মৃণাল সেনের 'পদাতিক'-এ সিমি গরেওয়াল নিজস্ব চিত্র।
সদ্য মুক্তি পেয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘পদাতিক’-এর প্রথম গান। তারও আগে প্রকাশ পেয়েছে ছবির ঝলক।
আন্তর্জাতিক মানের পরিচালক মৃণাল সেনকে শ্রদ্ধা জানাতেই সৃজিতের এই ছবি। যেখানে পরিচালকের ভূমিকায় চঞ্চল চৌধুরী। মৃণাল পরিচালিত ‘পদাতিক’ ছবির নামটুকুই ধার নিয়েছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক। ছবি জুড়ে আন্তর্জাতিক মানের পরিচালকের জীবন। মৃণালের ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়-সিমি গরেওয়াল। তাঁর কাছেও নিশ্চয়ই পৌঁছেছে সৃজিতের ছবির কথা। পুরনো স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে একুশের ‘পদাতিক’?
জানতে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল বাংলা এবং বলিউডের অভিনেত্রীর কাছে। মুম্বই থেকে জবাব দিয়েছেন সিমি। ভাগ করে নিয়েছেন সেই সময়ের অভিজ্ঞতা। সাল ১৯৭৩। তার আগেই অভিনেত্রী সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’তে অভিনয় করেছেন। সেই ছবি মৃণাল দেখেছিলেন। তার পরেই যোগাযোগ করেছিলেন সিমির সঙ্গে। তাঁর ‘পদাতিক’-এ অভিনয়ের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। অভিনেত্রী খুশি মনে রাজি হয়েছিলেন। ছবিতে তিনি পঞ্জাবি মেয়ে। বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করেন। তিনি আধুনিকা। সেই সিমি আশ্রয় দিয়েছিলেন এক আদর্শবাদী বামপন্থী পলাতককে।
কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘‘মৃণালদা খুব কম লোক নিয়ে ছবি বানিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে অদ্ভুত বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যার জোরে অত ভাল একটা ছবি তৈরি হয়েছিল। দাদা যদিও সব সময় আমায় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন। মুম্বইয়ের আরাম কলকাতায় পাচ্ছি না বলে কষ্ট হচ্ছে! মৃণালদা সারা ক্ষণ এই ভয়ে কাঁটা।’’ সিমির আরও একটা ভাল লাগার বিষয়, উনি পরিচালককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বাংলা বলেছিলেন। অন্য কাউকে নিজের গলা ডাব করতে দেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মৃণালদা যতটাই নরম মানুষ কাজের বেলায় ততটাই কঠিন। এই ছবিতে আমার সব থেকে কঠিন কাজ ছিল বাংলা বলা। আমিও হার মানিনি। জেদ ধরে নিখুঁত উচ্চারণে বাংলা বলেছি।’’ অভিনেত্রীর জেদের কাছে হেরে গিয়ে পরিচালক কিন্তু খুব খুশি হয়েছিলেন। সেই রেশ থেকে গিয়েছিল আজীবন। যত দিন মৃণাল সেন বেঁচেছিলেন তত দিন সিমির সঙ্গে চিঠি বিনিময় করতেন।
মৃণাল আর তাঁর নায়িকা সিমি। সংগৃহীত।
এই যোগাযোগ অবশ্য সিমির সঙ্গে ধৃতিমানের ছিল না। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, বিপরীতে শক্তিশালী অভিনেতা থাকলে নিজের অভিনয় আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়। তাঁর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। তিনি অভিনয়ের সময় খুঁটিয়ে ধৃতিমানের প্রত্যেকটি অভিব্যক্তি দেখতেন। সেই বুঝে নিজেকে তুলে ধরতেন। নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলেও কলকাতায় পা রাখলেই দেখা হয় দু’জনের। তাঁর নায়িকা শহরে এসেছেন, কানে গেলেই নিজে থেকে সিমির সঙ্গে দেখা করে যান ধৃতিমান।