জন-এর গান দেব-এর ছবিতে

সুর করেছিলেন ‘ম্যাড্রাস কাফে’র জন্য। কিন্তু গানটা ব্যবহার হল ‘বুনো হাঁস’য়ে। জানাচ্ছেন শান্তনু মৈত্র। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।আজকাল আপনি শান্তনু কালিদাস মৈত্র বলে সই করছেন না কি?/ কেন?/ আপনি বলছিলেন ‘বুনো হাঁস’ সুর করার আগে আপনি অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীকে বলেছিলেন এই ছবিতে গান থাকাটাই উচিত নয়!/ (হাসি) আগেও এ রকম বলেছি। ‘পরিণীতা’র পর আমি ‘একলব্য’র সুর করেছিলাম। গান কই সেখানে? সুর করার লোভে সত্যি বলা ছাড়ব না কি?

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

আজকাল আপনি শান্তনু কালিদাস মৈত্র বলে সই করছেন না কি?

Advertisement

কেন?

Advertisement

আপনি বলছিলেন ‘বুনো হাঁস’ সুর করার আগে আপনি অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীকে বলেছিলেন এই ছবিতে গান থাকাটাই উচিত নয়!

(হাসি) আগেও এ রকম বলেছি। ‘পরিণীতা’র পর আমি ‘একলব্য’র সুর করেছিলাম। গান কই সেখানে? সুর করার লোভে সত্যি বলা ছাড়ব না কি?

অনিরুদ্ধর আগের ফিল্মের থেকে ‘বুনো হাঁস’ অনেকটাই আলাদা। সেখানে সুর করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

বলিউডে আমি নানা ধরনের কাজ করি। তাই আমার পক্ষে অন্য রকমের সুর করাটা খুব অসুবিধের নয়। টোনি (অনিরুদ্ধ) এক ধরনের গল্প বলে এসেছে ওর ছবিতে। সে তুলনায় ‘বুনো হাঁস’ অন্য ধরনের ফিল্ম। ছবির মধ্যে দু’টো জার্নি চলতে থাকে। একটা ফিজিক্যাল জার্নি যেখানে দেব এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে যায়। আর অন্যটা হল ভিতরের একটা জার্নি। তবে প্রথম যখন চিত্রনাট্যটা শুনেছিলাম, তখন টোনিকে বলেছিলাম আমি ফিল্মটা ডিরেক্ট করলে কোনও গানই রাখতাম না!

পরিচালক তা শুনে কী বললেন?

(হাসি) প্রথমে জিজ্ঞেস করল, “তুই কি কোথাও বেড়াতে যাবি? আমার ছবিতে সুর করার মতো সময় নেই তোর হাতে?” তার পর টোনি বুঝেছিল আমি কেন এমন কথা বলছিলাম। এর পর তিন মাস ছবি নিয়ে তেমন কথা হয়নি।

ফিল্মে কী ভাবে গানগুলো এল?

তিন মাস পর যখন টোনি আবার স্ক্রিপ্ট শোনাল, তখন আমি গানের সিচুয়েশনগুলো আইডেন্টিফাই করতে পারলাম। সেই সময় আমি ‘ম্যাড্রাস কাফে’তে কাজ করছিলাম। সুজিতের (সরকার) জন্য একটা গান সুর করেছিলাম। গানটা সুজিতের পছন্দ ছিল। কিন্তু ফিল্মের কথা ভেবে ও আমাকে বলে যে, ‘গানটা ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু এটা আমার ফিল্মের জন্য নয়!’

আপনি কি ‘ম্যাড্রাস কাফে’র একটা গান ‘বুনো হাঁস’য়ে ব্যবহার করেছেন?

হ্যাঁ। গানটার নাম ‘জিন্দেগি কভি ভি থামতি নহি’। বনি চক্রবর্তীর গাওয়া। আমি ডামি লিরিক্স দিয়ে সুর করি। এ ক্ষেত্রে ডামি লিরিক্সের মধ্যে ‘জিন্দেগি কভি...’ কথাগুলো লিখে সুজিত/ টোনিকে শুনিয়েছিলাম। শ্রীজাতকে ওই লাইনটা দেওয়া হয়। তার পর ও নিজের মতো কথাগুলো লেখে।

চাইলে গানটা আপনার ডেটাব্যাঙ্কে রেখে দিতে পারতেন। পরে কোনও হিন্দি ছবিতে ব্যবহার করতেন...

