চরিত্রের মধ্যে কোনও অভিনেতা কতটা ডুবে যেতে পারেন, তার অন্যতম দৃষ্টান্ত সম্ভবত স্যার রজার জর্জ মুর। সাতটা বন্ড ছবিতে অভিনয় করার পর ‘ডাবল ও সেভেন’-এর ব্যাটনটা টিমোথি ডালটনের হাতে দিয়ে যান। তবে পরের পাঁচ বছরে অন্য কোনও ছবি হাতে নেননি স্যার রজার। একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘সারা জীবন আমাকে বন্ড বলে লোকে জানলেও তো কোনও ক্ষতি নেই।’’
সেই রজার মুর (৮৯) মঙ্গলবার সুইৎজারল্যান্ডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। রেখে গেলেন স্ত্রী ও তিন সন্তান। রজার মুরের ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল বেশ কিছু দিন। যদিও অনেক দিনই তিনি অসুস্থ। বিশেষ করে ২০১৩ সালে ধরা পড়ে টাইপ টু ডায়াবেটিস। নিজেই মজা করে যেটা নিয়ে বলেছিলেন, এই রোগটা তাঁকে ‘মার্টিনি’ খেতে দিল না। তার পর আবার আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। একবার স্টেজের মধ্যেও পড়ে যান। সদ্য আবার হাঁটাচলা শুরু করেছিলেন।
আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে এল প্রিয়ঙ্কার সিকিম নিয়ে ছবি ‘পাহুনা’র ফার্স্ট লুক
যদিও শুধু বন্ড হিসেবে মুরকে চিনলে তাঁর প্রতি অবিচার হবে। ‘ম্যাভেরিক’ কিংবা ক্রাইম শো ‘দ্য সেন্ট’ আর ‘দ্য পারসুয়েডার’-এ অনবদ্য অভিনয় তাঁর। এমনকী ‘শার্লক হোমস ইন দ্য নিউ ইয়র্ক’ ছবিতে শার্লক হোমসের ভূমিকায়ও অভিনয় করেন তিনি।
তাঁর বন্ড ছবিগুলো
•লিভ অ্যান্ড লেট ডাই
•দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান
•দ্য স্পাই হু লাভড মি
•মুনরেকার
•ফর ইওর আইজ ওনলি
•অক্টোপুসি
•আ ভিউ টু আ কিল
১৯২৭ সালে লন্ডনে জন্মেছিলেন স্যার রজার। কিছু দিন মডেলিং দুনিয়ায় কাজ করার পর চুক্তিবদ্ধ হন এমজিএম প্রোডাকশনের সঙ্গে। সিনেমায় প্রথম দিকে তেমন সফল না হলেও, জনপ্রিয়তার প্রথম স্বাদ পান টেলিভিশনে। তাঁকে বন্ডের চরিত্রে কাস্ট করার কথা আগেই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু টিভির কাজে ব্যস্ত মুর সময় দিতে পারেননি।
১৯৭৩ সালে প্রথম বন্ড ফিল্ম করেন ‘লিভ অ্যান্ড লেট ডাই’। বাকিটা তো ইতিহাস। পরের বারো বছরে ছ’টি বন্ড ছবিতে মার্টিনি হাতে দেখা যায় তাঁকে। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তিনিই বন্ডের ভূমিকায় ছিলেন। তিনি অন্যতম বন্ড, যিনি শ্যুটিং লোকেশনকে রীতিমতো টুরিস্ট স্পটে পরিণত করে ফেলেছিলেন।
তাই হয়তো, বন্ডের পর স্পটলাইট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য পান নাইটহুড। তবে অনিচ্ছায় অনেক বিতর্কেও জড়িয়েছেন।
এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শন কনারি নন, তাঁর প্রিয় বন্ড ড্যানিয়েল ক্রেগ। সেটা নিয়ে ঝড় ওঠে হলিউডে। কিন্তু বিতর্কে কোনও দিনই কান দেননি মুর। শেষ দিকের এক সাক্ষাৎকারে মুর বলেছিলেন, ‘‘হয় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তুমি আরও শান্ত হবে, নয়তো আরও খিটখিটে হয়ে যাবে।’’
রজার মুর একেবারে শান্তই হয়ে গেলেন।