‘সং কানেকশন’য়ের শ্যুটিংয়ে অর্পিতা পাল, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও সোমলতা। ছবি: কৌশিক সরকার
এক দিকে উষা উত্থুপ গাইছেন ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’, তো অন্য দিকে অনুপম রায়ের গলায় ‘এই মেঘলা দিনে একলা’।
এক দিকে সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত ‘হয়তো তোমারই জন্য’ গাওয়াচ্ছেন লোপামুদ্রাকে দিয়ে, তো অন্য দিকে পণ্ডিত তন্ময় বসু ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে’ গাওয়াচ্ছেন কৌশিকী চক্রবর্তীকে দিয়ে।
পুরো ব্যাপারটাই তৈরি হচ্ছে টেলিভিশনের জন্য। অনেকটা ‘এমটিভি আনপ্লাগড্’ বা ‘কোক স্টুডিও’র আদলে, যদিও এই অনুষ্ঠানের পোশাকি নাম ‘সং কানেকশন’। অনুষ্ঠানটি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে দেখানো হবে জি বাংলা সিনেমা চ্যানেলে।
ফর্ম্যাটটা এই রকম, প্রত্যেক সপ্তাহে এই সময়কার একজন সঙ্গীত পরিচালক স্বর্ণযুগের সঙ্গীত পরিচালকদের বাঁধা গানগুলো এই সময়ের বিখ্যাত গায়ক-গায়িকাদের দিয়ে গাওয়াবেন।
“আজকের মিউজিক ডিরেক্টররা আজকের সিঙ্গার দিয়ে গানগুলো গাওয়াচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু মেলোডিটা একেবারেই চেঞ্জ করছেন না কেউ। সেই ধৃষ্টতা আমরা দেখাতে চাই না। তবে এটুকু বলতেই পারি যে রকম এক্সপেরিমেন্ট করছেন আজকের মিউজিক ডিরেক্টরেরা সেটা আউট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। না শুনলে বিশ্বাস করতে পারবেন না,” বলছিলেন ‘সং কানেকশন’য়ের রিসার্চ ও ক্রিয়েটিভ হেড রাজর্ষি দে।
এই অনুষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসর হিসেবে রয়েছেন রাই সেনগুপ্ত গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌমালি সেনগুপ্ত। তাঁরাও বলছেন এই স্কেলের টেলিভিশন শো আগে কোনও বাংলা জিইসি চ্যানেলে কোনও দিন হয়নি।
“আমরা এই অনুষ্ঠানটা একদম অন্য স্কেলে করছি। এই রকম লুক, স্টাইল, কস্টিউমস, প্রপ বাংলা টেলিভিশনে বোধ হয় আগে হয়নি,” বলছেন রাই। এই মুহূর্তে ‘সং কানেকশন’য়ের শ্যুটিং চলছে পুরোদমে। আলোকসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী আর পরিচালনা করছেন অনিল কুরিয়াকোস।
এবং শুধু একজন, দু’জন নয়, বাংলার বহু নামীদামি শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন এই অনুষ্ঠানে। রয়েছেন ঊষা উত্থুপ, অনিন্দ্য, রুপঙ্কর, বনি, অনুপম, জোজো, লোপামুদ্রা, কৌশিকী, সিধু এবং সোমলতা। থাকছেন বাংলাদেশের অসম্ভব জনপ্রিয় গায়ক অর্ণবও।
গায়ক-গায়িকারাও এই রকম একটা অনুষ্ঠান করতে পেরে উচ্ছ্বসিত।
“এটা দুর্দান্ত একটা প্রচেষ্টা। আমরা সবাই স্বর্ণযুগের এই গানগুলো ভালবাসি। কিন্তু এই সব গান লাইভ মিউজিকের সঙ্গে গাওয়া, ছোট ছোট অ্যাডিশন করা এটা গায়ক বা গায়িকার কাছে যেমন চ্যালেঞ্জিং তেমনি এনজয়েবল। আমি যে কী এনজয় করছি, ভাবতে পারবেন না,” বেঙ্গালুরু থেকে বলছিলেন উষা উত্থুপ। তিনি তাঁর নিজস্ব ঢংয়েই গেয়েছেন গানগুলো। এমনকী ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ গানটিতে নানা ইংরেজি শব্দ ঢুকিয়ে গানটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছেন ঊষা উত্থুপ।