গান কম্পোজ করার পর আমি উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকি সেটা ব্যবহার করার জন্য। ফিল্মের ক্ষেত্রে আমি ডেটাব্যাঙ্ক কম্পোজার নই। সিচুয়েশন বুঝে আমি ছবির গান স্কোর করি। একটা সময় ছিল যখন টোনি ওয়াজ হোপিং অ্যান্ড প্রেয়িং দ্যাট সুজিত ডিড নট ইউজ দ্যাট সং ইন ‘ম্যাড্রাস কাফে’!

লোপামুদ্রা মিত্রর ‘হারিয়ে ঠিকানা খোঁজে ঘর’ গানটা সুর করার সময় কি মাথায় রেখেছিলেন যে গায়িকা কী ধরনের গানের জন্য জনপ্রিয়?

আমার খুব বেশি বাংলা গান শোনা হয় না। তাই সব কিছুই আমার কাছে ফ্রেশ। আই ওয়ান্টেড টু গেট লোপা আউট অব কলকাতা অ্যান্ড সিং।

চারটে বাংলা ছবির সুর করলেন। তবু আপনার হাত ধরে আরও বেশি পূর্ব ভারতীয় গায়কদের কেন হিন্দি ছবিতে শোনা যায় না?

কেন? আমি তো রাঘব চট্টোপাধ্যায় আর রূপঙ্করকে দিয়ে গাইয়েছি।

আরও তো অনেকেই আছেন...

বলিউডে গাইতে গেলে হিন্দিটা ভাল বলতে পারা চাই। এখন যে ক’জন গায়ক মুম্বইতে মাইগ্রেট করে ভাল কাজ করছেন, তাঁরা কিন্তু কেরিয়ারের প্রথম দিকেই সেটা করে ফেলেছেন।

লোপামুদ্রা মিত্র, তোর্সা সরকার, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যাঁদের সঙ্গে ‘বুনো হাঁস’য়ে কাজ করলেন, তাঁদের কাউকে দিয়ে কি আপনি আমির খানের ‘পিকে’তে গাওয়াচ্ছেন?

না। তবে বাংলার গায়কদের স্টাইলটা আমার দারুণ লাগে। তোর্সার সঙ্গে আমার একটা রিয়্যালিটি শো-তে দেখা হয়েছিল। আসানসোলের মেয়ে তোর্সা। এখন মুম্বইতে থাকে। ওকে দিয়ে ‘আঁকাবাঁকা আলো ঢাকা’ গাওয়ালাম। রিয়্যালিটি শো নিয়ে এত নেগেটিভ কথা হয়। রিয়্যালিটি শো থেকে কত ভাল ট্যালেন্ট পাওয়া যায়, তার উদাহরণ হল তোর্সা।

একটা সময় শান্তনু মৈত্রের গান মানেই শ্রেয়া ঘোষাল, শান আর বাবুল সুপ্রিয় থাকতই। আজও শ্রেয়া রয়েছেন। কিন্তু পুরুষ কণ্ঠে নতুন নাম আসছে কেন?

আমার ধারণা গায়কদের আমাদের দেশে সুযোগটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আইটেম সং এক সময় ছেলেরাও গাইত। আজ তো শুধু মেয়েরাই গায়। তাই শ্রেয়া সুযোগটা অনেক বেশি পাচ্ছে নিজেকে মেলে ধরতে। এ ছাড়া ওর গলার রেঞ্জটাও মারাত্মক।

অরিজিত্‌ সিংহ-এর সঙ্গে তো আপনার এখনও কাজ করা হয়ে ওঠেনি...

না। বাট অরিজিত্‌ ইজ বিইং ওয়ান্ডারফুলি এক্সপ্লোরড ইন বলিউড নাও।

আপনি অসমের গায়ক পাপনকে দিয়ে ‘ববি জাসুস’য়ে গাওয়ালেন। তারপর ‘বুনো হাঁস’য়ে ‘এসেছে রাত’... পাপন-শান্তনু জুটি তৈরি হচ্ছে কি?

পাপনের গলায় ‘এজিনেস’ রয়েছে। টিপিক্যাল চকোলেট হিরোর গলার মতো নয়। আমি যখন একজনের সঙ্গে কাজ করি সে তখন আমার কাছে একটা খনি। খনির সব মণিমাণিক্য না দেখা পর্যন্ত আমি সরে যাই না।

তার মানে কি পাপনের খনির সব আনাচ-কানাচ না দেখে আপনি অরিজিতের খনিতে উঁকি দেওয়ার কথা ভাবছেন না?

