সিনেমার ইতিহাসে গুপ্তচরেরা
সকাল-বিকেল মুঠোফোন চালু করলেই স্ক্রিন জুড়ে ফুটে উঠছে বন্দুকধারী আলিয়া ভট্টর ছবি। বন্দুকের টার্গেট দর্শকের দিকে। সম্প্রতি ‘রাজ়ি’ ছবির পোস্টার ও দৃশ্যে ভরে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। হরিন্দর সিক্কার উপন্যাস ‘কলিং সেহমত’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ছবিটি। এখানে আলিয়া ভারতীয় গুপ্তচরের ভূমিকায়।
বেশ কয়েক বছর ধরে বলিউডের হিট টপিক রোমহর্ষক ঘটনার ঘনঘটায় ভরা গুপ্তচরদের জীবন। বইয়ের পাতা থেকে বড়়পর্দায় যাদের উপস্থিতি আজও সমানে বাড়িয়ে চলেছে তাদের ফ্যানলিস্ট। গত কয়েক বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ও মুক্তির অপেক্ষায় থাকা গুপ্তচরদের নিয়ে ছবিই এই আলোচনার বিষয়...
মেয়েরা যখন গুপ্তচর
‘রাজ়ি’ ছবির ট্রেলর ও পোস্টার থেকেই স্পষ্ট যে, ছবিতে আলিয়া ভট্টই গুপ্তচর। ১৯৭১ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধের প্রাক্কালে কাশ্মীরি মেয়ে সেহমতের (আলিয়া ভট্ট) সঙ্গে একজন পাকিস্তানির বিয়ে হয়। এই বিয়ের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান থেকে গোপনে তথ্য জোগা়ড় করে ভারতে পাঠানো। সব জেনেশুনেও একটি সাধারণ মেয়েকে তার পরিবার এগিয়ে দেয় গুপ্তচর বৃত্তিতে।
অন্য দিকে ‘এক থা টাইগার’ ছবিতে আইএসআই এজেন্ট জ়োয়ার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ক্যাটরিনা কাইফকে। ছবিতে সে এক বিজ্ঞানীর কেয়ারটেকার সেজে আত্মগোপন করে ছিল। আবার ‘এজেন্ট বিনোদ’ ছবিতে আইএসআই এজেন্ট ইরাম পরভিন বিলালের ভূমিকায় দেখা যায় করিনা কপূরকে। ‘নাম শবানা’তেও স্পাই শবানার চরিত্রে ছিলেন তাপসী পন্নু। ছবিতে তার প্রেমিকের খুনিদের ধরতে সাহায্য করার বিনিময়ে তাকে গুপ্তচর সংস্থায় যোগদান করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি রাধিকা আপ্তেও অভিনয় করতে চলেছেন এক গুপ্তচরের চরিত্রে। টিপু সুলতানের বংশধর নূর ইনায়েত খানের ভূমিকায় রাধিকা অভিনয় করবেন। এই ছবির হাত ধরেই হলিউডে অভিষেক হচ্ছে নায়িকার। ১৯১৪ সালে মস্কোয় জন্ম নূরের, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে পড়াশোনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যোগ দিয়েছিলেন উইনস্টন চার্চিলের গুপ্তচর সংস্থায়। এক পরিচিতের বিশ্বাসঘাতকতায় ধরা পড়ে যান তিনি। সেই টানটান গল্পই এ বার পর্দায়।
‘রাজ়ি’তে আলিয়া
অ্যাকশনে ভরপুর
গুপ্তচর বৃত্তিতে জীবনের ঝুঁকি অহরহ। সুতরাং আগ্নেয়াস্ত্র তো হাতে থাকবেই। প্রয়োজনে ঢিসুম-ঢিসুমের দরকারও পড়ে বই কী! ‘এক থা টাইগার’ ছবির সলমন-ক্যাটরিনার পালানোর দৃশ্য থেকে শুরু করে ‘টাইগার জ়িন্দা হ্যায়’ ছবিতে ক্যাটরিনার হাতে ভারী বন্দুক নিয়ে লড়াই... ছবির জন্য রীতিমতো অ্যাকশনও শেখেন অভিনেতারা। ‘টাইগার জ়িন্দা হ্যায়’ ছবির অ্যাকশন সিকোয়েন্সের জন্য হলিউডের টম স্ট্রুদার্স ও বাস্টার রিভ্স গাইড করেছিলেন ক্যাটরিনাকে। ছবির জন্য ক্যাটরিনা ফেন্সিং ও মেশিন গান ধরা অভ্যেস করেন। ‘জগ্গা জাসুস’ ছবিতেও মজার ছলেই অ্যাকশন পুরে দেওয়া হয়েছিল। এখানে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে গুপ্তচর বাগচীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।
‘নাম শবানা’য় তাপসী
করুণ পরিণতি
গুপ্তচরদের প্রেম-বিয়ে-সংসারে যেন বাধা থাকবেই। কখনও কখনও প্রেম বা সংসার করার ‘অভিনয়’ চালিয়ে গেলেও আবেগের কোনও জায়গা নেই তাদের জীবনে। আবেগ মাঝখানে এসে গেলেই সম্পর্ক বা জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে। এমনকী, গুপ্তচরদের পরিবারের নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে চলে আসতে পারে। নিখিল আডবাণী পরিচালিত ‘ডি ডে’ ছবির বিষয় ছিল দাউদের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত চরিত্র গোল্ডম্যান ওরফে ইকবাল শেঠকে ধরে এনে তার গুপ্তহত্যা। গোল্ডম্যানের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় ঋষি কপূরকে। এই ছবিতে গোল্ডম্যানকে ধরার জন্য ভারতের তরফ থেকে যে তিনজন গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম ‘র’-এর সদস্য ওয়ালি খানের ভূমিকায় ছিলেন ইরফান খান। ওয়ালির স্ত্রী ও পুত্রকে আইএসআই-এর সদস্যরা খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা করে। তিন গুপ্তচরের মধ্যে প্রাক্তন ভারতীয় আর্মি অফিসার রুদ্রপ্রতাপ সিংহের (অর্জুন রামপাল) প্রেমিকা সুরাইয়াকেও (শ্রুতি হাসন) খুন করে গোল্ডম্যানের ভাইপো (চন্দন রায় সান্যাল)। ‘ফ্যান্টম’ ছবিতে ক্যাপ্টেন ড্যানিয়েল খানও মারা যান এবং ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করে প্রাক্তন র-এজেন্ট নওয়াজ মিস্ত্রিকে (ক্যাটরিনা)। আবার ‘এক থা টাইগার’ ছবিতে টাইগার (সলমন) ও জ়োয়া (ক্যাটরিনা) অন্য দেশে পালিয়ে গেলেও তারা ধরা পড়ে যায় আইএসআইয়ের হাতে। সিনেমার খাতিরে তাদের প্রেমের পরিণতি করুণ না হলেও বাস্তবে এহেন ‘দি এন্ড’ কি আদৌ গুপ্তচরদের জীবনে হয়?
‘জগ্গা জাসুস’-এ শাশ্বত