শুধু ঊষা ঊত্থুপই নন। সঙ্গীত পরিচালক থেকে গায়ক সবাই ব্যাপারটাকে মজা কাম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
“দেখুন এই প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমরা আবার বাঙালির প্রিয় গানকে রিভাইভ করছি। সেই গান যা শুনে বাঙালি বড় হয়েছে, দুঃখ পেয়েছে, প্রেম করেছে। আমি সুধীন দাশগুপ্ত আর সত্যজিত্ রায়কে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বহু দিন পরে একটা কাজ করে এত খুশি হলাম,” বলছেন সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত।
অন্য দিকে পণ্ডিত তন্ময় বসু ট্রিবিউট জানাচ্ছেন শচীন দেব বর্মন আর রাহুল দেব বর্মনকে। তাঁর কাছে এই প্রোগ্রাম একটা ছোট গুরুদক্ষিণা। “স্বর্ণযুগের যে মানুষগুলোকে আমরা সম্মান জানাচ্ছি তাঁরা সবাই অসম্ভব গুণী শিল্পী। এই শোয়ের মাধ্যমে আমরা তাঁদের প্রতি গুরুদক্ষিণা দেওয়ার প্রচেষ্টা করছি শুধু,” নিজস্ব ভঙ্গিতে বলেন তন্ময়।
শুধু গায়ক-গায়িকারাই নন। ‘সং কানেকশন’য়ের এই অনুষ্ঠানে প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী অর্পিতা পালও গেয়েছেন বাঙালির অতি প্রিয় গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়।’ গানটি অর্পিতা গেয়েছেন ‘চন্দ্রবিন্দু’র অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
“দারুণ অভিজ্ঞতা হল অর্পিতার সঙ্গে এই ডুয়েট গেয়ে। ‘সত্যান্বেষী’র পর একটা অন্য প্ল্যাটফর্মে আমি কাজ করলাম ওর সঙ্গে। আর খুব আনন্দ পেয়েছি সুধীন দাশগুপ্তের সুর দেওয়া গানগুলো গেয়ে,” বলছিলেন অনিন্দ্য।
এই রকম একটা অনুষ্ঠান করতে পেরে খুশি জি বাংলার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিজনেস হেড সঞ্জয় কুট্টিও।
“আমরা বাংলা টেলিভিশনে সব সময় ‘ইনোভেটিভ’ কাজ করার চেষ্টা করে গিয়েছি। দর্শককে নতুন কিছু দেওয়াই আমাদের ফোকাস। জি বাংলা সিনেমায় ‘সং কানেকশন দেখলে বুঝতে পারবেন আমরা কোন স্কেলে প্রোগ্রামটা করছি,” বলছিলেন সুজয়।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
টেলিভিশনে ‘হঠাত্ কিছু পুরনো গান’ এ বার শুরু হল বলে।
রূপঙ্কর
পৃথিবী বদলে গেছে
গুনগুন করে মন
মৌ বনে আজ মৌ জমেছে
মেটেরিয়া মেডিকার কাব্য
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
আমি কোন পথে যে চলি
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন
শুধু তুমি নয় অবলাকান্ত
হাল্লা রাজার সেনা
কৌশিকী চক্রবর্তী
বর্ণে গন্ধে
সখী ভাবনা কাহারে বলে
ও মোর ময়না গো
তখন তোমার একুশ
অনুপম রায়
এই মেঘলা দিনে একলা
ওপারে থাকব আমি
লোপামুদ্রা মিত্র
ও কোকিলা
হয়তো তোমারই জন্য
উষা উত্থুপ
শিং নেই তবু নাম তার সিংহ
চিরদিনই তুমি যে আমার
বনি চক্রবর্তী
টাকডুম টাকডুম বাজে
এক যে ছিল রাজা
ওরে বাঘা রে
উজ্জ্বয়িনী
জীবনে কি পাব না
জানা অজানা পথে চলেছি
সোমলতা
তুমি যে আমার
দোলে দোদুল দোলে
এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়
শচীন দেব বর্মন
সত্যজিত্ রায়
সুধীন দাশগুপ্ত
রাহুল দেব বর্মন
তন্ময় বসু
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত