মানুষ ছাড়া তো দেশ হয় না... একটা বর্ডার লাইন দিয়ে শুধু একটা দেশ হয় না।
এর আগে রামকৃষ্ণদেবের মতো জনপ্রিয় চরিত্র করেছেন?
হ্যাঁ, আমি বেশ কিছু পপুলার চরিত্র করেছি। তার একটা ছিল বামাক্ষ্যাপা (‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’)। ইটিভি-তে হত। পরবর্তী সময়ে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় বহুকাল ওটা করেছিলেন।
গদাই (রামকৃষ্ণদেবের) এই মুহূর্তে গল্পে কী করছেন?
গদাই এখনও কলকাতা শহরটাকে চিনছে। গদাই থেকে রামকৃষ্ণ হয়ে ওঠা এক অসাধারণ মানুষের অসম্ভব একটা জার্নি। সেই গল্পটাই টিমের সবাই মিলে খুব সুন্দর করে দর্শকের কাছে তুলে ধরছেন।
শোনা যাচ্ছে নিজেকে তৈরি করার জন্য খুব খেটেছেন?
(চিনি ছাড়া চায়ের কাপ দেখিয়ে) অসম্ভব ডায়েটের মধ্যে ছিলাম। প্রায় আট-দশ কিলো ওজন কমিয়েছি। অনেক রোগা হতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুরুদ্বারে তাপসীকে যৌন হেনস্থা, পাল্টা ‘শিক্ষা’ দিলেন অভিনেত্রী
আড়াই বছর আগে ধারাবাহিকটি শুরু হওয়ার সময় থেকেই নাকি ঠিক ছিল আপনিই রামকৃষ্ণ করবেন?
হ্যাঁ। মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তার সঙ্গে একটা ভয়ও ছিল যে এত ব্যাপক আকারে হওয়া একটা সিরিয়ালের মধ্যে নিজেকে কতটা ফিট করতে পারব,কতটা ডেডিকেশন দেখাতে পারবো। সেটা নিয়ে আমার মনে সত্যি প্রশ্ন ছিল।
গদাই এখনও কলকাতা শহরটাকে চিনছে
সেজন্যই কি দাড়ি রাখাও শুরু করলেন?
সেটা তো বাহ্যিক প্রস্তুতি। কিন্তু মানসিক প্রস্তুতিটা আমি নিতে পারব কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল।
দাড়ি রাখা শুরু করলেন ঠিক কবে থেকে?
দু’বছর আগে থেকে। আসলে রামকৃষ্ণদেবের চরিত্র অনেক আগে আসার কথা ছিল। নানান কারণে দেরি হয়েছে। সেটা ভালই হয়েছে। অসম্ভব সফল একটা সিরিয়াল এবং দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই খুব ভাল কাজ করে চলেছেন। এর আগে রাজচন্দ্র’র ভূমিকায় নূর খুব ভাল অভিনয় করেছে। গৌরব, দিতিপ্রিয়া তো আছেই। আরও নানা চরিত্রে নানা জন অভিনয় করে গিয়েছেন।
আপনার দাঁতের গঠনও কি চরিত্রটার সহায়ক হয়েছে?
আমার একটি দাঁত উঁচু।আমার অনেক ডেন্টিস্ট বন্ধু আছে। দাঁত ঠিক করা যেত। দাঁত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে বলে ভাল লাগছে। অনেকে বলে খারাপ। হয়তো দাঁত-টাঁত অনেক কিছু মিলিয়েই এই ঠাকুরের চরিত্রটা পাওয়া।দর্শকের খুব ভাল লাগছে। সেটা আমাকে খুব ইন্সপায়ার করছে।হরনাথ চক্রবর্তী রামকৃষ্ণদেবের ওপর একটা তথ্যচিত্র করেন। সেটায় আমি রামকৃষ্ণদেব করি। সেটার মূল তত্ত্বাবধানে ছিল বেলুড় মঠ। তিরিশ-চল্লিশ দিনের শুটিং শিডিউল ছিল। সেখানে এক মহারাজ আমাকে বলেছিলেন, ‘ঠাকুরের দাঁতও এরকম ছিল। একটি দাঁত উঁচু ছিল।’ পরবর্তীতে আমি জেনেছিলাম, ভাবের বশে পড়ে গিয়ে ঠাকুরের উঁচু দাঁতটা ভেঙে যায়।
তাহলে তো আপনারও দাঁত ভাঙতে হবে?
মানে... সেটা... (একটু অপ্রস্তুত)...হা হা হা... সেটার জন্য আমাদের স্বনামধন্য মেকআপ দাদারা রয়েছেন। আমাকে কিন্তু মেকআপ ছাড়া দেখলে খুব একটা চিনতে পারবেন না। মেকআপ দাদারা এতটাই রামকৃষ্ণ বানিয়েছেন আমাকে।
আপনার প্যাশন কী?
নানান সময়ে নানান প্যাশন গজিয়ে ওঠে। আবার সেগুলো হারিয়েও যায়।অভিনয়ের প্যাশন আমার চিরকালই ছিল।
আরও পড়ুন: ফিটনেস সচেতন এই বলিউড অভিনেত্রী কে বলুন তো?
অভিনয় ছাড়া?
অভিনয় ছাড়া...এই মুহূর্তে মনে হয়, প্যাশনেটলি ভাল মানুষ হব। কারণ এই সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে একটু ডিস্টার্বড আছি।
‘বাবার থেকে অসম্ভব ভালবাসা পেয়েছি, অসম্ভব ভাল একজন মানুষকে দেখেছি’
সিএএ, শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংসতা নিয়ে?
শুধু তা-ই নয়... অনেক আগে থেকেই একটা সময় চলছে যা একটা দেশের জন্য... মানুষের জন্য... মানুষ ছাড়া তো দেশ হয় না... একটা বর্ডার লাইন দিয়ে শুধু একটা দেশ হয় না। সেখানে দাঁড়িয়ে রামকৃষ্ণ চরিত্র করতে করতে একটা রিয়ালাইজেশন হচ্ছে... যে মানুষটা দু’শো বছর আগে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানুষকে পথ দেখিয়েছিলেন... যিনি ওই সময় বলেছিলেন যে সব ধর্মই সমান... নিজে সেই প্র্যাকটিস করেছিলেন। এখন ধর্মের অ্যাকচুয়াল বিষয়গুলো নিয়ে প্র্যাকটিস কমে গিয়েছে। সেজন্যই বলছি, ভাল মানুষ হওয়াটাই প্যাশন। হয়তো ভুলভ্রান্তি করেছি, আবারও করব। কিন্তু চাইব ভাল মানুষ হতে। আমার পরের প্রজন্ম যেন বলে ভাল মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। আমার ছেলের সঙ্গে হয়তো আমার দূরত্বই থাকবে। কিন্তু যেন বলে, ‘বাবার থেকে অসম্ভব ভালবাসা পেয়েছি, অসম্ভব ভাল একজন মানুষকে দেখেছি’।
স্ত্রী সুস্মিতার সঙ্গে কী ভাবে আলাপ?
অভিনয় করতে এসেই পরিচয়। তখন দুজনেই খুব ছোট। জি বাংলার ‘কে তুমি নন্দিনী’ সিরিয়ালে একসঙ্গে কাজ করি। ওখানে আমি নায়িকার দেওরের চরিত্র করতাম। আর সুস্মিতা (সাহা মুখোপাধ্যায়) ছিল আমার গার্ল ফ্রেন্ডের চরিত্রে। এখন আমাদের ছেলের বয়স দু বছর হয়ে গেল।