গোত্র ছবিতে খরাজ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
এই সবেমাত্র মোচা-চিংড়ি রান্না করে এলেন। হাজার ব্যস্ততায় সকালবেলায় বাড়ির রান্নার সুগন্ধ তাঁর হাতের জাদুতেই বেরিয়ে আসে। পান খেতে চাইলেন। কিমাম, ১২০ জরদা, চবনবাহার, চুন, ছোট এলাচ, একটা ভিজে সুপুরি। ‘নাহ, খয়ের একদম না’। জীবনের প্ল্যাটারটাও তার এমন করে সাজানো।
এতদিন লুকিয়েছিলেন। ‘গোত্র’-র ট্রেলারে আপনাকে দেখা গেল!
হ্যাঁ।
বিষয়টা এমন হয়েছে, শিবপ্রসাদ আর নন্দিতার ছবি হলেই লোকে আপনাকে খোঁজে...
আসলে, আমরা গ্রুপ থিয়েটারের লোক। অভিনেতা হিসেবে স্যাটিসফ্যাকশনের জায়গা আছে তো?পেটের দায়ে একটানা অভিনয় করতে করতে যখন প্রায় ভাঁড়ে পরিণত হতে চলেছি তখন এই ধরনের চরিত্র যখন করতে পাই মনে হয় হাফ ছেঁড়ে বাঁচি। এই ধরনের কাজ করে মনে হয় একটা নাটক লিখি, গল্প লিখি। শিবু-নন্দিতাদির ‘বেলাশেষে’ কিন্তু ‘বেলাশেষে কোলাহল’নাটক থেকে নেওয়া। নাটক থেকে সুপারহিট ছবিও যে হতে পারে ওরা দেখিয়ে দিল। শিবু-নন্দিতাদি এ প্রজন্মের তপন সিংহ। কোনও ছবির ভাবনার সঙ্গে কোনও ছবির মিল নেই। ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, আবার ‘কণ্ঠ’। এখন ‘গোত্র’।
এত চরিত্র করেছেন, মনে রাখার মতো রিঅ্যাকশন?
‘মুক্তধারা’-য় লক্ষণ পান্ডা। জেলে ইউনিয়নের লিডার। জেলারকে জুতোর মালা পরিয়েছিলেন। এরকম একটা চরিত্র। শিবু ব্রিফ করেছিল, লোকটি মালদার। শিবুর ব্রিফিং-এ পুরো মানুষটা চোখের সামনে চলে আসে।তার সঙ্গে নিজের ভাবনা দিয়ে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যাই। মালদহে মামাবাড়ি হওয়ার সুবাদে আমি জানি ওখানকার মানুষেরা কেমন করে একটু টান দিয়ে কথা বলেন। আমি সেই মতো কাজ করলাম। ছবি রিলিজের বেশ কিছু দিন বাদে একটা অচেনা ফোন। ‘দাদা, মুক্তধারা দেখে খুব ভাল লেগেছে। আপনি কি লক্ষণ পান্ডাকে দেখেছিলেন?’ আমি বলি, না দেখিনি। উনি আরও বিস্ময় নিয়ে বললেন, ‘আমি সেই জেলার যাকে উনি জুতোর মালা পরিয়েছিলেন। আর আপনাকে ছবিতে হুবহু লক্ষণ পান্ডে লাগছে! ওকে না দেখে আপনি করলেন কেমন করে? কী আশ্চর্য!’ আমার জীবনে এটাই তো পাওয়া।
আরও পড়ুন: জীবনের সোনালি সময় কাটাচ্ছি, বললেন সানি লিওনি
সেই অনুপ্রেরণা থেকেই কি পরিচালনায় আসছেন?
চেষ্টা করছি খুব। পদ্মনাভকে দিয়ে চিত্রনাট্য লেখানো হয়েছে।
ঋত্বিককে কাস্ট করবেন?
এখনও ভাবিনি তো! এখানে একটা কথা বলি...এমন দিন আসতে পারে, লোকে বলতেই পারে খরাজ মুখোপাধ্যায় বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আমাকে বুঝতে হবে আমি কাজ করছি। আজও কি দর্শক নিচ্ছে? যদি না নেয় তা হলে তো আমি ফুরিয়ে গেছি। আমাকে তখন চলে যেতে হবে।
শকুন বাপি চরিত্রে খরাজ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
এক্ষেত্রে আপনি কী করবেন?
আমি দেখলাম, আমি অভিনয় করতে পারি। হাসির চরিত্র। বদমাইশের পার্ট করতে পারি। সিরিয়াস চরিত্র। ব্যথার চরিত্র। বেশ, অভিনয় হল। এরপর? আমি গান করতে পারি। তাহলে গান লিখতে পারি? লিখতে যদি পারি, সুর করতে পারি? গল্প লিখতে পারি? করে রাখছি। কেন? না আমি আমার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চাই। শিবুরা ‘ইচ্ছে’ দিয়ে শুরু করেছিল। তেমন সাড়া পায়নি। তারপর ছবি করে গেছে। রিমিক্স বা চটুল ছবি কি করতে পারত না? করেনি। ওই ধারা বজায় রেখে আজ বলতে দ্বিধা নেই, সত্যিকারের সুস্থ রুচিসম্পন্ন বাংলা ছবি নির্মাণের মাথায় রয়েছে উইন্ডোজ। এতগুলো কথা এই কারণেই বলা যে পথ তৈরি করতে করতে বাঁচতে হবে। একদিক নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে এক জন এসেছেন, বলছেন আমার একটা ছবি করুন না। আমি পয়সা দিচ্ছি। কৌশিকদা বলল, ‘দেখছি’। ভদ্রলোক বেরিয়ে গেলে কৌশিকদা বলল, ‘সকলের জন্য ছবি করলে আমি আর ছবি নির্মাতা থাকব না।’ ছবি করলেই হবে না। করার মতো মানসিকতা, কোথায় কী করব সেটাও ভাবতে হবে।
কিন্তু আপনি তা হলে ওই চুটকিগুলো করলেন কেন?
‘অস্কার’ বলে ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আমার প্রদীপের সঙ্গে আলাপ। খুব কাজের ছেলে। ওকে বলেছিলাম, ছবি করছিস না কেন? ও বলল, ‘প্রযোজক নেই’। বেশ কিছুদিন পর আমাকে অনুরোধ করল কয়েকটা চুটকিতে অভিনয় করতে হবে। চরিত্রের নাম ‘টিপে ধর’। সেক্স কমেডি আছে কথায়। করলাম। হয়ে গেলে ইউটিউবে দেওয়ার পর যেমন ভিউ তেমনই পজিটিভ আর নেগেটিভ ভাইব্স। রিঅ্যাকশন পেতে পেতে আমি হতবাক। খারাপ রিঅ্যাকশন দেখে বুঝলাম লোকে কতটা ভালবাসে! ফেসবুকে লিখলাম আর এই কাজ করব না। ছেলেটা প্রোডিউসার পাচ্ছিল না। তাই ও কাজ পাবে সেই ভেবে করেছিলাম।
আরও পড়ুন: ‘আপনি মোটা, জিমে যান’ বলে ট্রোল অভিনেত্রীকে, পাল্টা উত্তরও এল সপাটে
তৃণমূল না বিজেপি, কী ভাবছেন?
(হাসি) দিদি আমায় সব অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানান। আর এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন এসেছিলেন কলকাতায়, ওঁর সভাতেও ডেকেছিলেন।
এ থেকে কী বুঝব?
দেখুন আমি অভিনেতা। অভিনয় করতে যখন পারব না, ফুরিয়ে যাব। লোকে বলবে, ধুর, খরাজ মুখোপাধ্যায়ের বয়স হয়েছে আর চলবে না। বড় জোর ছোট চরিত্র। আমি তখন নাটক করব। নাটক লিখব। গান করব। হ্যাঁ মেনে নিতে হবে আমার আর্থিক অবস্থানের নড়চড় হবে। ব্যস!
কিন্তু টলিপাড়ায় এই রাজনীতির দল বদল এটা তো ক্রমশ হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে!
আমিও বুঝতে পারছি না। লোকে বলছে, আমি আর অভিনয় করতে চাইনা, রাজনীতি করতে চাই। মানে! এতদিন তারা কী করছিল? একজন মানুষ সমাজে তাঁর ইমেজ খুব খারাপ। তিনি এই অবস্থায় তাঁর বর্তমান দল থেকে অন্য আর এক দলে চলে গেলেন। আর সেই অন্য দল তাকে নিয়ে নিল। তাহলে কেউ কেউ যে ভাবছে অন্য দল এলেই সব অবক্ষয় দূর হবে সেটা কোথায় হল? সেই মার্কা মারা লোকটাই ওই দলে গেল? কী নতুন হবে? ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়! জয় শ্রীরাম বলা হচ্ছে। তার জন্য অন্য গোষ্ঠী বিরোধিতা করছে। হল। এখন জয় শ্রীরাম বলা হচ্ছে, এরপর যদি বলে শুধু হিন্দি বলতে হবে। কী করব আমরা? আসল কথা কি,ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁদের উপার্জন খুব একটা ভাল না তাঁরাই রাজনীতিকে বেছে নিচ্ছেন। নিশ্চিত আর্থিক নিরাপত্তা। কিন্তু আমি একজন অভিনেতা।আর্থিক নিরাপত্তার জন্য আমি যা খুশি করব? সুপারি কিলার হলেও হয় তাহলে?অনেক অনেক টাকা পাব! লোক খুন করব...