাজ, শিল্পচর্চা বন্ধ রাখা যাবে না।
প্র: ‘ভূতপরী’, ‘ওসিডি’-র মুক্তিও কি এর মধ্যেই হবে?
উ: ‘ভূতপরী’-র কাজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ‘ওসিডি’-র ডাবিং এখনও বাকি রয়েছে। আমি এখন বাংলাদেশে। সব খুলে গেলেই কলকাতায় যাব। তখন আবার কাজ শুরু করতে পারব ওখানে।
প্র: ‘ওসিডি’-র শুটিং ঝাড়খণ্ডে হয়েছিল তো?
উ: হ্যাঁ। সৌকর্য ঘোষালের ওই ছবিটার শুটিংয়ে ঝাড়খণ্ডে গিয়েছিলাম। সেখানে খুব সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ত্রিপুরার রাজকন্যার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ১০০ বছরের কাছাকাছি তাঁর বয়স। ওঁর সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভাল লেগেছিল। কত গল্প করেছিলাম।
প্র: বাংলাদেশের অভিনেত্রী রাফিয়াত রাশিদ মিথিলা, আজমেরি হক বাঁধন এখন এ-পার বাংলাতেও অভিনয় করছেন। কেমন লাগছে আপনার? প্রতিযোগিতা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে?
উ: আমার তো খুব আনন্দ হচ্ছে। আর প্রতিযোগিতা হিসেবে ভাবলে, সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালই। আমার মতে, শিল্পের কোনও সীমারেখা থাকা উচিত নয়। আদানপ্রদান তো শিল্পীদের মাধ্যমেই হয়। আমি চাইব আরও বেশি মানুষ আসুক বাংলাদেশ থেকে, কাজ করুক এখানে। আর শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রীই নন, পরিচালকরাও আসুন। এখানে ছবি তৈরি করুন। আমারও দল ভারী হবে বইকি (হাসি)!
প্র: আফগানিস্তানে তালিবান শাসন কায়েম হওয়ার পরে আফগান পরিচালক সারা করিমি খোলা চিঠি দিয়ে সাহায্যের আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
উ: ওখানকার যত ছবি দেখছি, আমার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। আসলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আঙুল সব সময়েই ওঠে মেয়েদের দিকে। ঠিক কম্পাসের কাঁটার মতো তা ঘুরে যায় নারীজাতির দিকে। সারা করিমি যে আহ্বান জানিয়েছেন, আমি মন থেকে তাতে সায় দিচ্ছি। তাঁর সঙ্গে আছি। দূর থেকে কতটা কী করতে পারব জানি না, আমার পক্ষে যদি কিছু করার সুযোগ আসে, নিশ্চয়ই করব। ওখানকার যে সব ছবি দেখছি, শিউরে উঠছি। বাংলাদেশ হোক, ভারত হোক বা বহির্বিশ্বের যে কোনও দেশেই মেয়েদের উপরে অত্যাচার হলে আমাদের সরব হতে হবে। দেশটা আমাদের থেকে দূরে ভেবে বসে থাকলে চলবে না। আজকে যা ওখানে হচ্ছে, কাল তা আমার দেশে বা কলকাতায়ও হতে পারে।
প্র: এর মধ্যে কোনও ছবির শুটিং করলেন?
উ: বাংলাদেশে কয়েকটা ছবির শুটিং করলাম। নিজের প্রযোজনায় একটা ছবি করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ সময় পরিবার ও আমার গাছবন্ধুদের সঙ্গেই কাটাচ্ছি। আশপাশে অনেক ঘুরতেও গিয়েছি। তবে কলকাতাকে মিস করছি।