একটা হিন্দি ছবির শ্যুট করছি। গুলজার কথাগুলো লিখেছেন। ইচ্ছে আছে ওতে অরিজিত্‌কে দিয়ে গাওয়ানোর।

ইচ্ছে করেই কি আপনি ‘এসেছে রাত’ গানটা ‘অনুরণন’, ‘অপরাজিতা তুমি’র গানের ঘরানাতেই তৈরি করেছিলেন?

হ্যাঁ। বিজ্ঞাপন শিখিয়েছে নতুন কিছু করলেও তার মধ্যে চেনা এলিমেন্ট রাখতে। পাপনের গানটাও তাই। শ্রীজাত একটা ফ্লো-তে গানটা লিখেছে। গানে অ্যারেঞ্জমেন্টেও বেশি পরীক্ষা করিনি।

আপনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের জন্য। বাংলা ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর কেমন লাগে?

ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ফ্রেজটার মধ্যেই একটা পিছিয়ে থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। ফোরগ্রাউন্ডে গান থাকে বলে স্কোরটা ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে যায়। বাইরে কিন্তু ‘স্কোর’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়। ‘ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর’ নয়। এখনকার বাংলা ছবির স্কোর অন্তত ৭০ শতাংশ বেশি ভাল হতে পারে। একটা সময় তো এই বাংলা-ই বিশ্বকে ছবির স্কোর কতটা ভাল করা যায় তা শিখিয়েছিল।

‘পথের পাঁচালী’র স্কোর আজও জনপ্রিয়। সত্যজিত্‌ রায়ের মিউজিক তো কলারটিউনেও ব্যবহার করা হয়...

এগ্‌জ্যাক্টলি। যেখানে এই ইতিহাসটা রয়েছে, সেখানে স্কোরে কেন এত কম জোর দেওয়া হবে? শুধু ফাঁকা জায়গা ভর্তি করার জন্য স্কোর করা উচিত নয়। সব সময় শুনি স্কোরের কাজ করার জন্যই বাজেট থাকে না। সময়ও থাকে না। আমার ধারণা একজন সুরকারকে একটু সময় দিলে তিনি ভাল স্কোর করে দেখাতে পারবেন। ‘ম্যাড্রাস ক্যাফে’র স্কোরের জন্য আড়াই মাস খেটেছিলাম। ছবি শুরুর এক বছর আগে স্কোরের ৪০ শতাংশ সুজিতকে দিয়েছিলাম।

এখন অনেক বাংলা ছবির স্কোর বলতেই বোঝায় মেলোড্রামাটিক মুহূর্তে দারুণ জোরে অর্কেস্ট্রা...

হ্যাঁ। কিন্তু নায়ক কী বলছে সেটা হাইলাইট করাটাই তো স্কোর নয়। যাত্রার মিউজিক আর ফিল্মের স্কোরের মধ্যে তফাত তো থাকবে। যাত্রাতে না হয় এ রকম মিউজিক করে সব্বার অ্যাটেনশন ড্র করার একটা প্রসেস থাকতে পারে। কিন্তু ফিল্ম স্কোরে তো তা হয় না।

আমির খান, সঞ্জয় দত্ত বলিউডে সবার লিপে গান সুর করেছেন। টলিউডে দেবের সঙ্গে কাজ করেও ওঁর লিপে একটাও গান সুর করলেন না। আফসোস হয়নি?

একটা গান স্টারের লিপে থাকলে ওটা অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। তবু ছবির স্বার্থে আমার এই স্যাক্রিফাইসটা করেছি। তা ছাড়া, আমার বেশ কিছু ভাল গান আজকাল বলিউড ছবির ক্রেডিটে ব্যবহার হচ্ছে। ‘বাওরা মন’ গানটা এত প্রশংসিত। কিন্তু ওটা তো ‘হাজারো খোয়াইশে অ্যায়সি’ ছবির ক্রেডিটে। ‘ম্যাড্রাস ক্যাফে’তেও আমার সুর করা ‘সুনলে রে’ গানটা ক্রেডিটেই ব্যবহার করেছে সুজিত। তাই এ নিয়ে আর ভাবি না! সুযোগ হলে নিশ্চয়ই দেবের লিপে গান সুর করব।

আনাচে কানাচে

সব খেলার সেরা...: সল্টলেকের মাঠে পরিচালক সুজিত সরকার ও গায়ক-সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।

রমণীয়: নুসরত-মিমি-সায়ন্তিকা। ‘বিন্দাস’-এর ক্লোজড্ ডোর শো-তে।

ছবি: কৌশিক সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement