কেরিয়ার শুরু শিশুশিল্পী হিসেবে। প্রথম দিকে ভাল করে বলতে পারতেন না হিন্দিও। সেখান থেকে তিনিই হিন্দি সিনেমার প্রথম মহিলা সুপারস্টার। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তিনি ছিলেন বলিউডের হায়েস্ট পেড নায়িকা। ২০১৮-র ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর অকালমৃত্যুতে শ্রী-হীন হিন্দি ও দক্ষিণী ছবির দুনিয়া। তিনি শ্রীদেবী।
জন্ম ১৯৬৩-র ১৩ অগস্ট। তামিলনাড়ুর শিবকাশীতে। নাম ছিল শ্রী আম্মা আয়েঙ্গার আয়াপ্পন। তাঁর বাবা আয়াপ্পন ছিলেন শিবকাশীর আইনজীবী। মা রাজেশ্বরী, গৃহবধূ। বোন শ্রীলতার সঙ্গে বড় হন তিনি।
তাঁর নায়িকা হওয়ার পিছনে মা রাজেশ্বরীর গভীর অবদান ছিল। ছোট থেকেই নাচ গানের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল শ্রীদেবীর। মাত্র চার বছর বয়সে প্রথম অভিনয়, তামিল ছবি ‘কন্দন করুণাই’-য়ে। শিশু বয়সেই অভিনয়ে হাতেখড়ি তেলুগু ও মালয়ালম ছবিতেও। প্রথাগত পড়াশোনা ও অভিনয়ের মধ্যে তিনি বেছে নিয়েছিলেন দ্বিতীয়টিকেই।
ওই বয়সেই তিনি অভিনয় করেন তৎকালীন নামী অভিনেত্রী ও পরে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া প্রয়াত জয়ললিতার সঙ্গে। ন’বছর বয়সে তাঁর প্রথম অভিনয় হিন্দি ছবিতে। ‘জুলি’ ছবিতেও ছিলেন পার্শ্বনায়িকার ভূমিকায়। তবে তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য হিন্দি ছবি ‘ষোলওয়া সাওয়ান’।
প্রথম দিকে শ্রীদেবী হিন্দি বলতে পারতেন না। তাঁর হয়ে রেখা এবং অতীতের আর এক অভিনেত্রী নাজ ডাবিং করতেন। ১৯৮৯ সালে মু্ক্তি পাওয়া ‘চাঁদনি’ প্রথম হিন্দি ছবি, যেখানে শ্রীদেবী নিজের ডাবিং নিজেই করেছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি শ্রীদেবী গান করতে ও ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। নিজের চারটি ছবিতে তিনি প্লে ব্যাক করেছিলেন।
‘চালবাজ’ ছবিতে ‘না জানে কঁহা সে আয়ি ও লেড়কি’ গানের শুটিং-এর সময় শ্রীদেবীর গায়ে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ছিল। কিন্তু তিনি এতটাই পেশাদার ছিলেন, অভিনয়ে বিন্দুমাত্র বোঝা যায়নি অসুস্থতা। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ অবধি তিনি ছিলেন বলিউডের হায়েস্ট পেইড অভিনেত্রী।
‘হিম্মতওয়ালা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘নজরানা’, ‘নয়া কদম’, ‘লমহে’, ‘খুদা গাওয়াহ’, ‘সদমা’, ‘নজরানা’, ‘লাডলা’, ‘গুমরাহ’-সহ অসংখ্য ব্লকবাস্টার হিন্দি ছবিতে শ্রীদেবীর অনবদ্য অভিনয় জয় করেছিল দর্শকমন।
১৯৯৩ সালে তিনি স্টিফেন স্পিলবার্গের ‘জুরাসিক পার্ক’ ছবিতে সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু শ্রীদেবী রাজি হননি কাজ করতে। মনে হয়েছিল, ওই ভূমিকা তাঁকে মানাবে না। পাঁচ দশকের কেরিয়ারে শ্রীদেবী অভিনয় করেছেন মোট ৩০০ ছবিতে। তিনি মুম্বইয়ের প্রথম সুপারস্টার নায়িকা।
আটের দশকে মিঠুন-শ্রীদেবী জুটি ছিল সুপারহিট। বলিউডি গুঞ্জন, তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরে তাঁরা সরে আসেন সম্পর্ক থেকে। কারণ যোগিতা বালির সঙ্গে নিজের বিয়ে ভাঙতে রাজি ছিলেন না মিঠুন। যদিও দু’জনের কেউ কোনওদিন সম্পর্ক নিয়ে কিছু স্বীকার করেননি।
১৯৯৬ সালে শ্রীদেবী বিয়ে করেন পরিচালক বনি কপূরকে। বনির দু’টি ছবি ‘জুদাই’ ও ‘হামারা দিল আপকে পাস হ্যায়’-এর নায়িকাদের চরিত্রের নামে শ্রীদেবী নিজের দুই মেয়ের নাম রেখেছিলেন। ‘জাহ্নবী’ ও ‘খুশি’। দুই মেয়েই শ্রীদেবীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। শ্রীদেবী নিজেও তাঁর মায়ের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল ছিলেন।
জয়াপ্রদা ছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁদের মধ্যে সম্পর্কও মধুর ছিল না। শ্রীদেবীর রেখে যাওয়া রাজ্যপাটের নতুন রানি হন মাধুরী দীক্ষিত। মাধুরীর কেরিয়ারের উল্লেখযোগ্য ছবি ‘বেটা’ প্রথমে এসেছিল শ্রীদেবীর কাছেই। কিন্তু তিনি করতে রাজি হননি। কারণ তার আগেই অনিল কপূরের সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করা হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
আবার ‘নাগিনা’ ছবির সুযোগ প্রথমে গিয়েছিল জয়াপ্রদার কাছে। ‘চালবাজ’ ছবির জন্য বলা হয়েছিল রেখাকে। কিন্তু তাঁরা ফিরিয়ে দেওয়ায় সুযোগ পান শ্রীদেবী। দুটি ছবিই সুপারহিট হয়। কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর স্মরণীয় অভিনয় ছিল ২০১২ সালের ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবিতে।
অভিনয় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার। ২০১৩ সালে ভূষিত হন ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে। ২০১৭ সালের ‘মম’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে পান মরণোত্তর জাতীয় পুরস্কার।